শিরোনাম
বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

অপ্রতিরোধ্য মোদি নিষ্প্রভ রাহুল ও কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ

পীর হাবিবুর রহমান

অপ্রতিরোধ্য মোদি নিষ্প্রভ রাহুল ও কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে বিগত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির যে উত্থান ঘটেছিল তা এখন আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক শক্তির সামনে উপমহাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল ও ঐতিহ্যবাহী গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস দাঁড়াতেই পারছে না। কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা দলে দলে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।  সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এন কৃষ্ণার মতো শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, শুধু ক্ষমতার বাইরেই নয়; অনিশ্চিত যাত্রাপথে যে কংগ্রেস সেখানে তারা থাকতে চাচ্ছেন না বলে দল ত্যাগ করছেন।  কংগ্রেসের সামনে অনিশ্চিত, অন্ধকার।

পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির ইমেজে ভর করা সাংগঠনিক শক্তিতে মহীরূহ হয়ে ওঠা বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো শক্তি সঞ্চয় করে কংগ্রেস লড়াই করবে, সেই আলামতও দেখা যাচ্ছে না। তারা নিশ্চিত করেই বলছেন, আগামী ভোটযুদ্ধেও নরেন্দ্র মোদি গণরায় নিয়ে বিজেপিকে ফের ক্ষমতায় অভিষিক্ত করছেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী শারীরিকভাবে এখন অনেক বেশি অসুস্থ। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত সোনিয়া গান্ধী এবার উত্তর প্রদেশের বিধান সভার নির্বাচনী প্রচারেও যেতে পারেননি। কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে মায়ের হাত ধরে উঠে আসা রাহুল গান্ধী বিগত লোকসভা নির্বাচনে যেমন করুণ পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেছেন, তেমনি আগামীতে চমক দেখাতে পারবেন; সেটিও কেউ বিশ্বাস করছেন না। তার বর্তমানকেও তারা হতাশার চিত্রপট হিসেবেই বর্ণনা করছেন। সম্প্রতি, দিল্লি সফরকালে নানা মহলের সঙ্গে আলাপকালে এই চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রবণ মুখার্জির মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। তার মেয়াদে দিল্লি যতবার গেছি, ততবার বুকভরে তার স্নেহ সান্নিধ্য নিয়েছি। একজন বাঙালি হিসেবে এই দেশ ও মানুষের জন্য তার আলাদা একখান কোমল হৃদয় রয়েছে। আগামী ২৫ জুলাই তিনি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বিদায় নেবেন। ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসিতে এক দরজা দিয়ে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বের হন, আরেক দরজা দিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করেন। সেই চিত্রপটের মতোই ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখার্জি বিদায় নেবেন। তার উত্তরাধিকার প্রবেশ করবেন। ২৫ জুলাই দিনটি সাংবিধানিকভাবেই নির্ধারিত হয়ে আছে। কে হবেন নতুন রাষ্ট্রপতি এ নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে সর্বত্র। বিজেপির বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ লাল কৃষ্ণ আদভানিকে বিগত লোকসভা নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি কোণঠাসা করে ফেলেছেন। কিছু দিন আগেও আদভানি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন— এমন সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাবরি মসজিদ ভাঙার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা পুনরুজ্জীবিত হওয়ায় সেই ক্ষীণ আশাও শেষ হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন। এক্ষেত্রে বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, ধ্রুপদী মার্মা যিনি ঝাড়খণ্ডের গভর্নর এবং উড়িষ্যার দলিত বিজেপি নেতা। তিনি ছাড়াও লোকসভার স্পিকার সুমিত্র মহাজনের নামও আছে আলোচনায়। তিনি আর এস এসেরও ঘনিষ্ঠজন। এমনকি গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেলের নামও আলোচিত হচ্ছে।

২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ১৫ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্নেহ-সান্নিধ্যে কাটাই। বহুবার লিখেছি, এক জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। এত পড়াশোনা করা লোক, আর এত প্রখর স্মৃতিশক্তিপ্রবণ মানুষ! বিস্মিত হই। যতবার যাই, মুগ্ধ হই। ভারত আমার একটি প্রিয় দেশ। সুমহান মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা এটিকে অনেক বড় উচ্চতায় নিয়েছে। ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক কারণ তো রয়েছেই। মুক্তিযুদ্ধে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতবাসীর ভূমিকা যে বন্ধুত্বের দৃঢ়তা দিয়েছে, তা রক্তে লেখা। ইন্দিরা গান্ধীর পর বাংলাদেশের জন্য যারা হৃদয় নিঃসৃত ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্ণাঢ্য কমিউনিস্ট নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর নাম নিতেই হয়। সবশেষ বাতিঘর হয়ে আছেন প্রণব মুখার্জি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করলেন তিনি। গল্পে গল্পে বললেন, এই উন্নয়ন বিস্ময়কর। দুই দেশের মৈত্রীর বন্ধন আরও দৃঢ় হোক বললেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার শুভ কামনা জানালেন। রাষ্ট্রপতি ভবন ত্যাগ করে তিনি আর রাজনীতিতে ফিরছেন না। দিল্লিতেই বসবাস করবেন, তবে অবসর জীবন কীভাবে কাটাবেন তার পরিকল্পনা এখনো ঠিক করেননি। ১৯৬৯ সালে পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছিলেন। ২০১২ সালের ২৫ জুলাই পার্লামেন্টারিয়ান জীবনের ইতি ঘটে রাষ্ট্রপতি হওয়ার মধ্য দিয়ে। এর আগে অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। পার্লামেন্টারি রাজনীতির ৪৩ বছর ও রাষ্ট্রপতি ভবনের পাঁচ বছর মিলিয়ে আত্মজীবনী লিখছেন। তিন খণ্ডের বইয়ের একটি অংশ প্রকাশ হবে জুন মাসে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ভবন ছাড়ার আগেই।

রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বের হওয়ার সময় মনটা খারাপই লাগল। মনে হচ্ছিল, আমাদের এমন একজন আপন বাঙালি আবার কবে ভারতের রাষ্ট্রপতি হবেন? সেই রাতেই দিল্লি প্রেস ক্লাবে আড্ডায় মিলিত হই প্রিয়জনদের সঙ্গে। সন্ধ্যা নামলেই প্রেস ক্লাব জমজমাট হয়ে ওঠে নারী-পুরুষের তুমুল আড্ডায়। এবারের সফরে দিল্লি হাইকমিশনে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার এনামুল হক চৌধুরী ও বাসসের প্রতিনিধি সুভাস চন্দ্র বাদলকে খুব মিস করেছি। এখানকার রাজনীতিবিদ থেকে সংবাদকর্মী যখনই দিল্লি যেতেন, যখনই আমরা গেছি, সহকর্মী ও বন্ধু হিসেবে তারা নিজ দায়িত্বে ছুটে এসেছেন। কি হৃদ্যতা ও গভীর মমত্ববোধ পর্যবেক্ষণ করেছি ভারতীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে, দুজনেই আন্তরিকভাবে শেখ হাসিনার সরকারের হয়ে কাজ করতেন। একজন পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে, আরেকজন ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে। এখন যিনি বাসসের হয়ে গেছেন তিনি কিডনিজনিত রোগের চিকিৎসা নিতেই ব্যস্ত। আর প্রেস মিনিস্টার সেখানকার গণমাধ্যম কর্মীদের খানিকটা দূরেই আছেন।

যাক, দিল্লির বাতাস এখন তপ্ত হয়ে উঠলেও ভারতের রাজনীতিতে বিশেষ করে দক্ষিণে প্রবল দাপট নিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক প্রলয় ঘটিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী একেবারেই নিষ্প্রভ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কংগ্রেসের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন করুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি অতীতে আর কখনো হতে হয়নি। কংগ্রেসের রাজনৈতিক ইতিহাসে অতীতে যেমন বিগত লোকসভার মতো করুণ পরাজয় ঘটেনি, তেমনি ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের পরাজয় পরবর্তী অবস্থা ও দলীয় ভাঙন এখনকার মতো এতটা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়নি।

নেহেরু কন্যা ইন্দিরা গান্ধী রাজনৈতিক উত্থান পতনের ভিতর দিয়ে নিজের ইমেজকেই শুধু জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেননি, কংগ্রেসকেও শক্তিশালী করেছিলেন। সারা দেশ সফর করে বিভিন্ন সময় পরাজয়ের অভিজ্ঞতা থেকেও সংগঠন গড়েছেন। সারা দেশের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন, দর্শন দিতেন। এমনকি সংগঠনের সবাইকে সক্রিয় করে সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞের মধ্যে রাখতেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত কংগ্রেস নেতাদের, পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে টেনে আনতেন। দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর কিংবা কংগ্রেসের রাজনীতি ও ভারতের ক্ষমতায় তার উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে আসা রাজীব গান্ধীর আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হওয়ার পরও কংগ্রেসের রাজনীতিতে এমন বিপর্যয় আসেনি। এতটা নেতৃত্বের সংকটে ১৩২ বছরের ইতিহাসে কংগ্রেস কখনো পড়েনি।

সোনিয়া গান্ধী শাশুড়ি ও স্বামীর উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে ও কংগ্রেসের নেতৃত্বে স্বমহিমায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বিজেপির উমা ভারতীর মতো কট্টরপন্থিদের আত্মাহুতির হুমকির মুখে প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ না করলেও ভারতবর্ষেই নয়; দুনিয়াব্যাপী নিজের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। টানা দুই দফা কংগ্রেসকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। কিন্তু গান্ধী পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত পুত্র রাহুলকে রাজনীতিতে নিয়ে এলেও ক্ষমতায় বসাননি। কিন্তু দল ও ক্ষমতার নেপথ্য শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং কিংবা সালমান রুশদীর মতো পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত পণ্ডিত বা অভিজাতদের হাতে ক্ষমতা দিতে গিয়ে কংগ্রেসকে তৃণমূল বিচ্ছিন্ন করেছিলেন।

অন্যদিকে রাহুল গান্ধীকে ক্ষমতার বাইরে রাখলেও কংগ্রেসকে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করতে তিনি ক্যারিশমা দেখাতে পারেননি। পর্যবেক্ষকদের মতে, রাহুলের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে নিরন্তর সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অতীতে যেমন দেখা যায়নি, বর্তমানেও দেখা যাচ্ছে না। দিল্লি প্রেস ক্লাবের রাতের আড্ডায় ভিড় জমানো সাংবাদিকদের অনেকে বলছেন, রাহুল হলেন এরকম— আজকাল হয়তো ভারতের দারিদ্র্যপীড়িত কোনো এলাকার গরিবের দুয়ারে পা রাখছেন, সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন; কিন্তু পরশু দিনই তিনি লাপাত্তা। হয়তো দেশের বাইরেই চলে গেছেন। তিন দিন হয়তো কোনো এলাকা সফর করলেন, সভা সমাবেশ করলেন, তারপরই ছন্দপতন ঘটিয়ে হারিয়ে গেলেন। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিরলস পরিশ্রম কিংবা ফুলটাইম সময় দেওয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে নেই। সোনিয়া গান্ধী অসুস্থ না হলে কংগ্রেসের হয়তো এমন বিপর্যয় হতো না। উচ্চ শিক্ষিত, অভিজাতরা কংগ্রেসের ক্ষমতাকালীন সময়টাকে উপভোগ করলেও দলটিকে গণবিচ্ছিন্ন করে গেছেন। বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন দুর্বল হচ্ছে। উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে মোলায়েম সিং যাদবের পুত্র অখিলেশের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে রাহুল গান্ধী কংগ্রেস নিয়ে জোট করেও করুণ পরাজয় দেখেছেন। বিজেপি ৩১৫টি আসনে বিজয় নিয়ে ভারতবর্ষকেই জানিয়ে দিয়েছে, আগামী নির্বাচনের গণরায় তাদের অনুকূলেই।

পশ্চিমবঙ্গের কিছু উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয় ঘটলেও দেখিয়ে দিয়েছে তাদের ভোট বেড়েছে। বিগত এক দেড় যুগ পূর্ব থেকে তৃণমূল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ায় কংগ্রেস কার্যত অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালীন অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ শিক্ষিত অভিজাত মন্ত্রী-নেতারা ইন্দিরা গান্ধীর তৃণমূলের সঙ্গে শক্তিশালী বন্ধনের নীতি থেকে কংগ্রেসকে দূরে সরিয়ে নেন। পশ্চিমবঙ্গে যে রকম মমতার তৃণমূল দখল নিয়েছে, মহারাষ্ট্রে তেমনি শারদ পাওয়ারের এনসিপির আবির্ভাব কংগ্রেসের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। দক্ষিণে তামিল পার্টির উত্থান, উত্তর প্রদেশে বিহারের নীতিশ কুমারের রাষ্ট্রীয় জনতা দল দখল রাখলেও কংগ্রেস গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টি ও মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট রাখলেও কংগ্রেসের অবস্থা নড়বড়ে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিজেপি, আরএসএস বা সংঘ পরিবার ১০৮টি বিভিন্ন নামে হিন্দুত্ববাদের স্লোগানটাকে সামনে নিয়ে সংগঠন শক্তিশালী করছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের দেশ ভারত এবং বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থ রক্ষা করছে এই বিশ্বাস মানুষের মনে প্রতিষ্ঠা করতে সফল হচ্ছে। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্ব রাহুল গান্ধী তার দলের ধর্মনিরপেক্ষ যে নীতি বা অসাম্প্রদায়িক যে চিন্তাভাবনা এবং গণতান্ত্রিক ভারতের রাষ্ট্রীয় ভিত্তিও যে ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর প্রতিষ্ঠিত সেটি নিয়েও জনগণের সামনে বিজেপির ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার বিপরীতে শক্তভাবে যেতে পারছে না।

বিগত লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির হয়ে বিজেপির জন্য নির্বাচন পরিচালনা করে অমিত শাহ যে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন, তাতে বিজেপির সভাপতি পদ তাকেই দেওয়া হয়। অমিত শাহ ছাড়াও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা গেরুয়া পোশাকের যোগী আদিত্যনাথ অসাধারণ সংগঠক হিসেবে বিজেপির জন্য মাঠে-ময়দানে ভূমিকা রাখছেন। কংগ্রেসের যোগ্য, শিক্ষিত, মেধাবী নেতৃত্ব রয়েছে। কিন্তু সংগঠন এতটাই অগোছালো এবং লক্ষ্যবিহীন পথ হাঁটছে যে, জনমত পক্ষে টেনে নিজেদের শক্তিশালী করবে কোথায়, আরও হতাশাগ্রস্ত দলে পরিণত হয়েছে। লোকসভার কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ছাড়াও মল্লিক অর্জুন খর্গে এবং রাজ্যসভায় গোলাম নবী আজাদসহ কয়েকজন বিজেপির সরকারকে মাঝে-মধ্যে নাস্তানাবুদ করলেও বাইরে রাজনীতির ময়দানে সেটাকে পুঁজি করতে পারছে না। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের যেসব লোক যাবেন তাদের নাগরিকত্ব দানের যে বিল আনতে চেয়েছিল বিজেপি সেটি যেমন কংগ্রেস রুখে দিয়েছে, তেমনি শিল্প-কারখানার জন্য জমি আইন সংশোধন বিলও আনতে দেয়নি।

বিজেপি যেখানে উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরে জাতীয় সম্মেলনের মধ্যদিয়ে আরও বেশি তৃণমূলে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছে, ধারাবাহিকভাবে সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে সেখানে কংগ্রেসের সম্মেলন হয়নি, কংগ্রেসের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বলতে তৃণমূলেও কিছু নেই, কেন্দ্রেও নেই; এমনকি উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের পরাজয়ের পর কংগ্রেসের কোনো সংবাদ সম্মেলনও হয়নি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে কংগ্রেস যদি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে না যায়, ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড না চালায়, তাহলে দলের নেতা-কর্মী ধরে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ ক্ষমতার বাইরে আশাহীনভাবে কেউ পড়ে থাকতে চায় না। কংগ্রেসকে আশা জাগাতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালীকরণ ও জনগণকে পক্ষে টানতে ব্যাপক সাংগঠনিক সফরের বিকল্প নেই।

সোনিয়া অসুস্থ হওয়ায় নামতে পারছেন না, তেমনি রাহুল গান্ধীও সেই চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন না।  এতে হতাশাই বাড়ছে। অন্যদিকে, কংগ্রেসের অনিশ্চিত অন্ধকার আরও বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবাই বলছেন, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনেও নরেন্দ্র মোদির বিজয় নিশ্চিত।  সাদা চোখে এর বাইরে তারা কিছু দেখছেন না।

 

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক।

     ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর