সোমবার, ১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক

ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক

বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন। এই সফরে ৩৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই সফরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ছাড়াও নিরাপত্তা সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতা, যোগাযোগ, অবকাঠামো, কানেকটিভিটি বৃদ্ধি, ডিজেল ও বিদ্যুৎ আমদানি, মহাকাশ সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয় রয়েছে। তিস্তার পানির বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে এ সমস্যার সমাধান হয়নি। যে দুটি বিষয় নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তা হলো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সা প্রসঙ্গে। বিগত দিনে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হলেও প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয় আলোচনা করতে গিয়ে কোনো মহল ভারতের রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের ওপর ভারতের প্রাচীন সভ্যতার মূল্যবান গ্রন্থ মনুসংহিতা ও চাণক্য অর্থশাস্ত্র- কূটনীতিরও প্রভাব ফেলছে বলে সমালোচনা করেছেন।

আমরা জানি সভ্যতার ওপর ভিত্তি করে দেশ, অঞ্চল এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্ব এগিয়ে চলে। বিশ্বে মানব সভ্যতার বিকাশে কয়েকটি অঞ্চল কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশ, আরব-পারস্য, ইউরোপ, চীন, জাপান অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে খ্রিস্ট-পরবর্তী পাঁচশত বছর পর্যন্ত মৌর্য-গুপ্ত শাসনামলে ভারতবর্ষ জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তিতে বিশ্বে শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করেছে। ওই সময় গ্রিসকে কেন্দ্র করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে, মুক্তবুদ্ধির চর্চা বিকশিত হয় এবং সামরিক শক্তির মাধ্যমে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়। সপ্তম থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত আরব বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞানে শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ইউরোপ শিল্প বিপ্লবের দিকে ধাবিত হয়। বিগত দুই হাজার বছরের ইতিহাসে অটোমান সাম্রাজ্য, রোম সাম্রাজ্য, পারস্য সাম্রাজ্য, জার সাম্রাজ্য, চীনে হান-টান সাম্রাজ্য সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং সামরিক শক্তির মাধ্যমে বিশাল প্রশাসনিক অঞ্চল গড়ে তোলে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি অর্জন করে। ষোড়শ শতাব্দীতে ভারতে মোগল সাম্রাজ্য ও তার শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি এ অঞ্চল ও বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পঞ্চম শতাব্দীতে ভারতে গড়ে উঠে লানন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, আরব বিশ্বে আল আজহার প্রতিষ্ঠিত হয় দশম শতাব্দীতে আর একাদশ শতাব্দীতে বোলনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত হয়। চীন এবং জাপানেও দুই হাজার বছর আগ থেকে শক্তিশালী সাম্রাজ্য এবং প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে ওঠে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুরো বিশ্বই ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনে চলে যায়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্স। অর্থনৈতিক, সামরিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বারা এ দুটি দেশ অনেক এগিয়ে যায় এবং বিশ্বে শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করে। বিশ্বের নিরাপত্তা বলতে বোঝাত এ দুটি দেশের অবস্থান ও সম্পর্ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রয়াস চালানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো, সিয়াটো, সেন্টো সামরিক জোট প্রতিষ্ঠিত হয়। সাহায্য-সহযোগিতার নামে অনেক দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাশাপাশি সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে গঠিত হয় ওয়ারশ ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চুক্তি করা হয়। তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে নিয়ে গঠিত হয় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন। তবে নিরাপত্তা ও শান্তি বেশিরভাগ নির্ভর করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সংঘাত ও সমঝোতার ওপর। বিএনপির নেতারা প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে ও পরে বলেছেন নতজানুর পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশ বিক্রি হয়ে গেছে, বাংলাদেশ কিছুই পায়নি, সফর ব্যর্থ হয়েছে।

লিখিত মন্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরের তিস্তা ন্যায্য হিস্সা, গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক, অশুল্ক বাধা দূর করার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

তিনি বলেন এই সফরের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যেভাবে ভারতের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে, তার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস, কারিকুলাম ও অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয় অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। তিনি আরও বলেন নিরাপত্তা সহযোগিতা, অস্ত্র ক্রয়, লাইন অব ক্রেডিট ঋণ, পারমাণবিক সহযোগিতা, ডিজেল ও বিদ্যুৎ আমদানি, কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি, মহাকাশ সহযোগিতা, সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী চুক্তি ও সহযোগিতায় সই করেছেন তাতে বাংলাদেশের ওপর ভারতের সামরিক, রাজনৈতিক, ভূরাজনৈতিক আধিপত্যই কেবল বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দ্বারা দেশের স্বার্থ নষ্ট হয় এমন কিছু হবে না। তিনি বন্ধুপ্রতিম ও মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্বাক্ষর করেছেন অথচ বিএনপির সময় স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৩টি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা আছে। ছয়টি দেশের সঙ্গে চুক্তি আছে। তিস্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে পানি দিতেই হবে। তিনি বলেন গঙ্গা ব্যারেজ বাংলাদেশ ভারত যৌথভাবে করা হবে। সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, সফরের পুরোটাই তৃপ্তির, হতাশার কিছু নেই। ভারত সফরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র বেড়েছে। বিগত কয়েক দশকের বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাংস্কৃতি, যোগাযোগ ক্ষেত্র সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ জ্বালানি, অবকাঠামো নির্মাণ, স্থল-নৌ-রেল ক্ষেত্রে  যোগাযোগ বৃদ্ধি, বন্দর ব্যবহারের সমঝোতা, পারমাণবিক-মহাকাশ গবেষণা সহযোগিতার চুক্তি এ সম্পর্ককে বহুমাত্রিকতা দিয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তের যৌথ বিজিবি-বিএসএফের টহলের ব্যবস্থার ফলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। সড়ক, রেল, নৌ এবং আকাশপথে ভৌত সংযোগ বিগত কয়েক বছরে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যার ফলে লক্ষাধিক লোক মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতীয় দূতাবাস সাম্প্রতিককালে মাসে প্রায় এক লাখ লোককে ভিসা দিয়ে থাকে, ভিসা ব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতের কারণ হলো ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা। পৃথিবীর আর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এত বিপুলসংখ্যক লোক যাতায়াত করে না। আমরা জানি ভারতীয় উপমহাদেশ বিশ্বে সভ্যতার শক্তিশালী কেন্দ্র। ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এর অংশীদার। উপমহাদেশের অধিকাংশ ভাষা ইন্দো এরিয়ান ভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত। যার ফলে ভাষার মেলবন্ধনের সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও মেলবন্ধন ঘটেছে। প্রাচীনকালের মৌর্য-গুপ্ত শাসন, মধ্যযুগের মোগল শাসন এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের জনগণের যোগাযোগ ও মেলবন্ধন বৃদ্ধি পেয়েছে। এক অঞ্চলের জনগণ অন্য অঞ্চলে চলে গেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাভাষী অঞ্চল, উড়িষ্যা আসাম থেকে ব্যাপক সংখ্যক জনগণ দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিল। আধুনিককালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে একদিকে উপমহাদেশের জনগণ যেমন শোষণ নিপীড়নের শিকার হয়, অন্যদিকে ইউরোপের মুক্তচিন্তা, ধ্যানধারণা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সঙ্গে একাত্ম হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন উপমহাদেশের জনগণকে গণতন্ত্র ও স্বাধিকারের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করে। প্রাচীনকালের মূল্যবোধ যা মহাকাব্য এবং মূলবান গ্রন্থসমূহ দ্বারা প্রতিফলিত হয়েছে, আরব-পারস্যের সঙ্গে মেলবন্ধন, চীন-জাপানের সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং ইউরোপের আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে সম্মেলন ভারতকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। যার ফলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে যা বহুত্ববাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে।  পাশাপাশি উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বকীয়তাও গড়ে ওঠে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শশাঙ্ক, পাল, সেন ও সুলতানি আমলে বাংলা ভাষাভাষী এ অঞ্চলে পৃথক সত্তা গড়ে ওঠে। আর ভাষা আন্দোলন থেকে আরম্ভ করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এ স্বকীয়তা পূর্ণতা লাভ করে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সংস্কৃতি সংযোগ আমাদের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে বাংলাদেশ-ভারত সর্বাত্মকভাবে কাজ করেছে, আমরা বিজয় অর্জন করেছি। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস আজ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত, নববর্ষের মঙ্গলশোভা যাত্রাও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ’৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানিচুক্তি সম্পাদন করেন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও সম্পর্ক জোরদার করা হয়। এবার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে ভারতের সঙ্গে সমস্যার সমাধানে আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হন।

ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে সমস্যা সমাধানের পথ আরও প্রশস্ত হয়। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হয়, সমুদ্রসীমা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে চিহ্নিত হয় এবং দুই দেশই তা মেনে নেয়। ৯৬ সালে ক্ষমতাসীন থাকার সময় ভারতের সহযোগিতায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চালের বিভেদকামী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যার ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেকাংশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য কুষ্টিয়া, বাগেরহাট এবং চট্টগ্রামের তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারিত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট, বন্দর ব্যবহারের ব্যবস্থা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সাংস্কৃতিক সহযোগিতা দুই দেশের সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। বিবিআইএন যোগাযোগ চুক্তি, বিনটেক্সের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং বিসিআইএম-ইসি সহযোগিতা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সম্প্রসারিত করেছে। ভারত ইতিমধ্যে প্রথমে এক বিলিয়ন ডলার, পরে দুই বিলিয়ন ডলার এবং সাম্প্রতিক সফরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যার সুদ ১% এবং শর্তও শিথিল করা হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে নয় বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বিগত কয়েক বছরে দুই দেশের সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ চলছে। যৌথ মহড়া এবং উচ্চপর্যায়ে সফর বিনিময় প্রতিনিয়ত চলছে। প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে এ সম্পর্কে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এবং তার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক সুনাম রয়েছে। ভারত জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জন কেরি মন্তব্য করেছেন যে, ভারতের শিক্ষার প্রতিষ্ঠান আইআইটি যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির সমকক্ষ। ভারতের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের। আমরা আশা করব যে ৫০ কোটি ডলার ঋণের টাকায় ভারত থেকে আন্তর্জাতিকমানের সামরিক সরঞ্জাম আনা হবে। যারা এ বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারেন না তারা অনৈক্য সৃষ্টিকারী ও বিভেদকামী শক্তি এবং দেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছেন। বিগত দিনের বিভিন্ন সমস্যা যেভাবে সমাধান হয়েছে তিস্তা সমস্যা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবশ্যই সমাধান হবে।

     লেখক : সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রদূত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর