শনিবার, ৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

নদ-নদীর দখল দূষণ রোধ

প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য

দখল-দূষণ রাজধানীর চার নদ-নদীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদী এবং তুরাগ ও বালু নদের অস্তিত্ব ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে দখলবাজদের কারণে। দূষণও এ চার নদ-নদীর অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলছে। অপরিকল্পিত বর্জ্য-ব্যবস্থাপনায় দূষিত হচ্ছে পানি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনমতে, গত এক যুগের কিছু বেশি সময়ে রাজধানীর চার নদ-নদীর ২৫০ একরের বেশি জায়গা দখল হয়েছে। গত সাড়ে তিন দশকে রাজধানীতে খাল, জলাশয় ও নিম্নভূমি দখল হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ২৪৫ হেক্টর। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দখলের শিকার হয়েছে তুরাগ নদ। আবদুল্লাহপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭৬ মাইল এলাকাজুড়ে নদটির ১২০ দশমিক ৭৯ একর জমি দখলদাররা গিলে খেয়েছে। এরপর দখলের শিকার বুড়িগঙ্গা। কামরাঙ্গীর চর থেকে বসিলা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪১ মাইল এলাকার ৯৭ দশমিক ১৭ একর জমি দখল করে নিয়েছে নদীখেকোরা। কাঁচপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭ মাইলজুড়ে শীতলক্ষ্যা এবং ডেমরা থেকে নন্দীপাড়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ মাইলজুড়ে বালু নদ দখলের শিকার হয়েছে। এ নদ-নদী দুটির ২৩ দশমিক ৮৩ ও ৮ দশমিক ৮৪ একর এলাকা চলে গেছে দখলদারদের পেটে। প্রভাবশালীদের কারণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে একসময়কার প্রমত্ত চার নদ-নদী। শুধু দখল নয়, দূষণেরও নির্মম শিকার তারা। একসময় শীতলক্ষ্যার পানি এত স্বচ্ছ ছিল যে, ডিস্টিল ওয়াটারের বোতলে লেখা হতো শীতলক্ষ্যার পানি দিয়ে তৈরি। সেই নদীর পানি এখন পরিশোধনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঢাকার নদ-নদীগুলো ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ। বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করেই মোগল আমলে ঢাকায় সুবে বাংলার রাজধানী গড়ে উঠেছিল। এখন এই মহানগরী স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী। দেড় কোটি মানুষের এই মহানগরীর পরিবেশ অনেকাংশে চার নদ-নদীর অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দখলদার ও দূষণকারীদের দৌরাত্ম্যে ঢাকার জলাশয়গুলো অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। প্রশাসনের কুম্ভকর্ণের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়ছে ঢাকার পরিবেশ। নদী দখল বন্ধে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে তা সফল হচ্ছে না। প্রশাসনের সংকল্পবদ্ধ ভূমিকাই এ ক্ষেত্রে আশার আলো জাগাতে পারে। নিজেদের সুনামের স্বার্থেই তারা এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর