সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

তাদের এত মায়াকান্না কেন?

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

তাদের এত মায়াকান্না কেন?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক গ্যারি এলেন ১৯৭২ সালে একটি বই লিখে সারা বিশ্বে তোলপাড় ফেলে দেন। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এবং অদৃশ্য সরকার সবাই তখন তার পিছু লাগে। বইটি প্রকাশিত হওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে প্রায় আট লাখ কপি বিক্রি হয়ে যায়। বইটির নাম— None Dare call it conspiracy. লেখক অত্যন্ত নিখুঁত ও যৌক্তিকভাবে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে দেখিয়েছেন সারা বিশ্বের সব সম্পদের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও দখল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিটের ক্ষমতাশালীরা নিজেদের করপোরেট স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কীভাবে নামে-বেনামে বিশ্বব্যাপী শত শত মিডিয়া, সংস্থা, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য অনেকে বলে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের দৃশ্যমান সরকারের চেয়ে অদৃশ্য সরকারের ক্ষমতা অনেক বেশি। নিজেদের আগলি বা অসুন্দর চেহারাটিকে ঢেকে রেখে একটা ভালোমানুষী চেহারা বিশ্বব্যাপী জনমানুষের কাছে উপস্থাপনের জন্য তাদের হাতে রয়েছে বড় বড় ব্যাংক, বিশাল মিডিয়া হাউস এবং মানবাধিকার নামের বহুমুখী সংস্থা। একটু ভিতরে ঢুকলেই তাদের আসল চেহারাটা দেখা যায়, যেটি তুলে ধরেছেন গ্যারি এলেন তার বইয়ের ভিতরে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সফলতম রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে গণ্য করা হয়। অথচ আমরা কতজন জানি যে, রাশিয়ায় জার শাসনের পতন, বলশেভিক বিপ্লবের বিজয় ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন এবং ওয়াল স্ট্রিটের করপোরেট হাউসগুলো। গ্যারি এলেন তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন লেনিন ও ট্রোটস্কি যথাক্রমে সুইজারল্যান্ড ও নিউইয়র্কে বসে ওয়াল স্ট্রিটের করপোরেট হাউসগুলোর সহযোগিতায় বিপ্লবের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন। তারপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৭ সালে বিপ্লবের চূড়ান্ত পর্বে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সেনাবাহিনী দুজনকে অ্যাসকর্ট করে রাশিয়ার তখনকার রাজধানী পেত্রোগ্রাদে পৌঁছে দেয়। বলশেভিক বিপ্লব তহবিলে কোন করপোরেট হাউস কী পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছে তার উল্লেখ আছে ওই বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায়। আমেরিকার স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্টনি সুটনের (Antony Sutton) বই Western Technology and soviet Economic development. এ বইটি পড়লে দেখা যায় আক্ষরিক অর্থে সোভিয়েত ইউনিয়ন ম্যানিফ্যাকচারড হয় আমেরিকার মাটিতে। লেনিন নিজে স্বীকার করেন সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই-তৃতীয়াংশ শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় আমেরিকার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়। ১৯২৭ সালে নিউইয়র্কের স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠা করে দেয়, যার মধ্য দিয়ে বলশেভিক বিপ্লব শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, পশ্চিমা পুঁজিবাদ ও করপোরেট হাউসের চিরশত্রু কমিউনিজমকে সব রকম সাহায্য দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠিত করল কেন? এ সম্পর্কে গ্যারি এলেন তার বইয়ে যা বলেছেন সেটাই হুবহু ইংরেজিতেই তুলে ধরছি— If Your goal is global conquest, You have to start somewhere. In Russia, for the first time, the communist conspiracy gained a geographical homeland from which to launch assaults against the other nations of the world. the west now had an enemy. অর্থাৎ অস্ত্র ব্যবসা, মানি ব্যবসাসহ সব ব্যবসার প্রসারও সারা বিশ্বের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন শত্রু সৃষ্টি করার।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পূর্ব ইউরোপসহ সারা বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ এখন কাদের হাতে, সেটার দিকে তাকালেই গ্যারি এলেনের কথার যথার্থতা বোঝা যায়। আল-কায়েদার মতো বড় শত্রু সৃষ্টি করা গিয়েছিল বলেই ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার সব তেল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এখন ওয়াল স্ট্রিটের করপোরেট হাউসগুলোর হাতে। আর মানি ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসার প্রসারের চিত্র তো এখন সবাই দেখছেন। গ্যারি এলেন দেখিয়েছেন বিশ্বের সুপার গভর্নমেন্টের হেড হিসেবে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাঙ্ক সিএফআর (CFR- council on Foreign Relation) এবং ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক আরআইআইএ (Riia- Royal Institute of International Affairs)। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ প্রায় সব সদস্য আসেন ওয়াল স্ট্রিটের করপোরেট হাউসগুলো থেকে। যেমন— রকফেলার, ফোর্ড, জেপি মর্গান, লকহিড মার্কিন, স্ট্যান্ডার্ড অয়েল, ইউনিকল ইত্যাদি সব প্রতিষ্ঠান থেকে। এই করপোরেট হাউসগুলোর পুঁজিতে চলে বিশ্বের বড় বড় সব মিডিয়া হাউস, বড় ব্যাংক, নামকরা থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থা এবং সংগঠনগুলো। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সব দলের প্রেসিডেন্টের শাসনামলে সেক্রেটারি অব স্টেটসহ স্টেট ডিপার্টমেন্টের শতকরা প্রায় ৫০-৬০ ভাগ কর্মকর্তা নিয়োগ পান সিএফআর থিঙ্কট্যাঙ্ক থেকে। বিশ্বব্যাপী জনসমর্থন পক্ষে রাখার কৌশল হিসেবে পশ্চিমা ওইসব মিডিয়া হাউস, মানবাধিকার সংস্থাগুলো গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং অসহায় দুর্বল মানুষের পক্ষে দাঁড়ায় এবং কথা বলে। এর প্রশংসা সবাই করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তারা ভালো করে জানেন, দুর্বল সাধারণ মানুষ তাদের কৌশল ও হিডেন এজেন্ডা সম্পর্কে কখনো জানতে-বুঝতে পারবে না। সুতরাং দুর্বলের প্রতি মায়াকান্না ও শাসকদের অন্যায়ের প্রতিবাদ, এগুলো তারা সুপরিকল্পিতভাবে অ্যাসেট বা সম্পদ হিসেবে গচ্ছিত রাখে, যাতে সময় মতো এই সম্পদ নিজেদের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবহার করা যায়। তাই বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যখন কোনো রাষ্ট্র সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠে, সেখানে অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়, নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চায় এবং সেসব রাষ্ট্রের শাসক স্বাধীনচেতা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নেয়, তখন উপরোল্লিখিত সিএফআরের অধীন, সব মিডিয়া, ব্যাংক, থিঙ্কট্যাঙ্ক, মানবাধিকার সংস্থা, সবাই মিলে ওই শাসককে ক্ষমতা থেকে উত্খাত করার জন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং সম্মিলিত প্রোপাগান্ডা শুরু করে। সংগত কারণেই মানুষের পক্ষে তাদের আসল উদ্দেশ্য বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না। এ জন্যই গ্যারি এলেন তার বইয়ের নাম দিয়েছেন None Dare call it conspiracy. ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, লিবিয়ার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রোপাগান্ডা এবং ক্ষমতা থেকে উত্খাত ও নিহত হওয়ার ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে গ্যারি এলেনের কথাগুলো পরিষ্কার বোঝা যায়। সব পশ্চিমা মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থা সাদ্দাম ও গাদ্দাফির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডায় অংশ নেয়। অথচ সাদ্দাম ও গাদ্দাফির যথার্থ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে হিউম্যান রাইট ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থাকে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শেকড় বা গোড়া কোথায় এবং তাদের সম্মিলিত চেহারার প্রকৃত স্বরূপটা তুলে ধরার জন্য বড় একটা ভূমিকার অবতারণা করতে হলো। সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মিডিয়ার স্বাধীনতা, ভিন্নমত প্রকাশ ও বাক-স্বাধীনতা সম্পর্কে বিশাল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তা পড়লে যে কারও মনে হতে পারে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ এখন চোখ, কান, মুখ বন্ধ করে বোবা ও কানা হয়ে বসে আছে। এই প্রতিবেদনের সবকিছু এখন সবাই জানেন। এর পক্ষে-বিপক্ষেও অনেক কথা হয়েছে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। আমি শুধু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আসল হিডেন অবস্থাটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সম্পর্কে অ্যামনেস্টির অবস্থান স্পষ্ট হয় যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের সময়। সে সময় তারা ওই দুই যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ অবলম্বন করে। প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই মর্মে যে, শুধু বিরোধী দলের নেতা হওয়ার কারণেই তাদের মিথ্যা মামলা ও ত্রুটিপূর্ণ বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিচার করতে হবে। তখন বাংলাদেশের মানুষ এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং পথে ঘাটে মাঠে উচ্চারিত হয় জামায়াত-বিএনপির ডলারের কাছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিক্রি হয়ে গেছে। আসলে এসবের কোনোটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর মূল কারণ রয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শেকড়ের মধ্যে। সেখানে আছে সেই নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিট কর্তাদের নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব সুপার গভর্নমেন্টের অবস্থান, যার প্রধান হচ্ছে, সিএফআর এবং আরআইআইএ, এই দুটি থিঙ্কট্যাঙ্ক, যে কথা লেখার মাঝখানে উল্লেখ করেছি। বহু আগেই এই বিশ্ব সুপার গভর্নমেন্টের নজর পড়েছে বাংলাদেশ ও তার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর। ২০০০ সালে বিল ক্লিনটন এলেন। ওয়াল স্ট্রিটের অন্যতম কর্ণধার ইউনিকলের পক্ষে ওকালতি করার জন্য। দাবি জানালেন বাংলাদেশের গ্যাস ইউনিকলের কাছে ইজারা দেওয়া হোক, যেটি তারা পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারতের কাছে বিক্রি করবে। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে এত বড় বেইমানি করতে পারেন না, এটি ক্লিনটন ও তার পারিষদবর্গ অনুমান করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিল ক্লিনটনের মুখের ওপর বলে দিলেন হবে না। ব্যাস হয়ে গেল। তারপর যা হওয়ার তাই হলো। ক্ষমতাচ্যুতি, প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা, ২০০৭-২০০৮ মেয়াদে রাজনীতি থেকে চিরবিদায় দেওয়ার জন্য দেশি-বিদেশি ওই একই চক্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। কিনা হয়েছে। সবই তো বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। কিন্তু শেষ বিচারে বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর কারণেই তারা শত চেষ্টা করেও শেখ হাসিনাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এসে যখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসী এবং প্রতিবেশী দেশের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিলেন, তখন আবার শুরু হলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সেই পুরনো ষড়যন্ত্র এবং তার অংশ হিসেবে সীমাহীন প্রোপাগান্ডা। যার সূত্র ধরেই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের দাবিতে প্রতিবেদন ছাপে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মেরুকরণ এবং তার সঙ্গে বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের চেহারাটা সবার কাছে আরেকবার স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সে সময়েও তারা সফল হতে পারে না। তারপর সেই পুরনো খেলা শত্রু সৃষ্টির পাঁয়তারা শুরু হয়। তারা সমানে বলতে থাকে বাংলাদেশে আইএস আছে। কিন্তু পুলিশ, র‌্যাব ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জঙ্গি দমনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করায় এখানেও তারা হালে পানি পান না। তাই জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগের মতোই দেশি-বিদেশি গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যে নতুন গেম শুরু হতে যাচ্ছে তার জন্য ওদের পক্ষ থেকে ওয়ার্ম আপ শট বলা যেতে পারে। কিন্তু এই প্রতিবেদন দেখে তথাকথিত নিরপেক্ষ কিছু সুশীল, মিডিয়া হাউস এবং পশ্চিমা অর্থপুষ্ট কিছু এনজিওর ভূমিকার নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে আরেকটি বইয়ের আশ্রয় নিতে হয়। বইটির নাম— কনফেশনস অব অ্যান ইকনোমিক হিটম্যান। বইটি লিখেছেন জন পার্কিনস, ২০০৪ সালে পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত। জন পার্কিনসের দেওয়া তথ্য মতে, এই নিরপেক্ষধারীরা হলেন, নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিটের নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্ব সুপার গভর্নমেন্টের পক্ষে কাজ করার দেশীয় প্রতিভূ এবং এদের ডাকা হয় জ্যাকল বলে। বাংলাদেশে এই জ্যাকলদের পরিচয় ও ভূমিকা ২০০৭-২০০৮ মেয়াদে জরুরি আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। সুতরাং উপসংহারে বলতে চাই সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনে যা  উল্লেখ করেছে সেটি বাংলাদেশের মিডিয়া বা মানুষের স্বার্থে নয়। এই মায়াকান্না তারা কাঁদছে তাদের মূল শেকড় ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্ব সুপার গভর্নমেন্টের স্বার্থ রক্ষার জন্য।

লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

            [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর