শিরোনাম
শনিবার, ২০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলামের দৃষ্টিতে মদপান ও মাদকের ভয়াবহতা

মুফতি মুহিউদ্দিন কাসেম
পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা।

মদের মূল আরবি শব্দ ‘খামার’। এর অর্থ বিলুপ্ত করা, লুকিয়ে ফেলা। যেহেতু মদ মানুষের বুদ্ধি-বিবেক বিলুপ্ত করে দেয় তাই এই নামকরণ। রব্বুল আলামিন আল কোরআনে মদপানকে শয়তানের কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত বলে  উল্লেখ করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর (ইত্যাদি) হলো ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করে চল, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সূরা মায়িদা  ৫ : ৯০-৯১)।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : ‘তোমরা মদপান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ এটি যাবতীয় অপকর্মের চাবি।’ (মুবাদরকে হাকেম খণ্ড ৪, পৃ. ১৪৫; মুনজিরি হাদিস ৩৪৮৭, পৃ. ৪৫৫)।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : হজরত আনাস বিন মালিক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদপানের সঙ্গে জড়িত ১০ ব্যক্তিকে লানত করেছেন। তারা হলো—  ১. রস তৈয়ারকারী ২. যার নির্দেশে তৈয়ার করা হয় ৩. পানকারী ৪. বহনকারী ৫. যার নিকট বহন করে পৌঁছানো হয় ৬. পরিবেশনকারী ৭. বিক্রয়কারী ৮. মদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ ভোগকারী ৯. খরিদকারী ১০. যার জন্য খরিদ করা হয়। (ইবনে মাজাহ হাদিস ৩৩৮১, তিরমিজি হাদিস ১২৯৫, মুনজিরি হাদিস ৩৪৬৭, পৃ. ৫৩)।

অন্য হাদিসে এসেছে : রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নেশা জাতীয় প্রত্যেক বস্তু হারাম। আর আল্লাহর প্রতিজ্ঞা হলো যে ব্যক্তি নেশা উদ্রেককারী জিনিস পান করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে তিনাতুল খাবাল পান করাবেন। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনাতুল খাবাল কী জিনিস?  রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত ঘাম অথবা বলেছেন জাহান্নামিদের রক্ত ও পুঁজ। মিশকাতুল মাসাবি, পৃ. ৩১৭)।

অন্য হাদিসে রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : তিন শ্রেণির লোকের জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। ১. মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি ২. পিতামাতার অবাধ্য সন্তান এবং ৩. সেই বেহায়া লোক যে নিজ পরিবারেও অশ্লীলতাকে স্বীকৃতি দিয়ে জিইয়ে রাখে। (মুসনাদে আহমাদ খণ্ড ২, পৃ. ৬৯; নাসাঈ খণ্ড ৫, পৃ. ৮১; মুনজিরি হাদিস ৩৪৮৪)।

যে মদ মানুষের জ্ঞান ও অনুভূতিশক্তির মতো উত্তম  বস্তু বিলুপ্ত করে তা যে কত নিকৃষ্ট তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই মদের কারণে সমাজে বহু ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। বহু লোক তাদের নিকটাত্মীয়া, অন্যের বিবাহিতা স্ত্রী, অন্যের যুবতী মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করছে। এই মদের মাদকতায় অজ্ঞান হয়ে কত লোক যে স্বীয় ধনসম্পদ এবং জীবনকে জুয়া, নারীহরণ ও পতিতালয় গমন করে  ধ্বংস করছে। কত নারী তার নেশায় মত্ত স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কত মানুষ এই মদপান করে ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং আসুন আমরা এই ঘৃণিত অপরাধ মদকে ‘না’ বলি এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে আদর্শ জীবন ও আদর্শ সমাজ গঠনে কার্যকর  ভূমিকা রাখি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।

সর্বশেষ খবর