মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুলশয্যার সেই রাত

মাকিদ হায়দার

ফুলশয্যার সেই রাত

তখন চারিদিকে শুধু নেই-এর উৎসব। কৈশোরের রোজার ঈদের তিন-চার দিন আগেই ভাইবোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত ঈদের চাঁদ কে কখন আগে দেখবে, কবে কখন উঠবে, যদি চাঁদ মেঘে ঢেকে যায়, সেই চাঁদ আমরা দেখব কী করে। মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে যেতাম আমরা ভাইবোনেরা, তখনকার দিনে আমাদের দোহারপাড়ায় একটি মাত্র ‘মারফি’ রেডিও ছিল মীর কাকাদের বাড়িতে, চালাতে হতো মোটরগাড়ির ব্যাটারি দিয়ে, বাড়িটি ছিল আমাদের বাড়ির পুবের দিকে, সেখানে যেতে লাগত ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেডিও শোনার জন্য। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্র ছিল শাহবাগে, প্রথম অধিবেশন শুরু হতো সকাল ৭টায়, শেষ হতো ৯টায়। দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হতো দুপুর ১টায়, শেষ হতো বিকাল ৩টায়। শেষ অধিবেশন শুরু হতো বিকাল ৫টায়, শেষ হতো রাত সাড়ে ১০টায়। বাংলা সংবাদ প্রচার হতো রেডিও পাকিস্তানের করাচি কেন্দ্র থেকে। বাংলার সংবাদ পাঠক নেয়ামুল বশির, মুজিবর রহমান খাঁ, সরকার কবীর উদ্দিন, ইমরুল চৌধুরীসহ আরও জনাকয়েক। ওইসব ঘোষকের কে কখন ঘোষণা দেবেন রোজার ঈদের চাঁদ দেখা গিয়েছে কোয়েটায় এবং লাহোরে আগামীকাল ঈদুল ফিতর। আমাদের বাড়িতে রেডিও না থাকায় আমরা ভাইবোনেরা দু-তিন দিন আগে থেকেই অপেক্ষা করতাম কে কখন প্রথম চাঁদ দেখেছে, তাই নিয়ে চলত আমাদের ভিতরে উৎকণ্ঠা।

আরও উৎকণ্ঠার ভিতরে থাকত বড় ভগ্নিপতি সিরাজ উদ্দীন মণ্ডল যদি ঈদের ‘ঈদি’ না দেয়, তাহলে তো দুই আনা দামের দুধ মালাইয়ের আইসক্রিম খাওয়া হবে না, উৎকণ্ঠার শেষ নেই, ক্রমান্বয়ে বেড়েই যেত সব ভাইবোনের। এমনইতর ছিল  আমাদের সেই আদ্যযুগ। পাবনা শহরের বড় বাজারের দর্জিপট্টির হামিদ দর্জির দোকানে রোজা শুরু হওয়ার দিন সাতেক পরে, পিতা একদিন খোকন (দাউদ হায়দার), স্বপন (জাহিদ হায়দার), তপন (আবিদ হায়দার) আর আমাকে দুই রিকশায় চাপিয়ে নিয়ে গেলেন ঈদের নতুন শার্ট-প্যান্ট বানানোর জন্য। আমরা চার ভাই তো আনন্দে আত্মহারা। শার্টের মাপ নেওয়ার আগে বাবা আমাদের কাছ থেকে জানতে চাইলেন— তোরা ‘ইংলিশ’ প্যান্ট নিবি নাকি ‘ইজের’ প্যান্ট নিবি। খোকন, স্বপন, তপন জানাল ইংলিশ প্যান্ট নেব। আমি জানালাম ইজের প্যান্ট নেব, কথাটি শুনেই বাবা মৃদু হাসলেন, এবার শার্টের মাপ নিলেন হামিদ দর্জি ওদের তিনজনের। আমার শার্টের মাপ নেওয়ার আগে বাবার কাছে বায়না ধরলাম, আমাকে ‘কেরোলিনের’ শার্ট দিতে হবে, আমার ইচ্ছা পূরণ হতে সময় লাগল না।

সেদিন বুঝিনি ইজের প্যান্ট কাকে বলে, ইংলিশ প্যান্টের সঙ্গে ইজের প্যান্টের তফাতইবা কী। ইজের প্যান্টের দুই পাশে দুটি বিশাল বিশাল পকেট থাকে এবং একই সঙ্গে ফিতা ভরা প্যান্ট। এদিকে রোজার ঈদ আসতে তিন-চার দিন বাকি। শার্ট-প্যান্টের কোনো খবরই নেই, কবে যে হামিদ দর্জি দিয়ে যাবেন, তাও জানার উপায় নেই। ওদিকে ঝর্ণাবু, হেনা, হাস্নার ফ্রক, পায়জামা, ওড়না ভবানী সাহার বাড়ির নিচতলার শোভা টেইলারিং হাউসের কেরু দর্জি বাড়িতে এসে দিয়ে গেছেন দুই দিন আগে। অথচ আমাদের চার ভাইয়ের প্যান্ট-শার্টের কোনো খবরই দিচ্ছেন না হামিদ দর্জি। গতকালকেই ঝর্ণাবু, হেনা, হাস্না এক রিকশায় চেপে তিন বোনই কিনেছেন বাটার দোকান থেকে খুব সুন্দর সুন্দর স্যান্ডেল, দামি জোড়া নিয়েছে ঝর্ণাবু, সেই স্যান্ডেল কিনে এনেই বাড়ির সেগুন কাঠের আলমারির ভিতরে লুকিয়ে রাখলেন দুই দিন। উদ্দেশ্য ঈদের দিন পায়ে দিয়ে পাড়া বেড়াবেন। যাবেন তার সহপাঠী বেলী, ঝুননুন নাহার, আনোয়ারা আর ঝন্টুদের বাড়িতে। ঝর্ণাবু পাবনা গার্লস হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। হেনা, হাস্না, প্রাইমারিতে। ওইদিকে আমাদের চার ভাইয়ের উৎকণ্ঠার শেষ নেই দর্জি জামা-প্যান্ট দেবেন কি দেবেন না। অথচ ঈদ আসতে আর মাত্র দুই দিন বাকি। একবুক উৎকণ্ঠা নিয়ে আমি আমার ‘হারকিউলিস’ সাইকেল চালিয়ে সেই দিনই হামিদ দর্জির দোকানে গিয়ে তাগাদা দিতেই দর্জি বললেন, আজ রাত যত গভীরই হোক তোমাদের বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসব তোমাদের জামা-প্যান্ট। এদিকে দুপুুর গড়িয়ে রাত নামতেই বাড়তে লাগল উৎকণ্ঠা— দর্জি যদি না দেন, ভাবতেই কান্নাজুড়ে দিলাম, কেননা ওইদিন বিকালে আমার মেজ কাকার আর ছোট কাকার ছেলেমেয়েদের নতুন জামা-প্যান্ট বাড়িতে দিয়ে গেছেন ওই কেরু দর্জি, অথচ আমাদের দর্জি এখনো কেন আসেন না। রাতে ঘুম না আসা পর্যন্ত বার বার আল্লাহর কাছে বললাম, হামিদ শালা যদি আজ রাতের মধ্যে ঈদের জামা-প্যান্ট না দিয়ে যায় ও শালা যেন কলেরায় মারা যায়, মরে। সকালবেলা ঘুম থেকে জেগেই শুনি, মা আমার বাবাকে বলছেন, খোকন, স্বপন, তপনকে আপনি ইংলিশ প্যান্ট দিলেন, আর রোকনকে দিলেন ইজের প্যান্ট। মা থামতেই বাবা হো হো করে হেসে দিয়ে মাকে জানালেন ‘আমি দিইনি, তোমার ছেলে নিজেই নিয়েছে ইজের প্যান্ট আর “কেরোলিনের” শার্ট। “বুজকির” পাঞ্জাবি নিয়েছে দুলাল, (রশীদ হায়দার), রৌফ তো (জিয়া হায়দার) অনেক আগেই জানিয়েছে, ঈদে আসতে পারবে না, ঢাকা থেকে।’

মনে কষ্ট হলেও ঈদের আগেই ছোট তিন ভাইয়ের কাছে গর্ব করে বললাম ইজের প্যান্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, দুই পকেটে কাচের গুলি, পাখি মারার গুলতি রাখা যায় অনায়াসে। ঈদের পরদিন দুই পকেটভর্তি কাচের গুলি নিয়ে পাড়ার সুরুজ, গোপাল, খনা, আজিজদের সঙ্গে খেলা শুরু করলাম বাবু কাকার বাড়ির পেছনের দেয়ালের পাশ ঘেঁষে; যেন বড়রা কেউ দেখতে না পায়।

আজকাল সেই ইজের প্যান্ট নেই, নেই গ্রামগঞ্জের কাচের গুলি খেলা, হা-ডু-ডু—কাবাডি সবকিছুই হারিয়ে গেছে বর্তমানের কিশোরদের জীবন-জগৎ থেকে কালের অতলে। হারিয়ে গেছে অনেকের স্মৃতিময় বিবাহের প্রথম রাতের ফুলশয্যার সেই আলো-আঁধারির বাসরঘর। আমাদের জীবনে ফুলশয্যার রাত আর বাসরঘর একবারই আসে। সেই ফুলশয্যার ঘর, কিংবা বাসরঘর সেই ঘরে জীবনের সুমধুর একটি রাত কেটেছিল, একটি নতুন মুখের ঘন নিঃশ্বাসের সঙ্গে না ঘুমিয়ে। ফুলশয্যার রাত অনেকেই না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়, কাটিয়ে দেওয়ার হেতু হাজার রকমের হতে পারে, শ্যালিকারা এ জানালায় সে জানালায়, উঁকিঝুঁকি, লুকোচুরিতেই ভোর হতে না হতেই হারিয়ে যায় সেই ফুলশয্যার রাত। সঙ্গে স্বপ্নের সেই বাসরঘর।

আমাদের রীনাবুর বিয়ে হয়েছিল ১৯৫৯ সালের এপ্রিল মাসে। ব্যাংকের এক জুনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে। রীনাবুর বয়স ছিল ১৪-১৫ বছর আর ভগ্নিপতি আবদুল ওয়াজেদের ছিল ১৯-২০ বছর। ভগ্নিপতির বাড়ি সাঁথিয়া উপজেলায়। ভগ্নিপতি ওয়াজেদকে তার ফুলশয্যার রাতে একবারও আমরা ঘুমাতে দিইনি। না দেওয়ার নেপথ্যে ছিলাম আমি। কারণটি হলো, আপন ভাই, চাচাতো ভাই আমরা পাঁচ-ছয় জন মিলে, খুব সুন্দর করে দেবদারু গাছের পাতা দিয়ে, লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ পাতলা কাগজের মালায় সাজিয়েছিলাম বিয়েবাড়ির গেট। চারদিকে চারটি বাঁশের খুঁটি পুঁতে সেই বানানো গেটের মাথায় বড় বড় হরফে লিখেছিলাম ‘শুভবিবাহ’। বেশ কটি কলাগাছ দিয়ে আর একটি ছোট গেট করা হয়েছিল। তার ওপরে জ্বালানো হয়েছিল অনেক মোমবাতি। ওই সুন্দর গেট দুটো পেরিয়ে আমাদের বাড়ির কাচারিঘরে বসবেন নতুন জামাই বরযাত্রীসহ। সাঁথিয়া থেকে নতুন জামাই ও বরযাত্রীদের বিয়েবাড়ি আসতে লেগেছিল ঘণ্টা তিনেক। যদিও পাবনা শহর থেকে সাঁথিয়ার দূরত্ব ২২ বা ২৮ মাইল মাত্র।

তখনকার দিনে বেড়া, নগরবাড়ী, সাঁথিয়া, আতাইকুলা রোডে সারা দিনে বিশ্বাস মোটর কোম্পানির খাঁচাওলা দুটি বাস চলাচল করত। সাঁথিয়া বা আতাইকুলা থেকে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানের জন্য শহরে এসে বাস ভাড়া করতে হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশের পরিত্যক্ত ট্রাকগুলো কেটে বানানো হতো খাঁচাওয়ালা বাস। পাবনা শহরের পূর্বদিকের নগরবাড়ী, সাঁথিয়া, আতাইকুলায় দূরত্বানুসারে ৪ আনা থেকে ১২ আনা বাস ভাড়া ছিল। শহরের পশ্চিম দিকের ঈশ্বরদীর দূরত্ব ছিল ১৬ মাইল। বাস ভাড়া ১ আনা থেকে ৮ আনা ছিল। ৮ আনার যাত্রীদের বসতে হতো বাসের পেছনে, বেঞ্চের ওপর। প্রতিটি স্টপেজের যাত্রীদের ওঠানো-নামানো হতো, যার ফলে ১৬ মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে লাগত ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। সেই দিন এখন আর নেই। নেই সেই খাঁচাওয়ালা বাস। নেই সেই আমাদের সুশোভিত কৈশোর আর কৈশোরকাল।

বরযাত্রীরা সাঁথিয়া থেকে এসেছিলেন সন্ধ্যার বেশ পরে। উৎকণ্ঠা আমারই বেশি, কেননা কলাগাছ আর দেবদারু গাছের পাতা দিয়ে যে গেট আমরা ক’ভাই-বোন বানিয়েছিলাম সেই গেট দিয়ে বর আর বরযাত্রীদের কিছুতেই কাচারিঘরে যেতে দেব না ‘গেট ধরা’র টাকা না দিলে। অথচ সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চলল, শঙ্কাটা ছিল যদি বর না আসে। শেষে এলো, তাদের আসার আগেই আমরা ভাইবোনেরা ঠিক করলাম বিয়েবাড়ির গেট ধরার জন্য আমাদের নগদ দিতে হবে ১০০ টাকা। নয় তো গেট দিয়ে যেতে দেব না। বরযাত্রীদের হাজার হাজার কথার মাঝে দেখলাম বর মুখে রুমাল দিয়ে ভোদাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মহারাজার মতো। মাথায় জরির টুপি, গায়ে শেরওয়ানি, পায়ে নতুন স্যান্ডেল। শেষমেশ বরপক্ষের একজন বললেন, প্রায় ২০-২৫ মিনিট কেচাকেচি করেছি, ঠিক আছে গেট ধরাওয়ালাদের ২০ টাকা দিতে পারি, যদি গেট ছেড়ে দেয়। আমাদের বাবা, কাকা, অগ্রজরা দূরে ছিলেন। বিতর্কের এক পর্যায়ে ১০০ টাকা থেকে নেমে এলাম ৫০ টাকায়। তখনই বরপক্ষের আরেকজন বললেন, ‘গেট ছেড়ে দিলে ৩০ টাকা দেব, তবে গেট এক্ষুনি ছেড়ে দিতে হবে। দেরি না করে রাজি হয়ে গেলাম। বরপক্ষের সেই বরযাত্রী, আমার হাতে একটি ভারী টাকার ব্যাগ তুলে দিয়ে বললেন, এই ব্যাগের ভিতরই খুচরা ৩০ টাকা আছে, হৈ হৈ করে যেন যুদ্ধে জিতে বিয়েবাড়ির গেট ছেড়ে দিলাম। রীনাবুর বিয়ে পড়ালেন মৌলানা মহিউদ্দিন আহমদ মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে। এক ফাঁকে মেজ কাকার ছেলে বাবলুকে বললাম, ভালো করে গুনে দেখত সত্যই ৩০ টাকা দিয়েছে কিনা, নাকি শালারা কম দিয়েছে। গুনতে গিয়ে পাওয়া গেল খাঁটি চান্দির ১ টাকার দুটো কয়েন, ৮ আনা, ৪ আনা, ২ আনা, ১ আনা, ২ পয়সা এবং ১ পয়সার ছিদ্রওয়ালা গোটা দশেক কয়েন। অতগুলো খুচরা কয়েন গোনা শেষে দেখা গেল, আমাদের গেট ধরার জন্য ওই ২০ টাকাই দিয়েছে। আমরা ক’ভাই ওই শালা বরযাত্রীকে ইচ্ছামতো অভিশাপ দিলাম। সঙ্গে রাগে দুঃখে আমার শরীর পুড়ে যেতে লাগল। ঠিক তক্ষুনি সিদ্ধান্ত নিলাম বাসরঘরের ফুলশয্যায় নতুন ভগ্নিপতি ঢোকার পরে দরজা-জানালা বন্ধ করার ঘণ্টাখানেক পরে, আমরা কখনো ভূতের মতো নাকি সুরে বলব ১০ টাকা দে, ১০ টাকা দে, আবার কখনো দরজা-জানালায় টোকা দিতে দিতে বলব, রাক্ষুসের মতো, মানুষের গন্ধ পাই, যেন ফুলশয্যার বাসরঘরটা কণ্টকশয্যা হয়ে যায়। নতুন ভগ্নিপতি যেন সারা রাত ঘুমাতে না পারেন।

এখনো মনে আছে, ১৯৫৯ সালে, রীনাবুর সেই বিয়েতে বরপক্ষ একটি ছাপানো উপহার বা কবিতা আমাদের বাড়িতে ওরাই প্রথম এনেছিলেন। অথচ এর বহু আগে অন্য বোনদের বিয়েতে কোনো বরপক্ষই উপহার বা কবিতা ছাপিয়ে আনেননি। এবারের বিয়েতে বরপক্ষের সেই ছন্দবদ্ধ কবিতার ভিতরে বার বার কামনা করা হয়েছিল নতুন বউমা যেন শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর, ননদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকেন। বয়োজ্যেষ্ঠদের যেন যথাবিহিত সম্মান করেন এবং আরও ছিল দম্পতির আজীবনের সুখ-শান্তির কামনা, সংসার জীবনে যেন ওরা সুখী হয়।

আজকাল কি ওই ধরনের উপদেশমূলক উপহার বা কবিতা কোনো বিয়েবাড়িতে বরপক্ষ নিয়ে যায়? বোধহয় না, আমাদের রীনাবুর রাধানগরের বাড়িতে, ভগ্নিপতি আবদুল ওয়াজেদ, সেই উপহারটি খুবই যত্ন করে বাঁধিয়ে রেখেছিলেন। আমি রীনাবুর বাড়িতে গিয়ে সেই উপহারটি মনোযোগসহকারে পড়তাম, আর ভাবতাম এত সুন্দর করে কবিতায় উপদেশ— সংসার জীবনের খুঁটিনাটি যে কবি তুলে ধরেছেন, তিনিই যথার্থ কবি। সেই উপহার কবিতাটিসহ বাড়িটি পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি মিলিটারিরা, ১৯৭১ সালের এপ্রিলে।

আজকাল সেই উপহার, কবিতা নেই, ফুলশয্যার রাত, বাসরঘর থাকলেও সকালবেলা হয়ে যায়, শোবার ঘর। আজকাল বুঝি বাসরঘর বা ফুলশয্যার ঘর বলতে স্থায়ী কিছু নেই। বাসরঘর যেন পাওয়া একটি কবিতার ছন্দ, সেই ছন্দের গভীরে হঠাৎ পাওয়া একটি ফুলশয্যার রাত, সেই রাতের অতিথি ‘দণ্ড দুয়েকের তরে’, অনেকের মতো আমি আপনি সবারই রাত পোহালেই বাসরঘর পালিয়ে যায়। যেমন গেছে আমাদের শৈশব, কৈশোর, যেমন গেছে অফুরন্ত বৃষ্টি বাদল, যেমন গেছে আমার মুমু, জেসমিন, শামীমা এবং ফিলিপিনো, সুশ্রী, শিক্ষিত, মীয়মা জিন অ্যাবোন, ওরা কেউ নেই, আছে হাহাকার। নেই সেই ফুলশয্যার রাত। বাসরঘর, জীবনে আর দ্বিতীয়বার ফিরে আসবে না জেনেই, ভাবী— একদা আমার জীবনেও একটি বাসর, একটি ফুলশয্যার রাত এসেছিল।

     লেখক : কবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর