শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ নির্মূলে ট্রাম্পের নতুন কৌশল

মেজর জেনারেল মো. আব্দুর রশীদ (অব.)

জঙ্গিবাদ নির্মূলে ট্রাম্পের নতুন কৌশল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র বিষয়ে অনভিজ্ঞ বলে পরিচিতি থাকলেও পররাষ্ট্র নীতিতে নতুন চমক দেখাতে ৮ দিনে পাঁচ দেশ সফর করেছেন। প্রথম গন্তব্য হিসেবে সংঘাতে জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী সুন্নি মুসলিম রাজতন্ত্র সৌদি আরবকে বেছে নেওয়ার কারণ খুঁজছেন বিশ্লেষকরা।  তার সফরে ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্টীয় ধর্মের পীঠস্থান সৌদি আরব, ইসরায়েল ও ভ্যাটিকান সিটি অন্তর্ভুক্ত থাকায় আন্তঃধর্মীয় বিদ্বেষ দূর করে সম্প্রীতি তৈরির বার্তা ছড়িয়েছেন। ট্রাম্পের ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য এবং ছয়টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি মুসলিম বিশ্বে তার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে। ইসলাম, খ্রিস্টীয় ও ইহুদি ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা গড়ে চমক দেওয়ার চেষ্টারত ট্রাম্প। ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের রাশিয়া সংশ্লিষ্টতা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে শুনানি শুরুর পর থেকে তার অবস্থান কিছুটা হলেও টালমাটাল হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে গোপন গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করার অভিযোগ যুক্ত হলে পরিবেশ তেতে ওঠে এবং এফবিআই-প্রধান জেমস কমির বরখাস্ত থেকে সৃষ্ট উথাল পাথাল অবস্থার মধ্যেই বিদেশ সফরে বের হয়ে আসেন ট্রাম্প। বিদেশে মার্কিন ভাবমূর্তি উদ্ধার, বিশ্বে মার্কিন নেতৃত্বের গতি ফেরানো এবং জঙ্গিবাদের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম হলে দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়ায় জনসমর্থন মিলবে, ফলে খাদ থেকে উঠে আসার সিঁড়ি তৈরি হবে।

নতুন ট্রাম্পীয় কৌশলে জঙ্গিবাদ দমন মূল এজেন্ডা হলেও ইরানবিরোধী নিরাপত্তাবলয় তৈরি ও বিশাল অস্ত্রবাণিজ্যের অস্তিত্ব দেখা গেছে। তেল সম্পদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নতুন অর্থনীতি বিনির্মাণে সৌদি আরব ভিশন-২০৩০ তৈরি করেছে। ইরানের অব্যাহত আধিপত্য বৃদ্ধিতে সৌদি আরব উদ্বিগ্ন। বারাক ওবামা প্রশাসন পারমাণবিক চুক্তির নামে ইরানের সঙ্গে মাখামাখি করে সৌদি আরবকে বেকায়দায় ফেলেছিল। ট্রাম্পের ইরানবিরোধী প্রকাশ্য নীতি এবং সৌদির সঙ্গে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি ও মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি সামরিক সক্ষমতার পাল্লা ভারী করতে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি নতুন উত্তেজনার জন্ম দেবে।

ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে ইসলামিক স্টেট নামের খেলাফতের বিরুদ্ধে ইরানের হিযবুল্লাহ বাহিনীর লড়াইয়ে সরাসরি অংশ নেওয়া এবং সিরীয় সরকারের পক্ষে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কৌশলকে বিপর্যস্ত করলেও ইয়েমেনে হাওথি বিদ্রোহীদের পক্ষে ইরানের সমর্থন সৌদি আরবের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ট্রাম্পের সঙ্গে কৌশলপত্র স্বাক্ষরের মাধ্যমে সৌদি আরব তার পুরনো বন্ধুকে ফিরে পেল। বিনিময়ে সৌদি আরবকে কট্টর ইসলামী সংস্কৃতির সংস্কার করতে হচ্ছে। উপসাগরীয় ছয়টি দেশের জোট জিসিসিকে সৌদি আরবের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে মার্কিন প্রয়াস সৌদি বাদশার জন্য নতুন স্বস্তির ঠিকানা তৈরি করল। 

লিভ্যান্ট অঞ্চলের ইসলামিক স্টেট নামের কট্টর সুন্নি জঙ্গিদের আদর্শিক ভিত্তি ওহাবি মতবাদ মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। জিহাদি ইসলাম বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ঝাঁকি দিয়েছে। মুসলিম বিশ্বকে বাদ দিয়ে জঙ্গি মতাদর্শ নির্মূল করা যাবে না। ইসলামের পীঠস্থান সৌদি আরবকে সামনে রেখে মুসলিম দেশগুলোকে একীভূত করে জঙ্গি নির্মূলের সামরিক ও আদর্শিক কৌশল বিনির্মাণে ট্রাম্পের এ সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল আলোচিত অংশ ছিল আরব ইসলামিক আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলন। সৌদি আরবের আহ্বানে বিশ্বের ৫০টির বেশি মুসলিম রাষ্ট্রের নেতারা রিয়াদে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেন।

মুসলিম বিদ্বেষ তুঙ্গে উঠিয়ে ভোটের বাক্স ভর্তি করে ক্ষমতায় বসেই ট্রাম্প ছয়টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকার প্রবেশ বন্ধের আদেশ জারি করেন। তারপর কোনোরকম নীতিগত পরিবর্তনের ঘোষণা ছাড়াই মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে মার্কিন গাঁটছড়া বাঁধার উদ্যোগে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব ইসলামিক আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প ইসলামী জঙ্গিবাদকে ইসলাম ও পশ্চিমা বিশ্বের লড়াই না বলে শুভ ও অশুভের লড়াই বলে চিহ্নিত করেছেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সন্ত্রাসবিরোধী ইসলামী সামরিক জোটের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশসহ ৩৪টি সুন্নি অধ্যুষিত দেশ জোটে যুক্ত হয়। পরে দেশের সংখ্যা বেড়ে ৪১ এ উন্নীত হয়। যদিও বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া জোটের সামরিক অংশে থাকবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহুল শরীফকে সামরিক জোটের কমান্ডার ইন চিফ পদে নিযুক্ত করা হলে জোটের জঙ্গিবিরোধী চরিত্রে কালি লাগে। দক্ষিণ এশিয়ার জঙ্গি ভরকেন্দ্র হিসেবে পাকিস্তান সুপরিচিত। পররাষ্ট্র নীতির হাতিয়ার হিসেবে জঙ্গি সংগঠনের পাকিস্তানি চর্চার শিকার ভারত, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ। সৌদি নেতৃত্বের ইসলামী সামরিক জোটে শিয়া শাসিত ইরাক, সিরিয়া ও ইরানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ইরান ও সিরিয়ার পেছনে রাশিয়া প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে আছে এবং চীন অলক্ষ্যে শক্তি জোগাচ্ছে। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও সৌদি বাদশার বক্তব্য জোটের মূলমন্ত্র সন্ত্রাস দমনকে আড়ালে পাঠিয়ে ইরানবিরোধী ঐক্য বানিয়ে ফেলেছে। ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে সমান বন্ধুত্ব রয়েছে বাংলাদেশসহ অনেক মুসলিম দেশের। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতার গুরুত্ব বিবেচনায় অনেক দেশই ইসলামী সামরিক জোটের ইরানবিরোধী এজেন্ডা এড়িয়ে জোটের মধ্যে থেকেও কৌশলী অবস্থান ধরবে।

আঞ্চলিক সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা রয়েছে। ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার সন্ত্রাস সারা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরানকে সন্ত্রাস বিস্তারের মধ্যমণি বানিয়ে ইয়েমেন, সিরিয়া ও লেবাননে হিজবুল্লাহ মিলিশিয়াকে দমনের স্কিমে ইসলামী জোটকে ব্যবহারের চেষ্টা অনেকটাই দৃশ্যমান, যা জোটের সংহতিকে দুর্বল করেছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বে সৌদি আরব আহরণ করতে সচেষ্ট এবং ইরানকে একঘরে করার কৌশলে মার্কিন সমর্থন ভূ-রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল। ১১০ বিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক মার্কিনি অস্ত্র ইরানের বিপক্ষে সৌদি আরবকে যেমন নতুন সামরিক প্রাধান্য তৈরি করবে তেমনি বিরাজমান ইসরায়েলি সামরিক প্রাধান্যকে খর্ব করবে। ইসরায়েল ও সৌদি আরবের একমাত্র শত্রু হিসেবে ইরান আবর্তিত হচ্ছে। ট্রাম্পীয় জাদুর পরশে আরব-ইসরায়েলের চির বৈরিতা বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে। ফিলিস্তিনি সমস্যার সমাধান ব্যতিরেকে মুসলিম বিশ্বের নিরঙ্কুশ সমর্থন আদায় দুষ্কর সেটা অনুধাবন করে ট্রাম্প বন্ধ থাকা শান্তি প্রক্রিয়াকে আবার শুরু করতে চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই উপলব্ধি করেছেন ফিলিস্তিনি সংঘাত জিইয়ে রেখে বিশ্ব নিরাপত্তা এবং মার্কিনিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ইসরায়েলবিরোধী আরব ঐক্য চুরমার করে ইরানের বিরুদ্ধে আরব-ইসরায়েলি ঐক্যের পথে হাঁটছেন ট্রাম্প। যত যুদ্ধ তত সন্ত্রাস। ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরব বিশ্ব সন্ত্রাস ও গোষ্ঠীগত বিবাদে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে ভঙ্গুরতায় ভুগছে। চলমান সংঘাতে নিরীহ মানুষের ব্যাপক প্রাণহানি, অনাহার, রোগাক্রান্তি ও বাস্তুচ্যুতি পৃথিবীর স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। অধিকারবঞ্চিত ফিলিস্তিন, ইসরায়েলি বর্বরতা, আগ্রাসন, ইরাক-সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের আধিপত্য, তুরস্ক-কুর্দি কলহ, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হটানোর পশ্চিমা স্কিম ও আসাদবিরোধী বাহিনীকে সুরক্ষা দেওয়া, সিরীয় সরকারকে টিকিয়ে রাখতে এবং আইএস নিধন যুদ্ধে ইরান ও রাশিয়ার সরাসরি জড়িয়ে পড়া, ইরান সমর্থিত হাউথিবিরোধী যুদ্ধে সৌদি আরবের আটকে পড়া সব মিলিয়ে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে উদগীরণ শুরু হয়ে বিস্ফোরণোন্মুখ করেছে মধ্যপ্রাচ্যকে। ট্রাম্পের বিদেশ সফরের প্রথম গন্তব্য রিয়াদ হওয়ায় সৌদি আরব উত্ফুল্ল। ট্রাম্পের ইরানবিরোধী মনোভাবের স্পষ্টতা, ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত বহুপাক্ষিক পারমাণবিক চুক্তির অবমূল্যায়ন এবং আইএসের পাশাপাশি ইরান সমর্থিত বাহিনীগুলোকে সন্ত্রাসী চিহ্নিত করে ইরানকে সন্ত্রাস বিস্তারের হোতা বানিয়ে শায়েস্তা করার লক্ষ্যে সৌদি আরবের মতো ঐতিহ্যগত অংশীদারদের গুরুত্ব দেওয়ায় উপসাগরীয় দেশগুলোতে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি সম্পাদনের বিনিময়ে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার ফলে ইরান শক্তিধর হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে বেশি নাক গলাচ্ছে এবং সৌদি স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করে বেকায়দায় ঠেলে দিয়েছে। মার্কিনিদের ইরানঘেঁষা নীতি সৌদিকে আরও বন্ধুহীন করে ফেলেছিল, যা ট্র্যাম্প ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বিনিময়ে সৌদি আরবকে কট্টর ইসলামী সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে নমনীয় কৃষ্টি চালু করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। জিহাদি ইসলামের সুতিকাগার হয়েও ইসলামী উগ্রবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। উগ্র ইসলামী সংগঠনগুলোকে অর্থ সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। অতীতে সৌদি রাজতন্ত্র কট্টর ইসলামী ওহাবি ভাবধারাকে ধারণ ও বিস্তার ঘটিয়ে রাজতন্ত্রের নিরাপত্তা খুঁজতে চেষ্টা করেছিল। জামায়াতে ইসলামীর মতো বিশ্বের কট্টর ইসলামবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে নৈকট্য, পশ্চিমা বিশ্বের নরমপন্থি মুসলিমদের বেশি কট্টর বানিয়ে ফেলার পেছনে সৌদি আরবের ধর্মান্ধকরণ ইসলামী উদ্যোগ সক্রিয় ছিল। ফলে বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদী মতাদর্শের অনুসারী বেড়েছে সঙ্গে জঙ্গি হামলার ঝুঁকিও বেড়েছে সমান তালে। আগামী দিনগুলোতে ইসলামবাদীদের সঙ্গে সৌদি সখ্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইসলামী চ্যারিটির নামে অর্থ চলাচলের পরিমাণও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। 

জঙ্গিবিরোধী মুসলিম জোটের নেতা হওয়ার বাসনা সৌদি আরব অনেক দিন থেকে পুশে রেখেছে। কিন্তু কট্টর ইসলামের ধারক হিসেবে চিহ্নিত এবং ইসলামিক স্টেটের চালিকা ভাবাদর্শের পীঠস্থান হিসেবে জঙ্গিবিরোধী অবস্থানের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব কাঁধে রয়েছে। ইসলামী ধর্মান্ধতা বিস্তারে অনেক বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ মাথায় নিয়ে সন্ত্রাস নির্মূলে নেতৃত্ব দেওয়া সৌদি আরবের জন্য সহজসাধ্য হবে না। পাকিস্তানের মতো জঙ্গি খেলোয়াড় সঙ্গে থাকলে জঙ্গি নিধন হবে নাকি আড়ালে জঙ্গি লালন হবে তার নিশ্চয়তা দৃশ্যমান না করতে পারলে জোটে আস্থার সংকট থেকেই যাবে। বাংলাদেশের মতো জঙ্গিবাদের প্রতি শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অবগাহনে থাকা মুসলিম দেশের নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনতে হবে। জঙ্গিদের গোপন ও প্রকাশ্য লালনকারীদের বিরত করতে মুসলিম দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে এগোতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জঙ্গিবিরোধী কৌশল যেমন সার্থকতার মুখ দেখেছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চার মূল নীতি ও নমনীয় সমাজ বিনির্মাণে মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান জঙ্গিবিরোধী কৌশলের স্তম্ভ হিসেবে কাজ করতে পারে। আরব ইসলামিক আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে জঙ্গিবিরোধী বিশ্ব উদ্যোগে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ যৌক্তিক এবং জাতীয় সার্থকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিঃসন্দেহে আরও প্রসারিত করেছে।

ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে গোলমাল থাকলেও পররাষ্ট্র নীতির নমনীয় বিকল্প হিসেবে সৌদি আরবের উদ্যোগে বাংলাদেশের সমর্থন অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ঘটালে জোটে থাকার সিদ্ধান্তকে বিচক্ষণ ও যৌক্তিক বলে মানতে বাধা নেই। ধর্মান্ধকরণের পৃৃষ্ঠপোষকরা পিছুটান দিলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি কমে আসবে।  পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম এবং জাতীয় স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার চৌকস কৌশল নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে। রাশিয়া, চীন ও ইরানের বন্ধুত্বকে ধরে রেখেই সামরিক জোটে কৌশলী ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ।

ট্রাম্পের নীতির স্থায়িত্ব নিয়ে অনেক সন্দেহ থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের জটিল পরিবেশে দেশীয় স্বার্থ, আঞ্চলিক স্বার্থ ও বৈশ্বিক স্বার্থের নির্মোহ সম্মিলন না হলে ট্রাম্পীয় কৌশল কাজে আসবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।  আঞ্চলিক সংঘাতে অঞ্চলের বাইরের দেশগুলোকে সামরিক জোটের নামে যুদ্ধে নামানো সহজ হবে না। ভালো জঙ্গির লালন বনাম মন্দ জঙ্গি দমনের মন ভোলানো কৌশল কাজে আসবে না যতক্ষণ না নিরীহ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং নির্মোহভাবে জঙ্গি নিধনের কৌশল বিনির্মিত হবে।

লেখক : স্ট্র্যাটেজি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক। ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস (আই ক্লাডস)-এর নির্বাহী পরিচালক।

সর্বশেষ খবর