মমতা মানে মায়া। বাংলা অভিধানে মমতা শব্দের প্রতি শব্দ হিসেবে নরম হওয়া, আর্দ্রচিত্ত হওয়া, কোমল হওয়া, স্নেহ দরদের অধিকারী হওয়া ইত্যাদি অনেক আশাব্যঞ্জক প্রতিশব্দ রয়েছে। পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নামের সঙ্গে তার ব্যক্তিচরিত্র এবং আচরণের মিল খুঁজে পাওয়া প্রায়শই কঠিন হয়ে পড়ে। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে মমতা ব্যানার্জি যে বাগড়া দিয়েছেন তা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে ইহজনমেও ভোলা সম্ভব নয়। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করবেন তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায় কুমারী মমতা ব্যানার্জি বেঁকে বসায়। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও একই অবস্থায় পড়তে হয়েছে। প্রতিবেশী ভাটির দেশের পানি প্রাপ্তির ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে দ্বিমত না থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বাগড়ায় তাকেও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বেগ পেতে হচ্ছে। অতি সম্প্রতি মমতা অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ আত্রাই নদীতে বাঁধ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে পানি প্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। পুনর্ভবা নদীর পানি থেকে পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করার শোরও তুলেছেন তিনি। তার সাম্প্রতিক আবিষ্কার বাংলাদেশে মাথাভাঙ্গা নদী দূষণের শিকার হওয়ায় ভারতের নদীয়ায় চুনি নদীও বিপন্ন হয়ে পড়ছে। কারণ মাথাভাঙ্গা নদী ভারতের ঢুকেছে চুনি নামে। মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যে যে অনুদারতার প্রকাশ ঘটেছে তা তার মমতা নামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আত্রাই, পুনর্ভবা ও মাথাভাঙ্গা তিনটিই ছোট নদী। প্রথমোক্ত দুটি নদী শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটের শিকার হয়। মাথাভাঙ্গায় দূষিত পদার্থ ফেলার অভিযোগও উদার কল্পনার শামিল। ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪। আত্রাই নদীতে বাঁধ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে পানি থেকে বঞ্চিত করার যে কল্পিত অভিযোগ মমতা করেছেন তা প্রকারান্তরে নিজেদের পাপ ঢাকারই অপচেষ্টা। আমরা চাই ৫৪ নদীর উজানে সব বাঁধ ভেঙে দেওয়া হোক। ভাটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের যার যেখানে অবস্থান পানি পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হোক। আত্রাই পুনর্ভবা শুধু নয়, গঙ্গা, তিস্তাসহ সব নদীর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হোক। মমতা এমন প্রস্তাবে সায় দিয়ে তার নিজের নামের প্রতি সুবিচার করবেন—এমনটিও প্রত্যাশিত।