শুক্রবার, ৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

একনিষ্ঠ ইবাদত আল্লাহর মেহমান বানায়

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

একনিষ্ঠ ইবাদত আল্লাহর মেহমান বানায়

আল্লাহকে রাজি-খুশি করে পরকালে অনাবিল শান্তির জায়গা জান্নাত পাওয়ার জন্য ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির লক্ষ্যে যেই কাজটি করা হয় তাকেই মূলত ইবাদত বলে। এ ইবাদত করতে হবে একনিষ্ঠভাবে অবিচলতার সঙ্গে একমাত্র আল্লাহর জন্য।  তাতে কোনোভাবেই গাইরুল্লাহকে শরিক করা যাবে না। বান্দা যখন একনিষ্ঠভাবে অটল ও অবিচলতার সঙ্গে এক আল্লাহর ইবাদত করে তখন আল্লাহপাক তাকে প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল করেন। মুখলেস বান্দার ইন্তেকালের পর আল্লাহপাক তার আরাম-আয়েশের জন্য জান্নাতকে প্রস্তুত রাখেন। যেন সে একজন সম্মানিত মেহমান। মেহমানের সার্বিক আরামের প্রতি যেভাবে মেজবান খেয়াল রাখেন। অনুরূপ আল্লাহপাক একনিষ্ঠভাবে ইবাদতকারীদের জন্য আপ্যায়নস্বরূপ জান্নাতকে প্রস্তুত রাখেন। তার সার্বিক আরামের প্রতি খেয়াল রাখেন। সেখানে মেহমান শুধু আরাম আর আরাম ভোগ করবে। একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করার মাস হলো মাহে রমজান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। (সূরাতুল বাকারা : ১৮৫)। একনিষ্ঠভাবে অবিচলতার সঙ্গে ইবাদত বন্দেগী করা সম্পর্কে আল্লাহপাকের ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা (আন্তরিকভাবে) অঙ্গীকার করে যে, আল্লাহ আমাদের রব এবং তারা এ কথার ওপর অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা এসে বলতে থাকে, ভয় কর না, দুশ্চিন্তা কর না, আর সেই জান্নাতের সুখবর গ্রহণ কর, যার ওয়াদা তোমাদের কাছে করা হয়েছে। আমি এ দুনিয়ার জীবনেও তোমাদের বন্ধু আর পরকালেও।

 

 

সেখানে (জান্নাতে) আমাদের মন যা আকাঙ্ক্ষা করবে এবং যা কিছু চাইবে তা সবই পাবে। এসব সেই আল্লাহর তরফ থেকে মেহমানদারি হিসেবে পাবে যিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অতি দয়াবান।’ (সূরা হা-মীম-আস-সিজদাহ : ৩০-৩২)। অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা বলে, আল্লাহ আমাদের রব এবং তারা এ কথার ওপর অবিচল থাকে, তাদের কোনো ভয়ও নেই, তারা দুশ্চিন্তাও করবে না। তারাই দুনিয়ায় যে কাজ করছিল তার পরিণামে জান্নাতবাসী হয়ে চিরকাল সেখানে থাকবে। (সূরা আহ্কাফ : ১৩-১৪)। তাফসিরে কাশশাফে রয়েছে, ‘যারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া কোনোই উপায় নেই। আমার বলতে কিছুই নেই, সবই তার কর্তৃত্বাধীন। তার রহমত ব্যতিরেকে আমি একটি শ্বাসও ছাড়তে পারি না।’ এ কথাটির একমাত্র দাবি হলো মানুষ আল্লাহর ইবাদতে অটল-অবিচল থাকবে এবং মানুষের মনমানসিকতা বিন্দুমাত্রও আল্লাহর ইবাদত থেকে বিচ্যুত হবে না। কারণ আমাদের বুঝতে হবে এ দুনিয়া হলো পরীক্ষার জায়গা। আল্লাহপাক এখানে বিভিন্নভাবে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করবেন এমনটিই স্বাভাবিক। পরীক্ষা ছাড়া কোনো দিনই খাঁটি জিনিস জানা যায় না। তিনি মানুষকে আরাম-বেরাম দিয়ে, রোগ-বিরোগ দিয়ে, ধনি-গরিব বানিয়ে পরীক্ষা করেন। এ পরীক্ষার মধ্যে আল্লাহর ইবাদতে অটল-অবিচল থেকে যে ব্যক্তি ইবাদতে মন লাগাতে পারে সেই মূলত সফল এক ব্যক্তি। আমরা যদি আম্বিয়ায়ে কেরামের পর, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবেতাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহেদীন, হক্কানী পীর আওলাদের ইবাদতের প্রতি লক্ষ করি তাহলে বিনা বাক্যে বলতে হবে যে, তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়েছেন আল্লাহর ওপর ইয়াকিন-বিশ্বাস এবং ইবাদতে অটল-অবিচলতার কারণেই। মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এসেছে, হজরত সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি আমাকে ইসলামের ব্যাপারে এমন কিছু কথা বলে দিন যেন আপনি ছাড়া অন্য কাউকে আর সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে না হয়। তিনি বললেন, ‘বল আমি আল্লাহর ওপর ইমান এনেছি তারপর এ কথার ওপর অবিচল থাক।’ অর্থাৎ মুসলমান হওয়ার পর ইবাদতে সবসময় নিজেকে আবদ্ধ রাখ। ইবাদতে নিজেকে আবদ্ধ রাখার সময় হলো বালেগ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। যেমনটি পবিত্র কোরআনে সূরা হিজরের ৯৯নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘এবং পালনকর্তার এবাদত করুন, যে পর্যন্ত আপনার কাছে নিশ্চিত কথা (মৃত্যু) না আসে।’ অনেকে মনে করেন বয়স হলে নামাজ পড়লে চলবে। অনেকে মনে করে শেষ বয়সে বাইতুল্লাহ শরিফের হজ করে খাঁটি মুসলমান হয়ে যাব। তার কর্ম দেখলে মনে হয় তার হায়াত তার আয়ত্তে। যেখানে এক সেকেন্ডের কোনো ভরসা নেই সেখানে তিনি শেষ বয়সের ওপর নির্ভর করে বসে আছেন। অথচ সাহাবায়ে কেরামগণ রসুল (সা.)কে জিজ্ঞেস করে আমল জেনে নিতেন এবং সেই আমলের ওপর অটল-অবিচল থাকতেন যা আলোচ্য হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম। প্রিয় পাঠক! মাহে রমজানের রোজা আমরা রাখছি। এই মাসকে আমরা গণিমত মনে করি। এই মাসে আমরা যাতে সঠিকভাবে রোজা, তারাবিসহ যাবতীয় ইবাদত আদায় করতে পারি তার জন্য আমাদের ইবাদতের ওপর অটল থাকতে হবে। যেমন একজন ব্যবসায়ী তার ব্যবসার সিজনকে সঠিকভাবে কাজে লাগায়, হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে। কেন এত পরিশ্রম? তার বিশ্বাস আছে এ সিজনের এক মিনিটও যদি নষ্ট হয় তাহলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। অনুরূপ একজন মুমিন-মুসলমানের জন্যও পবিত্র মাহে রমজান মহামূল্যবান সম্পদ।  এক মিনিটও যাতে নষ্ট না হয় এর জন্য আমাদের অটল থাকতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের ইবাদতে অটল-অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন।  আমিন লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর