শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

চিঠিটা এলো সাড়ে পাঁচটায়

সমরেশ মজুমদার

চিঠিটা এলো সাড়ে পাঁচটায়

এম এ পড়ার সময় বন্ধুদের কাছে খবর পেয়ে একটা চাকরির জন্য আয়কর দফতরে আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলাম। তখন কম্পিউটার ছিল না, টাইপ করেও নয়, স্রেফ হাতে লিখে আবেদনপত্রটা আয়কর ভবনের একটা বাক্সে ফেলে এসেছিলাম কয়েকজন। তারপর ওটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। পরীক্ষার দু-সপ্তাহ আগে ডাক এলো, গিয়ে ওদের কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আমাদের কয়েকজন সাধারণ জ্ঞানের বই মুখস্থ করল। আমার তখন পালি এবং প্রাকৃত নিয়ে যতটা সমস্যা ততটা ভাষাতত্ত্ব নিয়ে। এম এ পরীক্ষার ওই পেপার পাস করতে হবেই অথচ দুবছরে কিছুই পড়িনি। যিনি পড়াতেন তাকে একটুও পছন্দ হতো না।

অতএব কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলাম। তারা আমার স্কুল এবং কলেজের রেজাল্টগুলো দেখলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর নাম কী?’ উত্তরটা ঠিক দিয়েছিলাম। হাত নেড়ে একজন আমাকে বলেছিলেন, ‘যেতে পারেন’।

বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম তাদের সাত-আটটা প্রশ্ন করা হয়েছিল। অতএব ধরে নিয়েছিলাম আমার চাকরিটা হচ্ছে না। এম এ পড়তে পড়তেই সুব্রত ভট্টাচার্য, হরেন মল্লিকের সঙ্গে নাটকের দল তৈরি করে নতুন কিছু করার নেশায় ডুবে গেলাম। রেজাল্ট বের হওয়ার পর দুটো কাণ্ড ঘটল। এক. বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে পনেরো দিনের মধ্যে আমাকে চলে যেতে হবে। প্রাক্তনদের হোস্টেলে থাকার নিয়ম নেই। দুই. জলপাইগুড়ি থেকে পিতৃদেব লিখলেন, উত্তর বাংলায় দুটো কলেজে আমার চাকরি হতে পারে। অবিলম্বে যেন চলে আসি। কিন্তু আমার মন কলকাতা ছেড়ে যেতে চাইছিল না। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, কলকাতা ছেড়ে গেলে এ জীবনে আর নাটক করা হবে না। আমাকে বছরের পর বছর ছাত্রদের একই বিষয় পড়িয়ে যেতে হবে। আমি বিদ্রোহ করতেই পিতৃদেব জানিয়ে দিলেন আর তিনি আমাকে মাসোহারা পাঠাবেন না।

এ রকম সময় যখন আমার অবস্থা সেই শয়নং যত্রতত্র তখন হোস্টেলের দারোয়ানের সঙ্গে হঠাৎ দেখায় জানতে পারলাম আয়কর দফতর থেকে একটা চিঠি এসেছে। অবাক হয়ে সেই চিঠি খুলে দেখলাম আমাকে চাকরিটা দেওয়া হয়েছে। মাইনে সাকুল্যে দুশো আটাশ টাকা আট আনা। কিন্তু আমার চাকরি পাকা হবে পুলিশের রিপোর্ট পাওয়ার পর। সে সময় ওই টাকা পাওয়া প্রায় স্বপ্নের মতো ছিল। ঠনঠনে কালীবাড়ির পেছনে একটি ঘরভাড়া করেছিলাম তিরিশ টাকায়। অফিসে জয়েন করে নাটক করার উৎসাহ বেড়ে গেল। দফতরে গিয়ে আমাকে একটা খাতায় চালানের নাম আর টাকার অঙ্ক এন্ট্রি করতে হতো। কাজটা মামুলি। কিন্তু তৃতীয় দিনে সেকশনের যিনি চার্জে ছিলেন তিনি একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা তোমার।’

‘কী ব্যাপার?’

‘সবাই পেয়ে থাকে। তুমি কেন বাদ যাবে। ক্লায়েন্ট দিয়ে গিয়েছে।’

বুঝলাম। খুব খারাপ লাগল। ভাবলাম গালাগালি দিই। শেষতক সামলে নিলাম। বললাম, ‘আপনারাই ওটা নিয়ে নিন।’

রিহার্সালে গিয়ে ব্যাপারটা বলতেই হরেন বলেছিল, ‘খামটা ফিরিয়ে দিয়ে তুই যদি ভাবিস মহৎ কাজ করেছিস তাহলে তোর মতো মূর্খ আর কেউ নেই। এখন থেকে তোর নাম করে টাকা নিয়ে ওরা এনজয় করবে।’

‘আশ্চর্য! টাকাটা ওরা কেন পাচ্ছে বুঝতে পারছিস?’

‘জলের মতো সোজা। তোর সততা যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় নিজের জন্য নিবি না, গরিবদের জন্য যারা কাজ করেন তাদের দিয়ে দিবি।’ হরেন বলেছিল।

একবার ফিরিয়ে দেওয়ার পর ওরা যেমন আর অনুরোধ করেনি তেমনি আমার পক্ষে আর মুখ ফুটে চাওয়া হয়নি।

শনিবার ছুটি থাকত। বেলা ১০টা পর্যন্ত ঘুমাতাম। তারপর কফি হাউস, নাটকের দলে সময় কাটানো। নতুন নাটক খোঁজা। তখন এক টাকা বারো আনায় মাংস আর রুটি খাওয়া যেত। ডিম তরকারি ভাত পাঁচ সিকেতে।

এক শনিবার স্নান সেরে বাড়ি থেকে বের হচ্ছি, এ সময় একটা লোক এসে নাম জিজ্ঞাসা করে জানাল থানার সেকেন্ড অফিসার দেখা করতে বলেছেন। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কেন ভাই?’

‘জানি না। আমার সঙ্গে চলুন।’

লোকটার সঙ্গে মহাজাতি সদনের পাশে একটি সেলুনের সামনে গেলাম। লোকটি সেলুনের ভিতরে ঢুকে কথা বলে বেরিয়ে এসে আমাকে সেলুনে ঢুকতে বলল।

গিয়ে দেখলাম, একজনই খদ্দের রয়েছেন। তার দাড়ি কামানো হচ্ছে।

আমার দিকে না তাকিয়ে ভদ্রলোক বললেন, ‘সমরেশ মজুমদার?’

‘হ্যাঁ।’

‘সরকারি চাকরি করার ইচ্ছে আছে?’

‘আমি আয়কর দফতরের কর্মী।’

‘টেম্পোরারি। পুলিশ-রিপোর্ট ভালো হলে চাকরি পাকা হবে। তাই তো?’

‘হ্যাঁ।’

‘যে-সে চাকরি নয়, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের চাকরি।’

‘হ্যাঁ।’

‘কিন্তু কী করে ভালো রিপোর্ট হবে ভাই? তুমি দিঘায় গিয়ে গোপন মিটিং করেছ। সন্ত্রাসবাদের মিটিং। মিনিস্টারদের গুলি করে মারতে চাও। এ রকম লোক সরকারি চাকরি করলে দেশের বিপদ হবে, তাই না?’ লোকটি কথা বলছিলেন যখন তার দাড়ি কামানো চলছিল।

আমি প্রতিবাদ করলাম, ‘এসব আপনি কী বলছেন? আমি কখনো দিঘায় যাইনি, সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই।’

‘এসব কথা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?’

‘নিশ্চয়ই। আপনি ভুল তথ্য জানেন।’

‘আমি কে জানো?’

‘ওই লোকটা বলল থানার মেজবাবু।’

‘ঠিক আছে, ওর হাতে দুশো টাকা দিয়ে দিও। আরে তোমার পকেটে মাইনে ছাড়া ভালো টাকা আসবে। দুশো টাকা দিয়ে ওটা পাকা করো।’ কথাগুলো বলে মেজবাবু বেরিয়ে গেলেন।

দুশো টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না, ইচ্ছেও না।

আমার চাকরিপ্রাপ্তিতে পিতৃদেব খুশি হননি। বাড়ির ভাত খেয়ে শহরের কলেজে ছেলে যদি পড়ায় তাতে তিনি নিশ্চিন্ত হতেন। পিতামহ এবং বড়পিসিমা অবশ্য স্বস্তি পেয়েছিলেন। পুজো কদিন পরে। প্রথম বছরে আমি কোনো লিভ আর্ন করিনি। কিন্তু সেবার পুজো সোমবার শুরু হওয়ায় এক কি দুদিন ছুটি নিলে অনেক দিন ছুটি হয়ে যাচ্ছিল। আমি বাড়ির প্রত্যেকের জন্য পুজোর কাপড় কিনে ফেললাম। সে সময় ট্রেনের ভিড় বেশি হতো না, রিজার্ভেশনের বালাই ছিল না, বিশেষ করে শিয়ালদা-হলদিবাড়ি কামরায়।

কিন্তু মহালয়ার পরের দিন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার তার ঘরে আমায় ডেকে দুঃখ-দুঃখ মুখ করে বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না, আমি ডিউটি করতে বাধ্য হচ্ছি।’ ভদ্রলোক একটা সরকারি খাম আমার হাতে তুলে দিলেন।

খামের ভিতর থেকে চিঠিটা বের করলাম। টাইপ করা কয়েকটি লাইন। আমার চাকরি রুল ফাইভ বাই ওয়ান ধারায় টার্মিনেট করে দেওয়া হলো।

অবাক হয়ে ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘এর মানে কী?’

‘অ্যান্টি-স্টেট অ্যাকটিভিটিস যারা করে তাদের রুল ফাইভ বাই ওয়ানে ছাঁটাই করা হয়।’ ভদ্রলোক জানালেন।

‘কিন্তু আমি... !’

‘মিস্টার মজুমদার। আমাদের কারও কিছু করার নেই।’

ইউনিয়নের লোকজন এসে আমাকে যার কাছে নিয়ে গেল তার নাম মনীষী নাথ ঘোষ। মধ্য পঞ্চাশের মানুষটি তখন ইউনিয়নের সভাপতি। রোগাটে, কিন্তু মুখ-চোখে অদ্ভুত সৌম্যভাব ছিল। সব শুনে তিনি চলে গেলেন চিফ কমিশনারের ঘরে। মিনিট দশেক পরে ফিরে এসে বললেন, ‘চিফ কমিশনার বললেন, পুলিশ যদি এক মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট উইথড্র করে তাহলে তুমি চাকরি ফিরে পাবে। এক মাস পেরিয়ে গেলে তার আর কিছু করার থাকবে না। দ্যাখো ভাই, কোনো বড় পুলিশকর্তাকে ধরতে পারো কিনা। আমার তো জানাশোনা কেউ নেই।’

তিন দিন চুপচাপ ভাবলাম। চাকরি নেই কাউকে বলিনি। ঠিক করলাম যেমন কথা ছিল তেমনই জলপাইগুড়িতে যাব। চাকরি নেই শুনলে কেউ পুজোর কাপড় নিতে চাইবে না। যে ধারায় চাকরি গিয়েছে তাতে আমি আর কখনো সরকারি চাকরি পাব না। এসব বলে পুজোর সময় সবার মন খারাপ করার কী দরকার!

জলপাইগুড়িতে গেলাম। সবাই খুশি। আমিও অভিনয় করে গেলাম। মা বলল, ‘এখন থেকে প্রতি মাসে তোর বড় পিসিমার নামে কিছু টাকা পাঠাস। বেশি দিতে হবে না। কুড়িটা টাকা পাঠাস, তা হলেই উনি খুশি হবেন।’

পিতৃদেব গম্ভীর মুখে বললেন, ‘তোমার ঠাকুরদাকে কিছু টাকা প্রতি মাসে পাঠিও। তোমার জন্য উনি যা করেছেন তার কোনো তুলনা নেই।’

সবাইকে আনন্দ দিয়ে কলকাতায় ফিরে এলাম। আমার চাকরি গিয়েছে বলে এক মাসের বাড়তি মাইনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ টাকায় আমি আগামী দুই-তিন মাস কোনোমতে ম্যানেজ করতে পারব। কিন্তু তারপর?

হঠাৎ মনে পড়ল সুশীলদার কথা। সুশীল মুখোপাধ্যায় একজন প্রকাশক। ‘সংবিত্তি’ নামে কাগজ বের করেন। আমাকে খুব স্নেহ করেন। তার কাছে গিয়ে সব জানালাম। সুশীলদা আমাকে পরের দিন সকালে ওর সঙ্গে দেখা করতে বললেন।

পরের দিন যেতেই বললেন, ‘তুমি বেলা ১১টায় লর্ড সিনহা রোডের পুলিশের অফিসে গিয়ে মিস্টার এম কে বক্সির সঙ্গে দেখা কর।’

গেলাম। তিনি অত্যন্ত রুক্ষ মানুষ। বাজখাঁই গলা। অকারণে চেঁচিয়ে কথা বললেন।

আমি নাকি একজন পুলিশ অফিসারের নামে মিথ্যে অভিযোগ করছি। তার কাছে প্রমাণ আছে সমরেশ মজুমদার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র অ্যান্টি-স্টেট অ্যাকটিভিস্টদের সঙ্গে জড়িয়েছে। নানাভাবে জেরা করলেন তিনি আমাকে। তারপর বললেন, ‘যা বলার তা সুশীলবাবুকে বলব।’

বিকেলে সুশীলদার কাছে যেতেই তিনি আমাকে নিয়ে আলিপুরের একটি বাড়িতে গেলেন। গেটের গায়ে ভদ্রলোকের ডেজিগনেশন লেখা ছিল। তিনি ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসার।

ভদ্রলোককে দেখে আমার মনে হলো না তিনি পুলিশে চাকরি করেন। ছিপছিপে প্রৌঢ়ের পরনে ছিল পাজামা এবং পাঞ্জাবি। বসতে বললেন। চা খাব কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর একটা ফাইল টেবিলের ওপর রেখে বললেন, ‘এতে সমরেশ মজুমদার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার আগের বছরে ওই নামের একজন ছাত্র ছিলেন। তিনি যে জলপাইগুড়ি থেকে পড়তে আসেননি, সেখানে জন্মাননি, তা আপনার থানার সেকেন্ড অফিসার জানতেন। কিন্তু আপনার ওপর রুষ্ট হয়ে দুজনকে এক করে দিয়েছেন। এই ফাইলটি জাল। কিন্তু আমার পক্ষে যেচে কোনো রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয়। আপনি হোম সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করে তাকে বলুন, আমাদের কাছে রিপোর্ট চাইতে।

সুশীলদার অনুরোধে আনন্দবাজারের শ্রীযুক্ত বরুণ সেনগুপ্ত আমাকে নিয়ে যান হোম সেক্রেটারির কাছে। তখন হোম সেক্রেটারি ছিলেন শ্রী রথীন সেনগুপ্ত। পরে ওর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছিল। রথীনবাবু সব শোনার পর ফাইল তলব করলেন। কয়েক দিন পরে তাকে জানানো হলো, ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না, তবে যাচাই করে জানা গেছে, আগের রিপোর্টে একটু ভুল ছিল। যিনি চাকরি পেয়েছেন তিনি অন্য সমরেশ মজুমদার।

এই যে ঘটনাগুলো, এক দিনে ঘটেনি। পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করে চিফ কমিশনারকে যেদিন চিঠি দেবে সেদিনই আমার চাকরি যাওয়ার এক মাস শেষ হতে যাচ্ছে। আমি তীর্থের কাকের মতো আয়কর ভবনে অপেক্ষা করছি। একটু একটু করে পাঁচটা বেজে গেল। অফিস টাইম শেষ। চিঠিটা এলো সাড়ে পাঁচটায়। চিফ কমিশনারের অফিস থেকে জানানো হলো যেহেতু পাঁচটার পরে চিঠি এসেছে তাই এটি গ্রাহ্য হবে না। মনীষী নাথ ঘোষ খবর পেয়ে এসে সেই ‘না’-কে ‘হ্যাঁ’ করলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি চব্বিশ ঘণ্টার। রাত বারোটায় সেটা শেষ হয়। অতএব এই চিঠি বৈধ সময়ে এসেছে।

এ ঘটনার কথা সুশীলদা মনে রেখেছিলেন। যখন লেখালেখি শুরু করেছিলাম তখন একদিন বলেছিলেন, ‘ওটা নিয়ে একটা লেখা লিখে ফ্যালো।’

মনের ভিতর ঢুকে গেল কথাটা। জীবনের প্রথম উপন্যাস যখন সাগরময় ঘোষ লিখতে বললেন তখন নায়ক রাকেশের জীবনে ওই ঘটনা ঘটিয়েছিলাম। ‘দৌড়’-এ।

লেখক : কথাসাহিত্যিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর