মাহে রমজানের রোজা বা সিয়াম সাধনা একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহ মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। পবিত্র কোরআনের সূরা জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে জিন ও মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।’ পবিত্র কোরআন এবং মহানবী (সা.)-এর হাদিসে যারা আল্লাহর ইবাদত করে যারা তার প্রতি আনুগত্য পোষণ করে তাদের জন্য জান্নাতের অনন্ত সুখী জীবনের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যারা আল্লাহর প্রতি অনুগত নয়, যারা তার ইবাদতে অনাগ্রহ দেখায় কিংবা আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করে, তাদের জন্য কঠিন সাজার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘনকারীদের স্থান হবে জাহান্নামে। ইবাদত করলে বা আল্লাহর প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য পোষণ করলে জান্নাতের মোহনীয় জগতে বসবাসের নিশ্চয়তা রয়েছে। তবে বান্দার ইবাদতের লক্ষ্য কখনই নিছক জান্নাতপ্রাপ্তির প্রত্যাশা হওয়া উচিত নয়। বরং তা হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এটিই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। সিয়াম সাধনা বা রোজা পালনের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় হলে চলবে না। সূরা আনআমের ১৬২ নম্বর আয়াতে উৎসর্গিত মনোভাব কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। ওই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর জন্য যিনি সমগ্র বিশ্বজাহানের মালিক’। রোজা পালনের উদ্দেশ্যও অভিন্ন। আল্লাহপাক নিজেই বলেছেন তার উদ্দেশ্যে মানুষ পানাহার ও লোভনীয় বস্তু ত্যাগ করে। অতএব রোজার পুরস্কার বিশেষভাবে তিনিই দান করবেন। এ পুরস্কার লাভে আমাদের সদা তৎপর থাকতে হবে।

জিন ও মানুষ আল্লাহর উপাসনা করে। ইবাদত করে। অথচ এ ইবাদত করা না করার মধ্যে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। তিনি মানুষ বা জিনসহ কারোর ইবাদতের মুখাপেক্ষী নন। তবে মানুষ বা জিন ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান করতে পারে। যেহেতু মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত করা সেহেতু সেটি পূরণের মাধ্যমে তারা নিজের কৃতজ্ঞতা তথা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরিচয় দিতে পারে। এ কারণে হজরত আলী (রা.) বলতেন হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ভয়ে বা জান্নাতের লোভে তোমার ইবাদত করি না— আমি তোমার ইবাদত করি কারণ তুমি ইবাদতের যোগ্য। আল্লাহ আমাদের মাহে রমজানে তার ইবাদত করার এবং সমগ্র যাপিত জীবনে আনুগত্যে থাকার তওফিক দান করুন।