মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভুল

সৈয়দ বোরহান কবীর

ভুল

হঠাৎ করেই যেন ভুলের চোরাবালিতে আটকে পড়েছে সরকার। একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে ভুল। সিদ্ধান্ত ভুল। পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। প্লেটো বলেছেন, ‘মানুষ যখন একটা ভুল করে, তখন তা তাকে আরেকটা ভুলের পথে ধাবিত করে। এক সময় ভুলের চোরাবালিতে আটকে যায়।’ প্লেটোর এই কথার সঙ্গে সাড়ে আট বছর বয়সী বর্তমান সরকারের কাজকর্মের অদ্ভুত মিল পাওয়া যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘নেতারা যদি নেতৃত্ব দিতে ভুল করে, জনগণকে তার খেসারত দিতে হয়’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃষ্ঠা ৭৯)। আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে বঙ্গবন্ধুর এই মন্তব্যের যথার্থতা পাওয়া যায় বৈকি।

রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের বিপর্যয়ে জাতি যখন শোকে বিহ্বল, সে সময় বিএনপির গাড়িতে কে বা কারা হামলা করল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘এই হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত না।’ জড়িত যেই থাকুক এর দায়দায়িত্ব অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। এ ঘটনা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এ ধরনের অনেক ঘটনা বিএনপি ঘটিয়েছিল। মনে আছে, ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যশোরে যাচ্ছিলেন, এ সময় তার গাড়িবহরে হামলা করা হয়। কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা নতুন করে নাই বা বললাম। এসব করে বিএনপি ক্ষমতা পোক্ত করতে পারেনি, বরং গণধিকৃত হয়েছে। বিএনপির এসব অপরাধের জবাব জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দিয়েছে ২০০৮ সালে। আওয়ামী লীগ কেন সেই পথে হাঁটবে? আওয়ামী লীগ কেন সেই নোংরা এবং ভুল রাজনীতির পথে চলবে?

২০০৮-এর নির্বাচন এবং ২০১৪-তে বর্জনের মধ্য দিয়ে বিএনপি মৃতপ্রায় হতাশ একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছিল। তাকে আবার নতুন জীবন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একের পর এক মামলা করেছে। কোনো মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, অস্তিত্বের শেকড় সন্ধান করেছে। বিএনপির পুনরুত্থান পর্বের সমাপনী নাটক হয়ে গেল কদিন আগে। বেগম জিয়ার গুলশানের অফিসে পুলিশ তল্লাশি অভিযানের মাধ্যমে। পুলিশ ওই কার্যালয়ে তল্লাশি করে কিছুই পেল না। কিছু না পাওয়ার মাধ্যমে ওই কার্যালয়কে পবিত্রতার সার্টিফিকেট দিল পুলিশ। সাধারণ মানুষ ছি ছি করল। লজ্জিত হলো। কে নির্দেশ দিয়েছিল ওই তল্লাশির? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন ‘প্রধানমন্ত্রী ওই তল্লাশি সম্পর্কে জানতেন না।’ কি তাজ্জব, কি ভয়াবহ কথা। প্রধানমন্ত্রীর অজ্ঞাতে যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে সরকার কোথায়? সরকারকে অবহিত না করে, যারা এসব করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন হাজার হাজার। কারও বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা দরকার, সে যেই হোক না কেন। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে গ্রেফতার হয়েছে অযাচিতভাবে। এ প্রসঙ্গে আবার একটু জাতির পিতার শরণাপন্ন হতে চাই। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনাবিচারে বন্দী রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃষ্ঠা ২০৯)। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা, চেতনা ও দর্শনের সঙ্গে এসব কর্মকাণ্ড কতটা সাংঘর্ষিক তা বিবেচনা করার ক্ষমতা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের আছে।

আওয়ামী লীগ বিএনপির পুনঃজন্মই দেয়নি, বিএনপিকে হৃদপুষ্ট করার দায়িত্বও নিয়েছে। সরকারের একেকটা ভুল, বিএনপির জন্য একটা সঞ্জীবনী বটিকা। ১ জুন সরকার এ বছরের বাজেট দিল। সংসদীয় রীতির প্রতি ন্যূনতম জ্ঞান যাদের আছে তারা জানেন, বাজেট পেশের সময় নির্বাহী বিভাগ কোনো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয় না। অথচ ওই দিনই গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। সংসদকে এর চেয়ে বড় অবজ্ঞা আর কীভাবে করা সম্ভব। এই মূল্যবৃদ্ধি কি খুবই জরুরি ছিল? বিশেষ করে যখন, এ নিয়ে একটি মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন? সরকারকে অজনপ্রিয় করতে যেন একটি মহল মরিয়া হয়ে উঠেছে।

হাওরের বিপর্যয়ের পরই বলা হচ্ছিল, চালের দাম বাড়তে পারে। আমাদের খাদ্যমন্ত্রী মন্ত্রণালয় নিয়ে যত না কথা বলেন, তার চেয়ে শতগুণ বলেন রাজনীতি নিয়ে। চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। দাম নিম্নবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। চালের দামের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রসুন, বেগুনসহ অন্যান্য শাকসবজির দাম। সমালোচনার তীর সরকারের দিকে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সাফল্যের একটি ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। ১৯৯৬-২০০১ সাল এবং ২০০৯-২০১৬ তার প্রমাণ। ২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নামে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্যই। আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করে। অথচ সেই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই চালের দাম বাড়ছে বন্যার পানির মতো। আওয়ামী লীগের গর্ব করার মতো একটি বৈশিষ্ট্য ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা। যেটিকে আমরা বলি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, আমরা সবাই বাঙালি।’ এই স্লোগানে উদ্দীপ্ত হয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বিজয় কেতন উড়িয়েছি। অথচ দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের কতিপয় যেন হয়ে উঠেছে হন্তারক। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগেরই কেউ কেউ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দুদের ওপর আক্রমণ, গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লী জ্বালিয়ে দেওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী ঘরবাড়িতে আগুন—এগুলো কোনোটাই কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যায়? অথচ এসব ঘটনার সবগুলোতেই কোনো না কোনো আওয়ামী লীগ নেতার নাম এসেছে। আরও দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এগুলো একটা ঘটনারও ন্যায্যবিচার হয়নি। ভিন্নধর্মাবলম্বীদের কাছে এই রাষ্ট্র আতঙ্কের, ভয়ের, আর্তনাদের। গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগ যেভাবে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের আস্থা হারিয়েছে তা দলটির রাজনৈতিক দর্শনের ওপর একটা বড় আঘাত।

ভোটের রাজনীতির দাবায় জিততে আওয়ামী লীগ হেফাজতের সঙ্গে গোপন প্রণয় করেছে। আওয়ামী লীগ কি সত্যিই বিশ্বাস করে, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের ভোট দেবে? ’৭০-এর নির্বাচনে এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগ সবগুলো আসনে বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু ভোটের হিসেবে দেখা যায় ৩০ ভাগ ভোট পড়েছিল মুসলিম লীগ, জামায়াতসহ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দলগুলোর বাক্সে। এই ৩০ ভাগ ভোট আওয়ামী লীগ কোনো দিনই পায়নি, পাবেও না। এই ৩০ ভাগ মানুষের হৃদয়ে একটি করে পাকিস্তান বসবাস করে। এরা পাকিস্তানের খেলার সাফল্যে উদ্বেলিত হয়। পাকিস্তানের পতাকা উড়ায় স্টেডিয়ামে। পাকিস্তানি পোশাক পরে। বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে চায়। নানা বাস্তবতায় এরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য করলেও আসলে আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করে। এদের সঙ্গে সখ্য করে আওয়ামী লীগ বরং অসাম্প্রদায়িক চেতনার অগ্রসর মানুষের বিশ্বাস হারিয়েছে। এই প্রগতিশীল মানুষগুলোই চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেছে। আওয়ামী লীগ হেফাজতকে কাছে নিয়ে কার্যত এদের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। এর ফলে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ এখন নিঃসঙ্গ, একাকী। যে সব লেখক, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতি কর্মী আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি ছিলেন, এই ঘটনায় তারাই প্রাণহীন হয়ে পড়েছেন। ভিন্নধর্মাবলম্বীরা যেমন এখন মনে করেন এই রাষ্ট্র তাদের না, তেমনি এদেশের মুক্তচিন্তার প্রগতিশীল মানুষ আজকাল মনে করে ‘এই আওয়ামী লীগ আমার না।’

হেফাজতের পরামর্শে যেভাবে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করা হয়েছে, তা অমার্জনীয়। ভাবী, এই কাজটা যদি অন্য সরকার করত, আওয়ামী লীগ যদি তখন বিরোধী দলে থাকত তখন কি প্রতিক্রিয়া দলটি দেখাত।

সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্যের মান নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু এটা অপসারণের মাধ্যমে অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্যসহ সব ভাস্কর্যই তো হুমকিতে পড়ল। হুমকিতে পড়ল পয়লা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো বাঙালির চিরায়ত উৎসবগুলো। এই দায়ভার কি আওয়ামী লীগ নেবে?

আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস ছিল নিম্ন আয় ও মধ্যবিত্ত মানুষ। এরাই আওয়ামী লীগকে যুগে যুগে সমর্থন দিয়েছে। আওয়ামী লীগও সব সময় দারিদ্র্যবান্ধব নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে এগিয়েছে। মনে আছে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেই কৃষিতে ভর্তুকি বন্ধ করে দিল। সারের জন্য কৃষক প্রাণ দিল। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই বিএনপি সরকার তখন ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে কৃষিতে ভর্তুকি চালু করে। যে দলটি একটি বাড়ি একটি খামারের মতো যুগান্তকারী কর্মসূচি নেয়, যে দলটি আশ্রয়ণ প্রকল্প নেয়- সেই দলটি কীভাবে গরিব মানুষের ব্যাংকের টাকায় হাত দেয়। যে দলটি বিধবাভাতা, বয়স্কভাতার মতো কর্মসূচি নেয়, সেই দলটি কীভাবে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমায়? এ কথা ঠিক দেশের অর্থনীতি বড় হয়েছে। কর না দিলে দেশ এগোবে কীভাবে? কিন্তু করের আওতা বাড়িয়েও তো তা করা যায়। দুর্নীতি বন্ধ করেও তো তা করা যায়। লুট হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের টাকা উদ্ধার করেও তা করা যায়। অর্থমন্ত্রী একদিকে বলছেন, ব্যাংকের লুট হয়ে যাওয়া টাকা সামান্য টাকা অন্যদিকে বলছেন এক লাখ টাকা ব্যাংকে থাকলেই তিনি সম্পদশালী। অর্থমন্ত্রীর এসব বচন আওয়ামী লীগকেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।

২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আওয়ামী লীগ ব্যবসায়ীবান্ধব সরকার হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। ব্যবসা, শিল্প সম্প্রসারণে আওয়ামী লীগ অনেক উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিটি বিদেশ সফরে ব্যবসায়ীদের নিচ্ছেন, ব্যবসার আদান-প্রদানের পথ করে দিচ্ছেন। বিদ্যুৎ, সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি করছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের মাধ্যমে শিল্প সভ্যতার এক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছেন। বাংলাদেশে তারপরও ব্যবসা করা কঠিন কাজ। ব্যাংক ঋণে সুদের হার ভয়াবহ রকম বেশি। ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার কোনো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নেই। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো তেল মাথায় তেল ঢালে। এর মধ্যেও যে বাংলাদেশে শিল্প, ব্যবসা বিকাশমান, সেটিও এক বিস্ময়। নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে এদেশের ব্যবসায়ীরা যখন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন তখন হিমালয়ের মতো দাঁড় করানো হয়েছে ‘অনলাইন ভ্যাট’ নামের এক পাহাড়কে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে অবশ্যই ভ্যাট ব্যবস্থা অনলাইন হওয়া উচিত। কিন্তু তাই বলে একবারে, তাও আবার ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট! ব্যবসায়ীদের অনুনয় আবেদন সব উপেক্ষা করে অর্থমন্ত্রী জেদ করে বসে আছেন। এর ফলে ব্যবসায়ীরাও সরকারের ওপর আস্থা হারাতে শুরু করেছেন। অনলাইন ভ্যাট তো আর বিদ্যুতের সুইচ না, চাপ দিলাম আর চালু হয়ে গেল। এটা পর্যায়ক্রমে আস্তে আস্তে চালু করা যেত। তা না করে সরকারই ব্যবসায়ীদের তার প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিল।

ভুলের ফিরিস্তি আর দীর্ঘ করে লাভ কী? সুলতানা কামালের প্রসঙ্গ এখানে নাই আনলাম, নাই বললাম রাঙামাটির পাহাড় বিপর্যয়ের কথা। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে।

মার্কটোয়েন বলেছেন, ‘ভুলটা অধিকাংশ সময় চোরাবালির মতো ভুলের চোরাবালিতে আপনি যখন থাকবেন, তখন যেখানে পা রাখবেন সেখানেই পা আটকে যাবে।’ আওয়ামী লীগ কি তাহলে ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে? আওয়ামী লীগ ভুল করলে ক্ষতি হয় গোটা বাংলাদেশের। লাভ হয় ’৭১-এর পরাজিত শক্তির।

১৮ জুন ওভালে ভারত পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন ট্রফির ফাইনাল খেলছিল। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম দেশের ৯০ ভাগ ক্রিকেট দর্শক পাকিস্তানের সমর্থক। তারা ভারতের পরাজয়কে দেখছে প্রতিশোধ হিসেবে। আমি কয়েকজন তরুণের সঙ্গে কথা বললাম। তারা বলল, ভারতের অহংকার, বিরাট কোহলির দম্ভ, শাস্ত্রী, শেবাগের মতো সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটারদের বাংলাদেশ নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের কারণে তারা ভারতের পরাজয় চায়। অথচ পাকিস্তান জিতে সবচেয়ে ক্ষতি হলো বাংলাদেশের। বাংলাদেশ আইসিসি র্যাংকিংয়ে ৬ থেকে ৭-এ নেমে গেল। ক্রিকেটের কথা বাদই দিলাম। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা ভুলব কী করে? কোটি মানুষকে তারা আশ্রয় দিয়েছিল। আর পাকিস্তান বাংলাদেশের ওপর চালিয়েছিল গণহত্যা, বর্বরতা। ৩০ লাখ মানুষকে পাকিস্তানিরা হত্যা করেছিল। তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল। এত বছর পরও পাকিস্তান ক্ষমা চায়নি। বাংলাদেশের পাওনা টাকা ফেরত দেয়নি। এক বিরাট কোহলি আর বীরেন্দ্র শেবাগ এসব ভুলিয়ে দিল। ১৮ জুন সন্ধ্যায় বাংলাদেশকে পাকিস্তান প্রেমিক বানিয়ে দিল। বাঙালির এই আবেগ আত্মঘাতী, কিন্তু এটাই বাঙালির চরিত্র।

আওয়ামী লীগের ছোট্ট ছোট্ট ভুলগুলো এদেশের মানুষকে ভুলিয়ে দেবে পদ্মা সেতুর অহংকার। বিশ্বে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান। উন্নয়নের বিপ্লব, সবকিছু। মানুষ পাকিস্তানকে সমর্থন করার মতো সমর্থন করবে এমন কাউকে যারা সন্ত্রাসের জনপদ বানিয়েছিল এই রাষ্ট্রকে। বাংলা ভাইয়ের কথা ভুলে যাবে মানুষ। ভুলে যাবে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা। ভুলে যাবে ২০০১ সালের অক্টোবরের অত্যাচার ও নিপীড়নের কথা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এ জন্যই বলেছিলেন ‘বাঙালির আবেগ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য।’ যারা সরকারে আছেন, তারা নিশ্চয়ই এ বিষয়টি অবজ্ঞা করবেন না, উপেক্ষাও করবেন না।

তারপরও আমি আশাবাদী হতে চাই। আওয়ামী লীগ বিশেষ করে, তার সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর আমি আস্থা রাখতে চাই। কারণ তিনি মানুষের রক্তক্ষরণ নিশ্চয়ই শুনতে পাবেন। ভুল শুধরানোর দ্রুত পদক্ষেপ তিনি নেবেন। কারণ তার রাজনৈতিক দর্শনের নাম ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’। জনগণের অনুভূতি তিনি বুঝবেন নিশ্চয়ই। তাকে বুঝতেই হবে। এ পি জে আবুল কালামের একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়েই এই লেখাটি শেষ করতে চাই। তিনি বলেছিলেন ‘ভুল মানুষ মাত্রই করে। কিন্তু সত্যিকারের মানুষ ভুল থেকে শেখে এবং ভুল শুধরে এগিয়ে যায়।’

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

ই-মেইল : [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর