মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভ্রমণের সুন্নতসমূহ

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

ভ্রমণের সুন্নতসমূহ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। যত কষ্টই হোক মানুষ ফিরে যাবে তার ফেলে আসা শৈশব স্মৃতিমাখা গ্রামের বাড়িতে। বাঙালির এ নজিরবিহীন প্রাণের বন্ধন বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা তা আমার জানা নেই। হাজারও কর্মব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় পেলেই ছুটে যায় শেকড়ের টানে তার প্রিয় মানুষগুলোর কাছে। আর সময়টি যদি ঈদের হয়, তাহলে  তো কোনো কথাই নেই। ভ্রমণের হাজার কষ্ট সহ্য করেও মানুষ তার আপন ঠিকানায় ফিরবেই।

যেহেতু ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা তাই মানুষের জীবনের অন্যান্য অধ্যায়ের মতো এখানেও কিছু ইসলামী দিকনির্দেশনা রয়েছে। রয়েছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু সোনালি সুন্নত। যার ওপর আমল করলে এ ভ্রমণও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহর রহমতে আমরাও পেতে পারি একটি নিরাপদ ভ্রমণের নিশ্চয়তা। নিম্নে ভ্রমণের সুন্নতগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

ভ্রমণে বের হওয়ার আগে কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির (যিনি উক্ত রাস্তাঘাট কিংবা গন্তব্যের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন) সঙ্গে পরামর্শ করা। দুই রাকাত নামাজ পড়ে ইসতেখারা করা (কোনো কাজ শুরু করার আগে এর ভালো ফলাফলের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা)।

পিতা কিংবা কোনো গুরুজনের অনুমতিক্রমে আল্লাহর কাছে তওবা-ইস্তিগফার ও সাহায্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করা। ভ্রমণে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া, ‘সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হা-জা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনীন, আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফরিনা হা-জাল বির্রা ওয়াত তাকওয়া, ওয়ামিনাল আমালি মা তার-জ, আল্লাহুম্মা হাউইন আলাইনা সাফারনা হা-জা, ওয়াতউই আন্না বু’দাহু, আল্লাহুম্মা আংতাস সাহিবু ফিস সাফরি ওয়াল খলিফাতু ফিল আহলি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ওয়া’সা-ইস সাফরি, ওয়া কা-বাতিল মানজারি, ওয়া সু-ইল মুনকলাবি ফিল মালি ওয়াল আহলি।’

অর্থ : ‘পবিত্র মহান সে সত্তা- যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ। আমাদের এ ভ্রমণে আমরা তোমার কাছে কল্যাণ, তাকওয়া এবং তোমার সন্তুষ্টি বিধানকারী কাজের তৌফিক চাই। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফর আমাদের জন্য সহজ করে দাও এবং এর দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই (আমাদের) সফরসঙ্গী এবং পরিবারের তত্ত্বাবধানকারী। হে আল্লাহ! তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক দৃশ্য এবং ফিরে এসে সম্পদ ও পরিবারের ক্ষতিকর পরিবর্তন থেকে।”—(সহিহ মুসলিম : ১৩৪২)।

একা একা ভ্রমণ না করা। কমপক্ষে দুজন মিলে ভ্রমণ করা।

গাড়ি-ঘোড়া বা যে কোনো যানবাহনে আরোহণের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে আরোহণ করা।

যানবাহনে ঠিকমতো বসার পর তিনবার ‘আল্লাহ আকবার’ পড়ে  এ দোয়া পড়া। উচ্চারণ : সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হা-জা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুংকালিবুন।

নৌকা বা জাহাজযোগে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এ দোয়া পড়া, ‘বিসমিল্লাহি মাজরেহা ওয়া মুরসা-হা, ইন্না রাব্বি লাগাফুরুর রহিম।’

ভ্রমণাবস্থায় যানবাহন যখন উপরের দিকে ওঠে তখন ‘আল্লাহু আকবার’ আর যখন নিচের দিকে নামে তখন সুবহানাল্লাহ পড়া।

গন্তব্যে পৌঁছার পর তিনবার ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহ’ পাঠ করা। ভ্রমণের প্রয়োজন পূরণ হলে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসা, অযথা দেরি করা ঠিক নয়। ভ্রমণকালীন সঙ্গে কুকুর না রাখা। ভ্রমণ থেকে ফিরে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা ও এ দোয়া পাঠ করা, ‘আ-ইবুনা তা-ইবুনা আ-বিদুনা লিরব্বিনা হামিদুন’।

     লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর