বুধবার, ২১ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

জালনোটের দৌরাত্ম্য

অপরাধ দমনে কড়া আইন সময়ের দাবি

প্রতিবারের মতো এবারও ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জালনোট চক্রের সদস্যরা। শুধু রাজধানী নয়, দেশজুড়েই চলছে তাদের অপতৎপরতা। দেশের অর্থনীতির জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পরও জালনোট চক্রের সদস্যদের সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গ্রেফতারের পরও তারা কীভাবে পার পায় তাও একটি বড় মাপের প্রশ্ন। আইনের ফাঁক দিয়ে এ অপরাধের সঙ্গে যুক্তরা বারবার গ্রেফতারের পরও বেরিয়ে আসছে। আবারও তারা নিয়োজিত হচ্ছে জালনোটের ব্যবসায়। বারবার গ্রেফতার হওয়া জালিয়াতের সংখ্যাও কম নয়। জালনোট চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়। কিন্তু মামলার দুর্বলতায় জালিয়াতরা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। পুলিশ এ ব্যাপারে যাদের সাক্ষী করে প্রায়শই তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। ফলে মামলার নিষ্পত্তি অসম্ভব হয়ে পড়ে। জাল টাকা ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের কারণে তাদের জামিন দেওয়ার জন্য আইনি তৎপরতা চালাতে আইনজীবীদের কেউ কেউ মুখিয়ে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে তারা জামিন পান আইনের ফাঁক গলিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি জাল করা হয় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। গড়ে প্রতি বছর দুই কোটি টাকার জাল টাকা ধরা পড়ে। ধরা পড়া জাল টাকা যে জালকৃত টাকার অতি ক্ষুদ্র অংশ তা সহজেই অনুমেয়। অনুমান করা হয়, জালনোট চক্রের সঙ্গে জঙ্গি অর্থায়নের সম্পর্ক রয়েছে। জঙ্গিবাদের মদদদাতা হিসেবে পরিচিত সার্কভুক্ত একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ও ভারতের টাকা জাল করার সঙ্গে জড়িত এমন অভিযোগও রয়েছে। বাংলাদেশে জালনোটসহ চিহ্নিত ওই দেশটির একাধিক নাগরিক ইতিপূর্বে ধরাও পড়েছে। দেশের অর্থনীতি ও জননিরাপত্তার স্বার্থে জালনোট তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।  স্মর্তব্য, জালনোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। ১৯৮৭ সালে তা রহিত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়। মৃত্যুদণ্ডের পুনঃপ্রবর্তন না হোক, এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের জামিন অযোগ্য করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও আর্থিক জরিমানা সংবলিত নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে, আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর