শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে মানুষের প্রতি সদয় হতে হবে

মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন

মানুষের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা প্রকাশ করা ও কাজ করা প্রতিটি ইমানদার ব্যক্তিরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানুষকে ভালোবাসলে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ পায়।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট ঘোষণা— যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল নয় তার ওপর আল্লাহপাক কোনো অনুগ্রহ করবেন না। অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানুষকে ভালোবাসে না তাকে আল্লাহও ভালোবাসেন না। অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে— হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, উদার ও দয়ালুদের প্রতি দয়াবান রহমান দয়া করে থাকেন। তোমরা পৃথিবীবাসীকে দয়া কর, ভালোবাস। আল্লাহতায়ালা তোমাদের দয়া করবেন, ভালোবাসবেন। (তিরমিজি, মিশকাত)।

অন্য হাদিসে আছে, ‘মানুষের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি তিনি যিনি মানুষের কল্যাণ করেন।’ হজরত নুমান ইবনে বশীর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সব মুমিন এক অখণ্ড ব্যক্তির মতো। যদি কোনো ব্যক্তির চক্ষু ব্যথা হয় তবে তার সর্বাঙ্গ ব্যথিত হয়। যদি তার মাথায় ব্যথা হয় তখন সর্বাঙ্গ ব্যথিত হয়। (বুখারি মুসলিম)।

হজরত আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীরস্বরূপ। এর এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। এ কথা বলার সময় তিনি এক হাতের আঙ্গুলকে অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে দেখান।’ (বোখারি, মুসলিম)।

কোরআন ও হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে অনুভব করা যায় যে, আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে হলে তার সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে ভালোবাসতে হবে। সুখে-দুঃখে পরস্পর পরস্পরের সমঅংশীদার হতে হবে, কারও অসুখের খবর পেলে তার সেবা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু মানুষের অধিকারের কথা বলেই আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষান্ত হননি। তিনি এর সঙ্গে প্রাণীমাত্রের অধিকার সংরক্ষণের কথাও বলেছেন।

ইরশাদ হচ্ছে, ‘সমস্ত সৃষ্টি জগৎই হলো আল্লাহর পরিবার। এ পরিবারের সদস্যদের যে যত বেশি উপকার করবে সে তত বেশি আল্লাহর প্রিয় পাত্র হবে।’ (তিরমিজি)।

এ হাদিসের দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, সব সৃষ্টিজীব হলো আল্লাহর পরিবারের সদস্য। এসব সদস্যের মধ্যে মানুষ হলো শ্রেষ্ঠ। তাই মানুষের অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পার্থিব জগতে আল্লাহর করুণা লাভ ও পরজগতে বেহেশত লাভের আশ্বাস দিয়েছেন।  আর এ অধিকার লঙ্ঘনকারীর জন্য পরকালে দোজখের কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে বলে অনেক হাদিসেই তিনি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন।

লেখক : ইসলামী গবেষক

সর্বশেষ খবর