মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রথম জোহরের নামাজ ফরজ হওয়ার রহস্য

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

যে দিন নামাজ ফরজ করা হলো অর্থাৎ মেরাজের রাতে, সেদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজ না পড়ে জোহরের ওয়াক্ত থেকে নামাজ পড়া শুরু করেন। অথচ তিনি ফজরের আগেই মেরাজ থেকে ফিরে আসেন। এখানে অনেকেই না বুঝে বলে থাকে যে, যেহেতু মেরাজের সফরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন, ফলে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, তাই তার সম্মানার্থে তাকে আর ডাকা হয়নি। ফলে তার  ফজরের নামাজ কাজা হয়ে গেছে। এমনকি এ কথাটা অনেকে বই-পুস্তকেও লিখে দিয়েছেন। এটা তো আহম্মক বন্ধুর কথা হলো। কারণ সর্বপ্রথম নামাজেই তিনি গায়েব থাকবেন, কাজা করে ফেলবেন, এর দ্বারা কত বড় বদনাম তার ওপরে অর্পিত হয়। যেখানে তিনি জেহাদের ময়দানেও নামাজ বাদ দেননি, সেখানে তিনি পরিশ্রান্ত হওয়ার কারণে ফজরের নামাজ কাজা করে ফেলবেন? যারা ফজরের নামাজ পড়ে না, তাদের জন্য এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ। আসল কথা হলো, আল্লাহপাক রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলে দিয়েছেন, তোমার ওপর এবং উম্মতের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করলাম, তবে এটা শুরু হবে জোহর থেকে আগে জিবরাইল আমীনকে পাঠাব, সে তোমাকে নামাজ শিক্ষা দিয়ে আসবে। আর হজরত জিবরাইল (আ.) আকাশ থেকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সর্বপ্রথম জোহরের সময় আসেন ফজরের সময় আসেননি। সুতরাং রসুলের যে ঘুমের কথা বলা হয়, এটা সত্য নয়। এমন একটা ঘটনা ঘটার পর কি ঘুম আসতে পারে? এমন ঘটনা আমাদের জীবনে সংঘটিত হলে কি আমাদের ঘুম আসত? এমন ঘটনা তো দূরের কথা রাতের বেলা যদি ফেরেশতা এসে আমাকে নিউইয়র্ক থেকে নিউজার্সি নিয়ে রেখে আসে, তাহলে একদিন কেন এক মাসও আমার ঘুম আসবে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহতায়ালা পৃথিবী থেকে সাত আসমান ভ্রমণ করিয়ে আরশ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। সেখানে তার ঘুম আসার প্রশ্নও তো আসতে পারে না। কিন্তু তিনি ফজরের নামাজ কেন পড়েননি? নামাজের তালিম তখনো বাকি ছিল, তাকে শুধু নামাজের কথা বলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নামাজের প্রাকটিক্যাল অবস্থা তখন পর্যন্ত বলে দেওয়া হয়নি। তাই জোহরের সময় হজরত জিবরাইল আমীন এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাতে কলমে নামাজ শিখিয়ে দিলেন। কীভাবে দাঁড়াতে হবে, কীভাবে রুকু করতে হবে, কীভাবে সেজদা করতে হবে এগুলো শিক্ষা দিলেন। এভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিবরাইল (আ.) দশবার নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন। অথচ তিনি নবী ছিলেন, তথাপি তাকে দশবার ট্রেনিং দেওয়ার পর তিনি নামাজ পড়া আরম্ভ করেছেন।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর