শনিবার, ৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা

হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান
সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

বলা হয়ে থাকে যে স্বাস্থ্য সব সুখের মূল। মূলত সুস্বাস্থ্য মহান আল্লাহর দেওয়া একটি অন্যতম বড় নেয়ামত। সুস্বাস্থ্য মানুষকে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে এবং নিরলসভাবে মহান আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করতে সাহায্য করে। সৌভাগ্য সে ব্যক্তির যে দীর্ঘজীবী হয় এবং জীবনব্যাপী মহান আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে নিয়োজিত থাকে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য যার আয়ু দীর্ঘ হয়, যার কর্ম সৎ সুন্দর হয়।

মহান আল্লাহ স্বাস্থ্যরক্ষার উপকরণসমূহ দান করেছেন : মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং নিরাপত্তা ও সুস্থতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ও যথাযথ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রদান করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন— আমি অবশ্যই মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম অবয়বে (সূরা তীন-৪)।

মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন— তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। তিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামতো আকৃতিতে গঠন করেছেন। (সূরা ইসফিতার ৬, ৭, ৮)।

মহান আল্লাহ মানুষকে সুস্বাস্থ্য দিয়েছেন এবং স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপায় উপকরণ দিয়েছেন। এ জন্য নিজের স্বাস্থ্যরক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার চেষ্টা করা মানুষের অন্যতম প্রধান কর্তব্য।

স্বাস্থ্যরক্ষায় রসুলুল্লাহ (সা.) যা করতেন : ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যা যা করা দরকার, রসুলুল্লাহ (সা.) তার সবটাই পালন করতেন। নিজের সাধ্যমতো স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার পর সুস্বাস্থ্য চলমান রাখার জন্য তিনি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। তিনি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে এ দোয়া পাঠ করতেন— হে আল্লাহ আমাকে সুস্থতা দিন আমার দেহে শরীরে, হে আল্লাহ আমাকে সুস্থতা দিন আমার কানে এবং আমাকে সুস্থতা দিন আমার চোখে। (আবু দাউদ, মেশকাত-২১২)

ইসলামের সব বিধিবিধান স্বাস্থ্যরক্ষায় উপযোগী : মায়ের গর্ভধারণের সময় থেকে মানব সন্তানের পৃথিবীতে আগমনের সূচনা হয় এবং মায়ের পেট একটি শিশুর প্রথম বাসস্থান। শরিয়তের নির্দেশনা রয়েছে শান্ত মনে আনন্দঘন পরিবেশে নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করে স্বামী- স্ত্রীর একান্ত মিলনের। এবং ইসলামে গর্ভবতী মায়ের প্রতি সব প্রকারের নিষ্ঠুরতা পরিহার করে মায়া মমতা দেখানো ও স্বাস্থ্য উপযোগী পরিবেশে তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন— সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। (সূরা বাকারা ২৩৬)।

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন— আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ পিতার দায়িত্ব হলো প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সততার সঙ্গে মায়েদের খোরপোশের ব্যবস্থা করা। (সুরা বাকারা-২৩৩)।

ইসলাম সব পরিচ্ছন্ন ও পুষ্টিকর খাদ্য মুসলমানদের জন্য বৈধ করেছে এবং খবিস, অপবিত্র ও ক্ষতিকর পণ্যসামগ্রী হারাম করে দিয়েছে। ইসলামে ঘোষিত সব হালাল খাদ্য স্বাস্থ্য উপযোগী এবং সব হারাম খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরিচয় বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেছেন— তিনি তাদের নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু ও নিষিদ্ধ করেন খবিস বা অপবিত্র বস্তুসমূহ। (সূরা আরাফ- ১৫৭)।

বস্তুত শূকরের মাংস মদ মৃতপ্রাণী ইত্যাদি ভক্ষণ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিকর। পবিত্রতা অর্জন, ঢিলা, কুলুপ ব্যবহার, অজু করা, বীর্যপাতের পর গোসল করা, খাবারের আগে ও পরে হাত ধোয়া, পরিমিত পরিমাণে আহার করা, নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া, যথানিয়মে নামাজ আদায় করা, পারিবারিক পরিবেশকে আনন্দঘন করে রাখাসহ ইসলামের সব নির্দেশনা স্বাস্থ্য সুরক্ষার পক্ষে। সুতরাং এগুলো যথাযথভাবে পালন করে ব্যক্তি স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সাধ্যমতো কাজ করা সব নাগরিকের দায়িত্ব।

স্বাস্থ্যরক্ষায় চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ রয়েছে ইসলামে : রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— মহান আল্লাহ রোগ অবতীর্ণ করেছেন এবং এর ওষুধও অবতীর্ণ করেছেন। সব রোগের জন্য তিনি ওষুধ সৃষ্টি করেছেন। সব রোগের জন্য চিকিৎসা করবে তবে হারাম বস্তুর চিকিৎসা গ্রহণ করবে না। (আবু দাউদ মেশকাত-৩৮৮)। আসুন আমরা সবাই ব্যক্তি স্বাস্থ্য জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেষ্ট হই। আল্লাহ তৌফিক দিন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আমাদের করণীয় : পরিবেশ, প্রকৃতি জগৎ সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি এবং তারই নিয়ন্ত্রণাধীন। তাঁর নির্দেশে এগুলো স্থিতিশীল থাকে এবং তারই নির্দেশে অস্থিতিশীল হয়। সাধারণত প্রকৃতির অনিয়মিত আচরণই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, পাহাড়ধস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, সুনামি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত মানুষের পাপাচারি ও অনাচার সীমা অতিক্রম করলে মহান আল্লাহ তাদের সাবধান করার জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিচালিত করেন। যাতে তারা সতর্ক হয় এবং তার আনুগত্যে ফিরে আসে। মহান আল্লাহ বলেন— কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে যার ফলে ওদেরকে ওদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রুম-৪১)। মহান আল্লাহ আরও বলেন— গুরু শাস্তির আগে আমি তাদের অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাই যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা সাজদা-২১)। প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত হওয়ার আগে সবাই সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পথে চলমান থাকবে। দুর্যোগ এসে গেলে নিজের ও অন্যের জানমাল রক্ষার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। আত্মরক্ষার সর্বাধুনিক উপায় উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।  হজরত নূহ (আ.) সহ প্লাবন থেকে বাঁচার জন্য নৌকা তৈরি করে তাতে আরোহণ করেছিলেন অনুসারীদের নিয়ে।  আপদকালীন মহান আল্লাহর আশ্রয় কামনা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর