বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয় দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা হিসেবেই বিবেচিত। এই আয়ের কারণেই বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সদর্পে টিকে থেকেছে। দেশের অগ্রগতির জন্যও তা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু সে সুদিন এখন অনেকটাই হুমকির সম্মুখীন। জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস পাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশিরা নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ। সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে সেসব দেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশিরা। মালয়েশিয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে অবৈধভাবে অবস্থানরত প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি গ্রেফতারের আতঙ্কে ভুগছেন। সৌদি আরবে দেশে ফেরার শঙ্কা তৈরি হয়েছে দুই লক্ষাধিক বাংলাদেশির। বিশ্ব রাজনীতির মারপ্যাঁচে বিপাকে পড়েছেন কাতারে থাকা তিন লাখ বাংলাদেশি। ভিসা সমস্যায় চরম সংকটে আছেন আরব আমিরাতে থাকা পাঁচ লক্ষাধিক বাংলাদেশি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে বসবাসরত ৯৩ হাজার বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার চাপ কঠোর থেকে কঠোরতর করার চেষ্টা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপে যাওয়ার লোভে তুরস্কে গিয়ে দুই হাজার বাংলাদেশি এখন বন্দীদশায়। বিপত্সংকুল জেনেও ইউরোপে যাওয়ার পথ হিসেবে লিবিয়াকে বেছে নেওয়া কয়েক হাজার ভাগ্যান্বেষী রয়েছেন চতুর্মুখী শঙ্কায়। এমন পরিস্থিতিতে আগামী কয়েক বছরে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশির দেশে ফেরার আশঙ্কা জোরদার হয়ে উঠেছে। বিশ্ব মন্দার কারণে বিশ্বের শ্রমবাজারে চরম সংকট চলছে। বাংলাদেশের যেসব শ্রমিক মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত তাদের সিংহভাগই অদক্ষ শ্রমিক। স্বল্প শিক্ষিত এসব অদক্ষ শ্রমিকের আয় যেমন কম তেমন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে তাদের চাহিদাও হ্রাস পাচ্ছে। স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় তারা প্রতি পদে পদে প্রতারকদের ফাঁদে পা দেয়। মালয়েশিয়ায় সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক তা গ্রহণ করতে পারেনি অজ্ঞতার জন্য। সব মিলিয়ে দেশের শ্রমবাজার যে হুমকির সম্মুখীন তা নিরসনে সরকারকে সময় থাকতেই উদ্যোগ নিতে হবে। অদক্ষ শ্রমিকের বদলে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্যও নিতে হবে উদ্যোগ।