মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

এতিমদের সঙ্গে সদয় ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছেন রসুল (সা.)

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

এতিমদের সঙ্গে সদয় ব্যবহারের জন্য মহান আল্লাহ আল কোরআনে তাগিদ দিয়েছেন। রসুল (সা.)-এর হাদিসেও এ বিষয়ে মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এতিমদের প্রতি সদাচরণ যে কতটা পুণ্যের তা ইমাম আজ-জাহারি (রহ.) লিখিত কিতাবুল কাবায়ের একটি বর্ণনায় স্পষ্ট হয়। এতে বলা হয়,  সালফে সালেহিনের কোনো এক বুজুর্গ বলেন, ‘প্রথম জীবনে আমি অত্যধিক মদপান করতাম ও নানা প্রকার পাপকাজে লিপ্ত ছিলাম। এ সময় একদিন সৌভাগ্যবশত পথের পাশে এক অসহায় এতিম বালকের সাক্ষাৎ পেয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে এলাম। তাকে আপন ছেলের চেয়েও বেশি আপন করে আদর-যত্নের সঙ্গে গোসল করিয়ে, ভালো পোশাক পরিয়ে পানাহার করালাম। এভাবে কিছু দিন চলার পর এক রাতে আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম  কিয়ামত হয়ে গেছে। হিসাব-নিকাশের পর অসংখ্য পাপের প্রতিফলস্বরূপ আমাকে দোজখে নিক্ষেপের হুকুম হয়েছে। দোজখের ফেরেশতারা যখন আমাকে চরম অপদস্থ ও লাঞ্ছনাসহকারে অসহায় অবস্থায় টানাহেঁচড়া করে দোজখে নিক্ষেপের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল, এমন সময় দেখি, হঠাৎ সেই এতিম ছেলেটি সামনে এসে পথ আগলে দাঁড়িয়েছে। সে বললে, “ওহে রবের ফেরেশতামণ্ডলী! একে ছেড়ে দাও, আমি তার জন্য আল্লাহর সমীপে সুপারিশ জানাব, কারণ পৃথিবীতে সে আমার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করেছে, আমার অনেক উপকার করেছে।” ফেরেশতারা বললেন, “আমাদের এ ধরনের কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি।” এ সময় সহসা একটি অদৃশ্য আওয়াজ এলো : “ওহে ফেরেশতাগণ! একে তোমরা ছেড়ে দাও। ওই এতিমের প্রতি সদ্ব্যবহার করার কারণে ওই এতিমকে আমি তার পক্ষে সুপারিশ করার অধিকার দিয়েছি এবং সুপারিশের ভিত্তিতে তার যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দিয়েছি।” এ সময় আমি ঘুম থেকে জেগে উঠলাম, অতঃপর আমার সমুদয় পাপকার্য ও অভ্যাস থেকে মহান আল্লাহর দরবারে তওবা করলাম এবং এতিমদের সেবায় সাধ্যমতো আমার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করলাম।’ এজন্যই রসুল (স.)-এর খাদেম, বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘যে ঘরে এতিমের যত্ন নেওয়া হয় (ভালো ব্যবহার করা), তা সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ঘর। আর যে ঘরে এতিমের ওপর নিপীড়ন করা হয়, তা সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ঘর। যে লোক কোনো এতিম অথবা অসহায় বিধবার উপকার সাধন করে, সে আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা।’

বর্ণিত আছে, আল্লাহ হজরত দাউদ (আ.)-কে ওহির মাধ্যমে বলেছিলেন, ‘হে দাউদ! তুমি এতিমের জন্য দয়ালু পিতা এবং অসহায় বিধবার জন্য হৃদয়বান স্বামীর মতো হয়ে যাও। আর ভালো করে জেনে রাখো, তুমি যেমন বীজ বপন করবে তেমনই ফসল পাবে।’ অর্থাৎ অন্যের সঙ্গে তুমি যেমন আচরণ করবে, তোমার মৃত্যুর পর তোমার রেখে যাওয়া এতিম সন্তান ও বিধবা স্ত্রীর সঙ্গেও তেমনই ব্যবহার করা হবে। হজরত দাউদ (আ.) মোনাজাত করে বলেছিলেন, ‘হে পরওয়ারদিগার! যে লোক তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় এতিম ও বিধবাকে আশ্রয় দেয়, সাহায্য করে, তার পুরস্কার কীরূপ?’ আল্লাহ ঘোষণা করলেন, ‘হাশরের দিন যখন আমার আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আমি তাকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেব।’ আল্লাহ আমাদের এতিম ও দুস্থজনদের প্রতি সদাচরণের তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর