বুধবার, ১২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফরজ নামাজের পর দোয়া

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

মাসয়ালা জানিয়ে, বুঝিয়ে একটি কাজ করতে হয়। দেশের মানুষ জানে না যে, নামাজের পরে উচ্চৈঃস্বরে সম্মিলিতভাবে দোয়া করা ঠিক নয়। আমি তো জুমার পর মাঝে-মধ্যে করি, এ জন্য আমার পেরেশানিও লাগে। মাসয়ালা হলো ফরজ নামাজের পর আস্তে দোয়া করা। কারণ আমি সালাম ফেরানোর পর এক দেড়শ লোক পেছনের দিক থেকে দাঁড়িয়ে যান যারা এক রাকাত পাননি। তারা তো তখন ফরজ আদায় করছেন। ফরজের দাম বেশি নাকি দোয়ার দাম বেশি? বলুন। কিন্তু ভাবার বিষয় হলো, দোয়া যদি উচ্চৈঃস্বরে করি তাহলে তার তাছির দিলের মধ্যে হয় বেশি। এখন মুসল্লিরা ফরজ আদায়ের জন্য দাঁড়িয়েছেন, আমি বলছি হে আল্লাহ! আমরা গরিব, আমরা এতিম, কাকুতি মিনতির সঙ্গে বলছি, আমাদের জীবনের সব গোনাহ মাফ কর। মাতা-পিতার গোনাহ মাফ কর। তখন মাসবুক ব্যক্তিরা মনে মনে বলে, আরে দোয়া তো চলে গেল! তাদের মন অস্থির হয়ে যায়। অনেকে মাসয়ালা জানে না, ফলে নামাজের মধ্যেই বলে উঠে, আমিন। আবার অনেকে নামাজ ছেড়ে দিয়ে দোয়ায় শরিক হয়ে যায়। আর বলে, নামাজ তো ছুটছেই, হুজুরের দোয়াও ছুটে গেল। দোয়ার দাম বেশি দেয়। নামাজ পড়ে না, দোয়ায় শরিক হয়। এভাবে মাসবুকদের ফরজ নষ্টের কারণ হয়ে যাচ্ছে দোয়া। কমপক্ষে তাদের মনের গতি দোয়ার দিকে চলে আসে। আমার একটি অভিজ্ঞতা শুনুন। একদিন আমি এক মসজিদে আসরের নামাজে শরিক হলাম। এক রাকাত ছুটে গেছে। সালাম ফেরানোর পর ইমাম সাহেব দোয়া লম্বা করে চলেছেন, তার দোয়ার কারণে আমি সূরা পড়ে আর সামনে আগাতে পারছি না। বার বার পড়তে হচ্ছে। শুরু থেকে পড়ি, একটু পড়ার পর ভুলে যাই। এমন করতে করতে একেক সূরা চার-পাঁচবার পড়ার পর ইমাম সাহেবের দোয়া শেষ হয়েছে। তারপর আমি সূরা শেষ করেছি। রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেন, সাহাবায়ে কেরামের যার মনে চাইত দোয়ায় শরিক হতেন, যার মনে চাই তো না শরিক হতেন না, চলে যেতেন। নামাজের সঙ্গে দোয়ার কোনো অপরিহার্য সম্পর্ক নেই। দোয়ার জন্য মুসল্লিগণ ইমাম সাহেবকে বাধ্য করবেন না। ইমাম সাহেব মুসল্লিগণকে বাধ্য করতে পারবেন না। জোরে দোয়া করলে যারা মাসবুক হন, তাদের ফরজ নামাজের মধ্যে অসুবিধা হয়। দোয়া জোরে করাই যায় না, এমন নয়। দোয়া জোরেও করা যায় কিন্তু এ সমস্যাগুলো হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ নামাজের চেয়ে দোয়ার গুরুত্ব বেশি দিয়ে থাকে। আর নিজের দোয়ার চেয়ে হুজুরের দোয়ার গুরুত্ব বেশি দেন।  এখন যদি আমি জোরে দোয়া না করি তাহলে অনেকে বলবেন, হুজুর দোয়াটাও করেন না।  মসজিদে হৈচৈ লেগে যাবে। মুসল্লিরা সবাই তো সব মাসয়ালা শোনে না।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর