বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঋণ জান্নাতের পথে বাধা

মুফতি মাও. মুহাম্মদ মানজুর হোসাইন

ঋণ জান্নাতের পথে বাধা

আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যথাযথভাবে আমানত ফিরিয়ে দাও। মানুষের মাঝে যখন বিচার করবে তখন ন্যায়বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের উত্তম উপদেশই দেন। (সূরা নিসা, আয়াত ৫৮)।  যথা সময়ে ঋণের অর্থ বা বস্তু ফিরিয়ে না দেওয়া যেমন ভয়াবহ অপরাধ তেমনি ঋণের অর্থ আত্মসাৎ করা কিংবা একেবারে না দেওয়াও বড় গুনাহ। একজন মানুষকে হত্যা করা যেমন কবিরা গুনাহ ও হারাম তেমনি কারও অর্থ আত্মসাৎ করাও কবিরা গুনাহ এবং হারাম। এ সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের অর্থ তেমনই হারাম যেমন তার রক্ত হারাম।’ (সহিহুল বুখারি)। অন্যত্র রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঋণ নেওয়ার সময়ই ফেরত না দেওয়ার নিয়ত করে সে কিয়ামতের আল্লাহর সামনে ‘চোর’ হিসেবে দাঁড়াবে। (ইবনে মাজাহ) কারণ ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়াও এক ধরনের চুরি। অর্থনীতিবিদরা একে গোপন চুরি বলে উল্লেখ করেছেন। ঋণ ফেরত দানকারীর অন্যান্য আমল যত ভালোই হোক সে বা তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার কপালে এ ঋণ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। এমনকি সে যদি মারাও যায় তারপরও এ থেকে রক্ষা পাবে না। সাহাবি ইবনে আত্বওয়াল (রা.) বলেন, আমার ভাই মারা গেলে রসুল (সা.) বলেন, তোমার ভাই ঋণের দায়ে আটকে আছে। আগে তার ঋণ পরিশোধ করে তাকে মুক্ত কর। (সহিহুল বুখারি) ঋণের দায়ে শুধু সাধারণ মুমিন নয় বরং শহীদরাও পার পাবে না। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয় তবে ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহি জামে) তিরমিজি ও ইবনে মাজার বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃত্যুর পর মুমিন বান্দা আত্তা ঋণের কারণে ঝুলে থাকে। ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না।’ (বায়হাকি)। ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা যাওয়ার ভয়াবহ কত বেশি এ হাদিসটি থেকে কিছুটা অনুমান করা যাবে। রসুলের খাদেম হজরত আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি মারা গেলে তার স্বজনরা এসে রসুল (সা.) বললেন, আল্লাহর নবী ওমুকের জানাজা পড়িয়ে দিন। রসুল (সা.) বললেন- সে তো ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেছে। তো এমন ব্যক্তির জানাজা পড়িয়েই বা কী লাভ হবে? ঋণের কারণে তার রুহ তো ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। আমি তখনই তার জানাজা পড়াতে পারব যখন কেউ তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নেবে। অন্যথায় আমি নবী জানাজা পড়ালেও তার তেমন কোনো উপকার হবে না। (তিবরানি)। 

লেখক : খতিব, বাইতুদ দাউদ জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর