বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সুন্দরবন রহস্য

সুদীপ্ত সুজন

সুন্দরবন রহস্য

দুই হাজার বছর আগেও সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল মানব সভ্যতা। সুন্দরবন সম্পর্কিত গবেষণায় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনকে নিয়ে বাঙালির অহংকার আকাশছোঁয়া। এই অহংকারের শিরস্ত্রাণে যুক্ত হয়েছে নতুন এক সোনালি পালক। যার বদৌলতে নতুন করে ইতিহাস লেখার তাগিদও অনুভব করছেন ইতিহাসবিদরা। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দরবন এলাকা থেকে পাওয়া বিভিন্ন উপকরণে স্পষ্ট হয়েছে খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে মৌর্য যুগেও এ এলাকায় জনবসতি ছিল। ৫০০ থেকে ৬০০ বছর পর্যন্ত টিকে ছিল সে সভ্যতা। সুন্দরবন সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তের অভাব থাকায় এ এলাকায় জনবসতি গড়ে তোলার জন্য ব্রিটিশদেরই কৃতিত্ব দেওয়া হতো। ১৭৫৭ সালে মোগল বাদশাহ দ্বিতীয় আলমগীরের কাছ থেকে সুন্দরবনের মালিকানা পায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এরপর ১৭৬৪ সালে এই বাদাবনের প্রথম মানচিত্র তৈরি করে তারা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, এর বহু আগে থেকেই সুন্দরবনে মানুষের বসবাস ছিল। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞ ফণীকান্ত মিশ্রের মতে, এই হারানো সময়টিকে খুঁজে বের করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জিততে সুনির্দিষ্ট স্থান ধরে তার প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু দিন থেকে খনন চালাচ্ছে। খননকৃত এলাকা থেকে মানুষ ও জীবজন্তুর যেসব টেরাকোটা মূর্তি উদ্ধার হয়েছে, তা খ্রিস্টাব্দ শুরুর সমসাময়িক, এমনকি তার আগের বলে মনে করা হচ্ছে। সিলমোহরের চিহ্ন আঁকা যেসব টেরাকোটার টুকরা পাওয়া গেছে তা প্রাগৈতিহাসিক যুগের বলেও সাক্ষ্য দেয়। বিস্ময়কর ঘটনা হলো, কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক বা ইতিহাসবিদের চেষ্টায় বিষয়টি সামনে আসেনি। বিশ্বজিৎ সাহু নামের এক জেলে নানা সময় মাছ ধরতে গিয়ে টেরাকোটার খেলনা, প্রাচীন পুঁতির মালা, লকেটের মতো বেশ কিছু জিনিস খুঁজে পান। এসবের সঠিক অর্থ বুঝতে না পারলেও তিনি এগুলো নষ্ট করে না ফেলে নিজের সংগ্রহে রেখে দেন। এভাবে গত ২২ বছরে প্রায় ১৫ হাজার প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করেন তিনি। এই জেলেই বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানান। সুন্দরবনে ইংরেজ শাসনামলের আগেই যে জনবসতি গড়ে উঠেছিল রাজা প্রত্যাপদিত্যের বিভিন্ন স্থাপনা তারই প্রমাণ। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবন এলাকায় তিনি স্থাপন করেছিলেন তার রাজধানী। ভারতের সুন্দরবন অংশ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশ অংশেও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে  ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত। বাদবাকি অংশ ভারতের পশ্চিমবাংলা রাজ্যের অংশ।  দেশের ইতিহাসের স্বার্থে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন এমনটিই কাঙ্ক্ষিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর