শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জেনে বুঝে পড়ুন কোরআন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

জেনে বুঝে পড়ুন কোরআন

মানব জাতির হেদায়াতের জন্য আল্লাহতায়ালা ‘কোরআন’ নামক একখানা গ্রন্থ দিয়েছেন। এ গ্রন্থ সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমেই মানব জাতি তার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন এবং মনজিলে মাকসুদে পৌঁছতে পারবে। আল্লাহ বলেন, এটি এক কল্যাণময় গ্রন্থ, যা আমি তোমার ওপর অবতীর্ণ করেছি। যাতে তারা এর আয়াতগুলো গবেষণা করে এবং জ্ঞানীরা এর থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদ : ২৯)। মহান আল্লাহর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মানুষ কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না। ফলে দুনিয়া এবং পরকালের সাফল্য অধরাই থেকে যায় মানব জীবনে। যারা কোরআন সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, তাহলে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করে না? নাকি তাদের হৃদয়গুলো তালাবদ্ধ হয়ে আছে? (সূরা মুহাম্মাদ : ২৪।) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, তারা কেন কোরআন নিয়ে গবেষণা করে না? যদি এ কোরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও থেকে আসত তবে এর মধ্যে অনেক গরমিল পাওয়া যেত। (সূরা নিসা : ৮২।)

রসুল (সা.) কোরআনের প্রতিটি শব্দ ও বাক্য গভীরভাবে অনুভব করে তেলাওয়াত করতেন। হজরত হুজায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাতে আমি রসুল (সা.) এর সঙ্গে নামাজ পড়ছিলাম। তিনি খুব ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করছিলেন। যখন আল্লাহর গুণগানের আয়াত আসত তখন তিনি সুবহানাল্লাহ বলতেন। প্রার্থনার আয়াত আসলে প্রার্থনা এবং কোনো কিছু থেকে পানাহ চাওয়ার হলে ‘আউজুবিল্লাহ’ বলে পানাহ চাইতেন। (মুসলিম)। এ থেকে বোঝা যায়, রসুল (সা.) বুঝে বুঝে তেলাওয়াত করতেন। না বুঝে তেলাওয়াত করাকে রসুল (সা.) পছন্দ করতেন না। তরুণ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) রসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হুজুর! আমি প্রতিদিন কোরআন খতম করতে চাই। রসুল (সা.) বললেন, তিন দিনের কম সময়ে খতম কর না। কারণ এতে কোরআনের কিছুই বোঝা যাবে না। (তিরমিজি)। রসুল (সা.)-এর স্পর্শধন্য সাহাবিরাও কোরআন গবেষণায় ছিলেন সজাগ ও সতর্ক। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ ১০ আয়াত শিখে তা অনুভব এবং আমল না করা পর্যন্ত সামনে বাড়ত না। (তাফসিরে তাবারি : ৮১)। তাবেয়ী আবদুর রহমান আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, আমাদের যারা কোরআন শেখাতেন তারা বলতেন, আমরা রসুল (সা.) থেকে ১০ আয়াত শিখতাম, বোঝতাম এবং আমল করতাম। তারপর সামনে সবক নিতাম। এভাবে কোরআন শেখার পাশাপাশি বোঝা এবং আমলও চর্চা হয়ে যেত আমাদের। (মুকাদ্দামা ইবনে কাসির)। ওমর (রা.)-এর পুত্র আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমার আব্বা ওমর (রা.) ১২ বছরে সূরা বাকারা শেষ করেন। যেদিন তিনি বাকারা খতম করেন ওই দিন তিনি একটি উট কোরবানি করে সবাইকে আহার করান। (তাফসিরে কুরতুবি : ৭৬)। ওমর (রা.)-এর মতো জলিলে কদর সাহাবির যদি সূরা বাকারা অধ্যয়নে এক যুগ লেগে যায় তবে আমাদের কত যুগ লাগার কথা? হায় আফসোস! আমরা কোরআন অধ্যয়ন এবং গবেষণা ছেড়ে দিয়েছি। আমরা শুধু কোরআন পড়ি ঠোঁটে ঠোঁটে। অথচ কোরআন পড়ার কথা ছিল অন্তরে অন্তরে। বুঝে বুঝে। কে কত খতম দিতে পারল এ প্রতিযোগিতাই উপমহাদেশের মুসলমানদের কোরআন গবেষণা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। কে যেন রটিয়ে দিল, না বুঝে কোরআন পড়লেও অনেক সওয়াব। সে থেকেই সওয়াবের পেছনে নিরন্তর ছুটে চলছে মানুষ। এদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন একদল লোকের গলায় কোরআন ঝুলিয়ে রাখা হবে, কারণ তারা কোরআন বুঝেনি, বোঝার চেষ্টাও করেনি। কোরআন যে একটি গ্রন্থ, এটিও বুঝে পড়ে বাস্তব জীবনে চর্চা করতে হবে— এ কথা শেখানো হয় না আমাদের।

তাই তো আল্লাহতায়ালা আমাদের কাঙ্ক্ষিত সাহায্য ও বিজয় দিচ্ছেন না। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কোরআনের খাদেম হিসেবে কবুল করুন।  আমরা যেন আবারও কোরআন চর্চা করে পৃথিবীকে জয় করতে পারি। আবারও যেন আমাদের হারানো গৌরব এবং সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে পারি এ মানবগ্রহে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর