রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জলবায়ু পরিবর্তনের অপপ্রভাব

বিপদ রুখতে সচেতন হতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দুনিয়ার যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ইতিমধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। সাগরের লোনা পানির প্লাবনে উপকূলবর্তী এসব মানুষ তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। ফসলের জমিতে লবণাক্ত পানির আগ্রাসনে তারা খাদ্যের অভাবেও ভুগছে। বিশুদ্ধ পানি উপকূলীয় অঞ্চলে ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ধান উৎপাদন শতকরা ১৭ ভাগ এবং গম উৎপাদন ৬১ ভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশ ক্ষতির সম্মুখীন হলেও বাংলাদেশে এর ব্যাপকতা হবে অনেক বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বর্তমানে যে হারে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে তাতে ২০৮০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের চাষযোগ্য ৪০ শতাংশ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উষ্ণতা ও সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এশিয়া ও প্যাসেফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নও থমকে যেতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের গবেষণায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাব্য যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা উদ্বেগের। বিপদ যে সত্যিকার অর্থেই ঘনিয়ে আসছে তা দেশের উপকূলীয় এলাকার বর্তমান জলাবদ্ধ অবস্থা তারই ইঙ্গিতবাহী। হাওরাঞ্চলের আগাম বন্যায় অন্তত এক কোটি মানুষের সারা বছরের খোরাকি নষ্ট হওয়ার ঘটনাও বিপদ সংকেতের আভাস দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর কাণ্ডজ্ঞানহীন শিল্পায়নের কারণেই বিশ্বের আবহাওয়া মণ্ডলের উষ্ণতা বাড়ছে। বিশ্বের আবহাওয়াকে উষ্ণ ও অসহিষ্ণু করার পেছনে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কোনো দায় না থাকলেও তাদের অস্তিত্বের সংকটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মানব জাতির অস্তিত্বের স্বার্থেই জলবায়ুর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঠেকাতে মানব সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর