বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইতিহাস

শান্তিদূত হয়ে এসেছিলেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.)

ঐতিহাসিক লিওনার্ড বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোনো মানুষ যদি আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে বুঝে থাকেন এবং প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর কোনো উপকার করে থাকেন, তবে সুনিশ্চিতভাবে তিনি আরবের ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (সা.)।’

ক্লেদাক্ত বিশ্বে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মুহাম্মদ (সা.) আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই জীবনের প্রাথমিক কাল থেকেই তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ ও শান্তিপ্রিয়। ছোটবেলা থেকেই মিথ্যা, প্রবঞ্চনা ও প্রতারণার প্রতি তার ঘৃণা ছিল। এ কারণে অল্প বয়সেই তিনি ‘আল-আমিন’ খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন। প্রাক-ইসলামী যুগে আরবের আকাশ-বাতাস-মৃত্তিকা যখন দলাদলি, হানাহানি আর রক্তপাতে বিষাক্ত, তখন তিনিই সর্বপ্রথম শান্তির ‘ললিতবাণী’ নিয়ে এগিয়ে আসেন। ‘হিলফ-উল-ফুজুল’ বা শান্তিসংঘ গঠন করে তিনি আরবের মাটিতে ভবিষ্যৎ শান্তির ক্ষেত্র রচনা করেন।

সারা জাহান যখন জুলুম ও অবিচারে নির্যাতিত-নিষ্পেষিত তখন হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়ায় এসেছিলেন মজলুম মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে। মাত্র ২০ বছর সময়ের মধ্যে তিনি সভ্যতা বিবর্জিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন পৌত্তলিক আরব জাতিকে এক সুসভ্য ধর্মাশ্রিত জাতিতে পরিণত করে তাদের নৈতিক ও আত্মিক পতনের অন্ধকূপ থেকে তৌহিদ, নীতিবোধ ও ন্যায়পরায়ণতার উচ্চতম স্তরে উন্নীত করেছিলেন। সব গোষ্ঠীকলহ দূরীভূত করে গোটা আরব জাতিকে তিনি ইমানভিত্তিক ঐক্যের বন্ধনে বেঁধেছিলেন। তাঁর দৃষ্টিতে ও তাঁর প্রণীত আইনের কাছে দোস্ত-দুশমন, মুসলিম-অমুসলিম সবাই ছিল সমান। তিনি ছিলেন দরিদ্র, অসহায়, দুর্বল ও মজলুমের বন্ধু। তিনি মানুষের হাসি-কান্নার শরিক ছিলেন। শোকার্ত ও দুঃখপীড়িত মানুষকে তিনি আন্তরিক সমবেদনা প্রদর্শন করতেন এবং তাদের দুঃখ ভোগের সঙ্গী হতেন। অভাবের সময় তিনি ক্ষুধার্তকে নিজ খাদ্যের ভাগ প্রদান করতেন এবং প্রতিবেশী প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আন্তরিকভাবে কামনা করতেন। তিনি দাসী ও অধীন লোকদের প্রতি সর্বাধিক মানবোচিত আচরণ করতেন। তার গোলাম আনাস বলেছেন, ‘আমি ১০ বছর নবী করীমের (সা.) গোলামী করেছি; কিন্তু কখনো তিনি আমার প্রতি বিরক্তিসূচক উহ্ শব্দটিও করেননি।’

নবী করীমের (সা.) চরিত্রে এতটুকুও প্রতিহিংসা বৃত্তি ছিল না। উপরন্তু, তিনি দুশমনকেও ক্ষমা ও করুণা প্রদর্শন করে আনন্দ লাভ করতেন। তিনি বলতেন, ‘শাস্তি দেওয়ার জন্য আমি আসিনি, শান্তিদূতরূপে এসেছি।’ এদিক দিয়ে তিনি ছিলেন মানব ইতিহাসে অতুলনীয় এবং সমগ্র দুনিয়ায় অদ্বিতীয়।

আত্মার মহত্ত্ব, অন্তরের পবিত্রতা, মিথ্যাচার, সুরুচিপূর্ণ মনোভাব ও কঠোর কর্তব্যনিষ্ঠা ছিল হজরত মুহাম্মদের (সা.) চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। মহানবী তার অনুসারীদের সর্বদা আগের ও পরের সব ধর্ম প্রচারকের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রদর্শনের উপদেশ দিয়ে গেছেন। তার আগে কোনো ধর্ম প্রচারক এমন মহৎ দৃষ্টান্ত রেখে যাননি। নম্রতা ও দয়া, ধৈর্য ও বদান্যতা তার আচণের সুপরস্ফুিট ছিল এবং চতুর্দিকে সব মানুষের প্রীতি আকর্ষণ করত। আমির আলী বলেছেন, ‘এত নির্মম, এত কোমল অথচ বীরোচিত স্বভাব-শ্রদ্ধায় নয়, বরং ভালোবাসাতেই অনুপ্রাণিত করত।’

সর্বশেষ খবর