শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

পানি আমাদের নিয়ামত

মো. আবু তালহা তারীফ

পানি জীবনের একটি উৎস ও আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশাল নিয়ামত। দুনিয়া ও আখিরাতে পানির বিশিষ্ট ভূমিকা থাকায় পবিত্র কোরআনে পানিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা ৪৬টি স্থানে পানির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। আকাশ, মাটি সৃষ্টি করার পর আল্লাহ পানি সৃষ্টি  করেছেন। পানি থেকেই সব প্রাণবান বস্তু সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তো পানি থেকেই সব প্রাণবান বস্তু সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩০)।

পানি শুধু জীবনের উৎস নয়, আল্লাহ যে ইবাদত করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো পবিত্রতা। পবিত্রতার প্রথম ও প্রধান উপকরণ হলো পানি। এ পানি আল্লাহ মানুষের প্রশান্তির জন্য আকাশ থেকে অবতরণ করেন, যাতে মানুষ পবিত্র হতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তিনি আরোপ করেন তোমাদের ওপর তন্দ্রাচ্ছন্ন তা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের ওপর আকাশ থেকে পানি অবতরণ করেন, যাতে তোমাদের পবিত্র করে দেন এবং যাতে তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের কুমন্ত্রণা।’ (সূরা আনফাল, আয়াত ১১)।

পানি ছাড়া এই সুন্দর বায়ুমণ্ডল অস্তিত্বহীন হয়ে যেত। তাই পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পানির অবদান অনস্বীকার্য। পানির মাধ্যমে গাছ জন্মে এবং যার মাধ্যমে আমরা পশুচারণ করি। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন এতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে গাছ জন্মে যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাকো।’ (সূরা নাহল, আয়াত ১০)।

পানি জান্নাতবাসীদের উপহার দেওয়া হবে ও জাহান্নামবাসীদের পানি থেকে বঞ্চিত করা হবে। জাহান্নামবাসীরা তাদের অত্যাচারের কষ্টে পানির পিপাসায় পড়ে জান্নাতিদের কাছে পানি চাইবে, কিন্তু তারা যেহেতু অবিশ্বাসী তাই তাদের পানি দেওয়া হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে, আমাদের ওপর কিছু পানি বা খাদ্য ফেলে দাও বা আল্লাহ তোমাদের যা দিয়েছেন তা থেকে, তারা বলবে আল্লাহ এ দুটি অবিশ্বাসীদর জন্য নিষিদ্ধ করেছেন।’ (সূরা আরাফ, আয়াত ৫০)। পানি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকভাবে অপচয় হচ্ছে। পানি আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত। এজন্য আল্লাহ পানির অপচয় করা নিষেধ করেছেন। পানির অপচয় করা ইসলামের দৃষ্টিতে এক মারাত্মক গর্হিত কাজ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আহার কর ও পান কর কিন্তু অপচয় করো না, তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ, আয়াত ৩১)।

রসুল (সা.) পরিমাণমতো পানি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। পরিমাণমতো পানি ব্যবহার করে অজু, গোসল কিংবা বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হবে। গোসলের সময় আমরা মাত্রাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করি, আবার মসজিদে অজু করতে গিয়ে পানির ট্যাপ ছেড়ে দীর্ঘ সময় লাগিয়ে অজু করি, মাথা কান গর্দান মাসেহ করার সময় যদি পানির ট্যাপ বন্ধ রাখি এবং স্বাভাবিকভাবে ট্যাপ ছেড়ে অজু করলে পানির অপচয় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল (সা.) একসময় হজরত সাদ (রা.)-এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। হজরত সাদ  তখন অজু করছিলেন। রসুল (সা.) বললেন, পানি অপব্যয় করছ কেন? সাদ (রা.) বললেন, অজুতেও কি পানির অপব্যয় হয়? রসুল (সা.) বললেন, প্রবহমান নদীতেও যদি তুমি অজু কর তবুও অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা যাবে না।’ (মুসনাদে আহমদ)। কিয়ামতের মাঠে আল্লাহতায়ালা সব নিয়ামত সম্পর্কে এক এক করে হিসাব নেবেন এবং পানির ব্যবহার সম্পর্কে হিসাব চাওয়া হবে। আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতারা এই পানির ব্যবহার সম্পর্কে লিখে রাখছেন, সামান্য অপচয় করলেও সেদিন হিসাব দিতে হবে। যেহেতু প্রতিটি বিষয় আল্লাহর দেওয়া ফেরেশতারা লিপিবদ্ধ করে রাখছেন তাই আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে তার প্রদত্ত রিজিক থেকে খেতে ও পান করতে হবে। এই পৃথিবীর জমিনে কোনো অবস্থায়ই কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রিজিক থেকে খাও এবং পান কর কিন্তু পৃথিবীর বুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ৬০)।

পানি কীভাবে পান করতে হবে সেই আদব প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন। বসে ডান হাত দিয়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে পানি পান করা সুন্নাত। তিন শ্বাসে পানি পান করা উত্তম। রসুল (সা.) পানি সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলো শুধু সুন্নত নয়, বরং এর প্রতিটিতে রয়েছে শরীর সুস্থ রাখার নিদর্শন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পানির পাত্র ঢেকে রাখো এবং বাসনগুলো উল্টে রাখো।’ (মুসলিম)।

ইসলামে অন্যকে পানি পান করানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে এবং এটি একটি পুণ্যের কাজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা পেল, সে কূপে নেমে পানি পান করল, পানি পান করে বের হয়ে সে দেখতে পেল একটি কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল কুকুরটিরও আমার মতো পানির পিপাসা পেয়েছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে ওপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পান করাল। মহান আল্লাহ তার কাজে সন্তুষ্ট হলেন এবং তার গুনাসমূহ ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রসুল! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলে সওয়াব হবে? রসুল (সা.) বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করলেই পুণ্য পাওয়া যাবে।’ (মুসলিম)।

লেখক : খতিব, রোহিতপুর বোর্ডিং মার্কেট জামে মসজিদ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর