বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যভিচারের পরিণাম খুবই ভয়াবহ

মোহাম্মদ ওমর ফারুক

ব্যভিচারের পরিণাম খুবই ভয়াবহ

হাদিসের বর্ণনা মতে, যে লোক কোনো বিবাহিতা নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তারা দুজনেই কবরে কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহর অর্ধেক শাস্তি ভোগ করবে।  উক্ত ব্যভিচারিণীর স্বামীর ব্যাপারে বলা হয়েছে, যদি সে স্বামীর অগোচরে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে থাকে, তবে হাশরের দিন তার স্বামীর বিচার তার পাপপুণ্য অনুযায়ী হবে। আর যদি এমন দুষ্কর্মের ব্যাপার জেনেও সে তা বন্ধের কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহপাক তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। কেননা আল্লাহপাক জান্নাতের প্রবেশপথে লিখে রেখেছেন— দায়ুসের জন্য তোমাকে (জান্নাতকে) নিষিদ্ধ করা হলো। ‘দায়ুস হচ্ছে সে লোক, যে নিজ পরিবারের অশ্লীল কার্যকলাপ জেনেও চুপ থাকে এবং বন্ধ করার কোনোই চেষ্টা চালায় না।’ আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘যে লোক কোনো পরনারীকে কামভারের সঙ্গে স্পর্শ করে, সে কেয়ামতের দিন হাত ঘাড়ের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় উত্থিত হবে। যদি সে কোনো পরনারীকে চুমু দিয়ে থাকে, তাহলে তার উভয় ঠোঁট কেটে ফেলা হবে। আর যদি তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে তার দুই ঊরুদেশ বাকশক্তিসম্পন্ন হয়ে তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে— আমার দ্বারা সে অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহপাক তখন তার দিকে ক্রুদ্ধভাবে তাকাবেন। তাতে তার মুখের গোশত খসে পড়বে। অতঃপর সে অস্বীকার করে বলবে : ‘না আমি কখনো এমন কাজ করিনি।’ তার রসনা তখন তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে, ‘আমায় দিয়ে সে নিষিদ্ধ কথা বলেছিল; তার হাত এই বলে সাক্ষ্য দেবে, ‘আমি নিষিদ্ধ বস্তু ধরেছি।’ তার নয়নযুগল সাক্ষ্য দেবে, ‘আমি অবৈধ বিষয় দেখেছি।’ তার দুটি পা বলবে : ‘আমি নিষিদ্ধ কাজের জন্য গমন করেছি।’ তার জননেন্দ্রিয় বলবে : ‘আমি ব্যভিচার কার্য ঘটিয়েছি।’ মোহাফেজ বা প্রহরী ফেরেশতা বলবে : ‘আমি শুনেছি।’ অপর ফেরেশতা বলবে : ‘আমি লিখে নিয়েছি।’ আর মহান আল্লাহপাক বলবেন : ‘ওহে ফেরেশতাকুল! আমি জানতাম, কিন্তু গোপন রেখেছি।’ অতঃপর তিনি ফেরেশতাদের উদ্দেশ করে বলবেন : ‘তোমরা একে পাকড়াও কর এবং আমার শাস্তি ভোগ করাও। কেননা আমার ব্যাপারে যার লজ্জা শরম কম, তার ওপর আমার ক্রোধ কঠোর ও তীব্রতর হয়।’ এ হাদিসটি আল্লাহ নিম্নোক্ত ঘোষণার মাধ্যমে সুপ্রমাণিত। আল্লাহ বলেন— ‘সেদিন তাদের জিহ্বা তাদের হাত ও পা তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, ইহজীবনে যা তারা করত।’ — সূরা আননূর-২৪। সবচেয়ে জঘন্য ও নিকৃষ্টতর ব্যভিচার হচ্ছে মাহরাম অর্থাৎ যাদের বিয়ে করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ, এমন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। নিষিদ্ধ নারীদের মধ্যে রয়েছে, মা, খালা, বোন, বিমাতা প্রভৃতি। হাকেমের বর্ণনায় আছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে লোক কোনো মাহরাম অর্থাৎ নিষিদ্ধ রমণীর সঙ্গে ব্যভিচার করে, তাকে হত্যা কর।’ হজরত বারা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) তার মামাকে এমন এক লোককে হত্যা ও তার সম্পদ আটক করার নির্দেশ দিয়ে পাঠান, যে স্বীয় বিমাতাকে বিয়ে করেছিল অর্থাৎ তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিল। মহান আল্লাহপাক যেন আমাদের এসব জঘন্য মহাপাপ থেকে হেফাজত করেন।  আর যারা এ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে, তাদের তওবা করার সুযোগ দিন এবং মাফ করে দিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর