সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

নারী হজযাত্রীদের জানার বিষয়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নারী হজযাত্রীদের জানার বিষয়

হানাফি ও হাম্বলি বিশেষজ্ঞদের মতে, মহিলাদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম শর্ত। মাহরাম না থাকলে অঢেল সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও  তার ওপর হজ ফরজ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে, ২/১২৩।)  কোনো মহিলা যদি মাহরাম ছাড়া হজ করে তবে হজ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাহরাম ব্যতীত সফর করার কারণে গুনাহগার হবে। (হেদায়া, ১/২১৩।) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না। এক সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রসুল (সা.)! আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। রসুল (সা.) বললেন, তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।’ (সহি বুখারি, ১৭৪০; সহি মুসলিম, ৩১৩৬।) শাফেয়ি ও মালেকি বিশেষজ্ঞদের মতে, মহিলাদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম শর্ত নয়, শর্ত হলো তার নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া। সফরের পথ যদি নিরাপদ হয় তবে মাহরামহীন একজন মহিলা একদল মাহরামওয়ালী মহিলার সঙ্গে হজে যেতে পারবেন। (আল উম্ম, ২/১২৭।) আদি ইবনে হাতেম (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আদি! তোমার জীবনকাল যদি দীর্ঘ হয়, তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, ইরাকের হীরা অঞ্চল থেকে একজন মহিলা একাকী উটের হাওদায় বসে কাবা তওয়াফ করবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না।’ (সহি বুখারি, ৩৪০০; সহি মুসলিম, ২৮৯৪।)

মহিলাদের জন্য স্বামীর অনুমতি শর্ত নয়। তবে সব কাজে স্বামীর অনুমতি নেওয়া ও পরামর্শভিত্তিক কাজ করা মুস্তাহাব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা পরামর্শভিত্তিক কাজ কর’। (আলে ইমরান, ৩:১৫৯।) মাহরাম পাওয়া গেলে স্বামী অনুমতি না দিলেও হজ সম্পন্ন করা আবশ্যক। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোনো মানুষের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য তো কেবল ভালো কাজে। (সহি বুখারি, ৪৩৪০; সহি মুসলিম, ১৮৪০।) স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত অথবা তালাকের ইদ্দত পালনকারিণী মহিলার জন্য হজে যাওয়ার অনুমতি নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যাবে, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে।’ (সুরা বাকারা, ২:২৩৪।) ইদ্দত শেষ হলে পরের বছর (সামর্থ্য থাকলে) হজ করবে। (ফতোয়ায়ে রমিয়া, ৮/৬২-৬৩।) তবে হজের টাকা জমা দেওয়ার পরে স্বামী মারা গেলে সম্পদ রক্ষার্থে ও সম্পদের অপচয় রোধে একদল বিশেষজ্ঞের মতে, ইদ্দত অবস্থায় হজ করার অবকাশ রয়েছে। (দুররুল মুখতার, ৫/২৫।)

ইমাম আবু হানিফা ও শাফেয়িসহ অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, হায়েজ ও নিফাসগ্রস্ত মহিলাদের ইহরাম বাঁধার আগে গোসল করা মুস্তাহাব। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আসমা বিনতে উমায়স (রা.) যুলহুলায়ফা নামক স্থানে আবু বকরের পুত্র মুহাম্মাদকে প্রসব করলেন। রসুল (সা.) আবু বকরের মাধ্যমে তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন। (সহি মুসলিম, ২৭৭৩।) গোসল করা সম্ভব না হলে বা অসুবিধা বোধ করলে অজু করবে। (আসান ফেকাহ, ২/১৬২।) হায়েজ ও নিফাস অবস্থায় মহিলারা তওয়াফ ব্যতীত হজের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। স্রাব শেষ হলে পবিত্র হয়ে তওয়াফ করবে। আর ওষুধের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রেখে হজ করাও জায়েজ। তবে এমনটি করা নিষ্প্রয়োজন। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১৫/৪৯১; ফাতহুল কাদির, ২/২৩৩; ফতোয়ায়ে রমিয়া, ৮/৮৭।)

ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট রঙের বা ধরনের পোশাক নেই। ভালোভাবে সতর ঢাকা যায় এমন পোশাকই মহিলাদের ইহরামের পোশাক। খুব রংচটে (যা অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে), আঁটসাঁট কিংবা পুরুষদের মতো পোশাক সর্বাবস্থায় মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ। (আসান ফেকাহ/১৬৩।) নিকাব দিয়ে মুখ ঢাকা ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুহরিম মহিলা মুখ ঢাকবে না। (সহি বুখারি, ১৮৩৮।) ইহরাম অবস্থায় মহিলারা গায়রে মাহরাম থেকে নিজেদের চেহারা সংরক্ষণ করতে পারবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা ইহরাম বেঁধে রসুলের (সা.) সঙ্গে সফর করতাম। এ সময় আমাদের চেহারা খোলা থাকত। আমাদের পাশ দিয়ে কোনো পুরুষ অতিক্রম করলে মাথা থেকে চাদরের আঁচল টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার খুলে ফেলতাম। (সহি বুখারি, ১৮৩৩।)  সব আলেম একমত, ইহরামের সময় মহিলা পুরুষের মতো ‘ইদতেবা’ (ইহরামের চাদরের মধ্যাংশ ডান বগলের নিচে এবং দুই মাথা বাম ঘাড়ের ওপর ফেলে রাখা) এবং তওয়াফ ও সায়ির সময় ‘রমল’ (ঘাড় উঁচু করে বড় কদমে দ্রুত বেগে চলা) করবে না। (তাহমিদু ইবনে আবদুল বার, ২২/৭৮।)

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

     www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর