শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

হজের ফজিলত ও গুরুত্ব

মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান, সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

হজ ইসলামের পাঁচ রুকনের অন্যতম একটি। যারা আর্থিক ও শারীরিক দিক থেকে সামর্থ্যবান তাদের ওপর সারা জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে শরিয়তের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থান তথা বায়তুল্লাহ এবং সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে সম্পন্ন করাই ইসলামের পরিভাষায় হজ।

এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর হজ করা তার অবশ্যকর্তব্য। আর যে প্রত্যাখ্যান করল সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মোটেই মুখাপেক্ষী নন।’

নবী (সা.) একাধিক হাদিসে হজের ফজিলতের বিষয় আলোচনা করেছেন। বুখারি ও মুসলিমের এক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো কোন আমল অধিক উত্তম। তিনি বললেন, আল্লাহ ও রসুলের প্রতি ইমান আনা। প্রশ্ন করা হলো, এরপর কোনটি? জবাব দিলেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, এরপর কোনটি? উত্তর দিলেন, মকবুল হজ। অন্য হাদিস : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করল এবং স্ত্রী সম্ভোগ ও কবিরা গুনা থেকে বিরত রইল, সে মাতৃগর্ভ থেকে সদ্যপ্রসূতের মতো নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করল। বুখারি।

আরও বর্ণিত হয়েছে : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ পরপর আদায় কর, কেননা এ দুটি কাজ দারিদ্র্য ও গুনা নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যেমন বেত লোহার মরিচা এবং সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়। আর কবুল হওয়া হজের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমদ।

হজের গুরুত্ব : হজ উম্মতে মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হাকিম ও প্রজ্ঞাময়। তাঁর কোনো কাজই হিকমত থেকে খালি নয় আর হজের ঐতিহাসিক কার্যক্রম মুসলিম উম্মাহর জন্য মূলত ঐক্য ও সংহতির প্রতীক, যা বর্তমান মুসলিমের জন্য অনুকরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। হজ এমন একটি ইবাদত, যার অসিলায় মানব জীবনের গুনাসমূহ মাফ হয় আর মকবুল হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। সে লক্ষ্যে হজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া হজের মাধ্যমে গোটা মুসলিম ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়। কাবা চত্বর লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হয় এবং একত্রে ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা বিশ্বভ্রাতৃত্ব স্থাপনে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। হজ মুসলিম উম্মাহর বর্ণগত বৈষম্য দূরীভূত করে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়; যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। হজ যেহেতু গোটা মুসলিম উম্মাহর এক মহামিলন কেন্দ্র, এ উদ্দেশ্যে মুসলিম জাতির সব শ্রেণির মানুষ পবিত্র কাবায় এসে সমবেত হয়। এ সুবর্ণ সুযোগে মুসলিম উম্মাহ বিশ্বশান্তি স্থাপন ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করতে প্রয়াস পায়, যা এ অশান্ত পৃথিবীতে বর্তমান সময়ের দাবি বিধায় হজের গুরুত্ব সমকালীন সংকট নিরসনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া হজ সম্পাদনের কারণে পারস্পরিক খোঁজখবর নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ সব হাজীর মধ্যে জাগ্রত হয়।

পরিশেষে বলা যায়, হজ হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ; যাতে মুসলিম জাতির শান-শওকত প্রদর্শিত হয়। উম্মাহর শক্তি সুসংহত হয় এবং সুখ্যাতি ও গৌরব গোটা জাহানে ছড়িয়ে পড়ে, যা সারা জাহানের জন্য শান্তির পয়গাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর