মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুখলিস আমলকারী

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

বর্তমান জমানায় ইখলাসপূর্ণ আমলকারী খুব কমই আছে। আমাদের আমলের মধ্যে ইখলাস পয়দা হয় না। যাদের মনে সুন্নাত ও ইখলাসের গুরুত্ব নেই তারা যদি সূরা ইখলাস বেশি বেশি পাঠ করেন তাহলে আল্লাহ তার আমলের মাঝে ইখলাস পয়দা করে দেবেন এবং অন্তরে আমলের গুরুত্ব সৃষ্টি করে তাকে আমলি জিন্দেগি দান করবেন। হাদিসে আছে, কেউ যদি এ সূরা বিশবার পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে কমপক্ষে দুটি বাসস্থান তৈরি করা হবে। আর তিনবার পাঠের বরকতে এক খতম কোরআনের সওয়াব দান করা হবে। কোনো মৃত ব্যক্তির নামে বখশিয়ে দিলে পূর্ণ এক খতম কোরআনের সওয়াব মাইয়্যেত পেয়ে যাবে।

আল্লাহ-প্রদত্ত ছোট ছোট আমলের গুরুত্ব আমাদের কাছে নেই বললেই চলে। কারণ, আমাদের মাঝে সহজলভ্য বস্তুর দাম কম। অথচ হাজার হাজার টাকা খরচ করে মিলাদ ও বিভিন্ন ধরনের খতম-দোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে হিসাবে সওয়াবের পরিবর্তে উভয় পক্ষ গুনাগার হয়। আমাদের কাছে এটা খুব গুরুত্বের। অথচ এত আয়োজন না করে নিজে তিনবার সূরা ইখলাস পড়ে মাইয়্যেতের রুহের মাগফিরাতের জন্য বখশিয়ে দেওয়া আমাদের কাছে কোনো গুরুত্বই রাখে না।

আজানের দোয়া পাঠ করলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইস্তেকবাল করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। এত বড় ফজিলতপূর্ণ আমলের প্রতিও ভ্রূক্ষেপ নেই আমাদের।

শুক্রবারের ছয়টি বিশেষ আমলের কথা আমরা মনে রাখি না। যার ওপর আমল করলে আল্লাহ প্রতি কদমে এক বছরের নফল নামাজ ও এক বছর নফল রোজার সওয়াব দান করেন। এ মহান সওয়াবের আমলও আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। শুধু সহজলভ্য সওয়াব হওয়ার কারণে মূল্যহীন হয়ে আছে। শুক্রবার আসরের পরে যে মহা ফজিলতের দরুদের আমল রয়েছে, সেটাই কজনে মনে রাখি? শুক্রবার আসরের পর একটি বিশেষ দরুদ ৮০ বার পাঠ করলে ৮০ বছরের গুনা মাফ হয়ে যায় এবং ৮০ বছর ইবাদত করার সওয়াব হাসিল হয়। আর যারা দরুদ বেশি বেশি পাঠ করে তাদের ইমানি মউত নসিব হবে। মাগরিবের ৫-১০ মিনিট আগে যে কোনো বৈধ বিষয়ের দোয়া করা হোক তা কবুল হবে। যে ব্যক্তি শুক্রবার সূরা কাহাফ পাঠ করবে, সে কবরে, হাশরে, দুনিয়ায় অর্থাৎ সব জায়গায় দাজ্জালি ফিতনা থেকে বেঁচে থাকবে।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় দয়ালু ছিলেন। তিনি জানতেন  উম্মতের বয়স খুব কম হবে। ফলে ৫০০-১০০০ বছর ইবাদতকারীর তুলনায় তার উম্মতের নেকি কম হয়ে যাবে। তাই হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের হিত কামনা করে ঐশী ভাণ্ডার থেকে ছোট ছোট আমল চেয়ে এনেছেন।

হাঁটতে চলতে প্রভৃতি আমল পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে ছিল না। এগুলো মহান আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। যাতে ৬০ বছর হায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তির ফজিলতপূর্ণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমল দ্বারা ৫০০-১০০০ বছর হায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তির আগে জান্নাতে যেতে পারে। আল্লাহ আমাদের জান্নাত হাসিল করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর