শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

সম্প্রীতির মডেল হাটহাজারী

এ সুবাস ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে

বাংলাদেশকে বলা হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশেই সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতির সম্পর্ক বিরাজ করছে শত শত বছর ধরে। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ এ দেশে পাশাপাশি বাস করছে সুপ্রতিবেশীর মতো। দেশের ইসলামী শিক্ষার সবচেয়ে বড় কেন্দ্র চট্টগ্রামের দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা। হেফাজতে ইসলামেরও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই মাদ্রাসাটি। শত বছরের বেশি সময় ধরে দেশের প্রধান এই কওমি মাদ্রাসার সীমানা দেয়ালের পাশেই সহাবস্থান করছে সনাতনধর্মের শ্রীশ্রী সীতাকালী মন্দির, যা মাদ্রাসার প্রধান মসজিদের মাত্র কয়েক গজ দূরে অবস্থিত। কিন্তু মন্দিরের পূজারিরা মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকের কাছ থেকে কখনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হননি।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে শ্রীশ্রী সীতাকালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সব সময় মন্দিরের ব্যাপারে আন্তরিক। তারা কখনো মন্দিরের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেন না। অন্যদিকে মন্দিরের পূজারিরাও চেষ্টা করেন, যাতে তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মাদ্রাসা বা মসজিদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়। শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম যার যার অবস্থানে থেকে হাটহাজারীতে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। বাবরি মসজিদ ভাঙা, কিংবা গুজরাটের দাঙ্গার রেশ, অথবা হালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও এখানে ছিল ব্যতিক্রমী চিত্র। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়ও একে-অন্যের ওপর হামলা দূরে থাক, উল্টো মাদ্রাসাছাত্ররা পাহারা দিয়ে মন্দির রক্ষা করেছেন। ইসলাম যে সত্যিকারভাবে অন্য ধর্মের অনুসারীদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, সে নজির দেখিয়েছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। হাটহাজারী মাদ্রাসার মসজিদের পাশে মন্দিরের অবস্থান এবং দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সেই চেতনাই ধারণ করছে। অসাম্প্রদায়িকতার এই চেতনা সবার জন্য অনুসরণীয় হওয়া উচিত। হাটহাজারীর অসাম্প্রদায়িকতার সুবাস দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক— এমনটিই কাম্য।

সর্বশেষ খবর