শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

পবিত্র কোরআনে হজের নির্দেশনা

আবদুর রশিদ

পবিত্র কোরআনে হজের নির্দেশনা

‘হজ’ আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ অভিপ্রায় বা সংকল্প করা, কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করা। শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট তারিখে মক্কার কাবাঘর এবং এর সংলগ্ন কয়েকটি স্থানে ইসলামের বিধানানুযায়ী অবস্থান করা বা জিয়ারত করাকে হজ বলা হয়। হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাকে কেন্দ্র করে আল্লাহর নির্দেশিত নিয়মে হজ প্রবর্তন করেন। উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর নবম হিজরিতে তা ফরজ হয়। শরিয়তের বিধান মোতাবেক নারীপুরুষনির্বিশেষে প্রত্যেক সমর্থ মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। হজ ফরজ হওয়ার শর্ত সাতটি। যেমন— ১. সুস্থ মস্তিষ্ক হওয়া ২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৩. স্বাধীন হওয়া ৪. সুস্থ হওয়া ৫. যাতায়াত ও মক্কায় অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ থাকা ৬. রাস্তা নিরাপদ হওয়া এবং ৭. ফিরে আসা পর্যন্ত স্ত্রীলোকদের জন্য স্বামী অথবা এমন কোনো আত্মীয় সফরসঙ্গী থাকা আবশ্যক যার সঙ্গে বিয়ে হারাম। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে কেবল হজই শারীরিক ও    আর্থিক উভয় ইবাদতকে শামিল করে। মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে হজ ঐতিহাসিক গুরুত্ব পালন করে।

আল কোরআনের বিভিন্ন স্থানে হজের নির্দেশনা রয়েছে। যেমন— ১. মানুষের ওপর আল্লাহর এ অধিকার যে, বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার শক্তি-সামর্থ্য যে রাখে, সে যেন হজ করে এবং যে এ নির্দেশ অমান্য করবে কুফরির    আচরণ করবে, তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ বিশ্বপ্রকৃতির ওপর অবস্থানকারীদের মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে-ইমরান : ৯৭)।

২. আর লোকদের মধ্যে হজের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে সব দূরবর্তী স্থান থেকে হেঁটে ও উটের ওপর সওয়ার হয়ে আসবে। যাতে তারা তাদের কল্যাণ ও নির্দিষ্ট দিনগুলোয় আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেওয়া জীবিকা হিসেবে  চতুষ্পদ জন্তু জবাই করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং অভাবপ্রস্তকে আহার করাও। (সূরা হজ : ২৭-২৮)।

৩. হজের মাসসমূহ সবারই জ্ঞাত। যে ব্যক্তি এ নির্দিষ্ট মাসসমূহে হজের নিয়ত করবে, তাকে এদিক দিয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে, হজকালীন তার দ্বারা যেন কোনো পাশবিক লালসা তৃপ্তির কাজ, কোনো জেনা-ব্যভিচার, কোনো রকমের লড়াই-ঝগড়ার কথাবার্তা অনুষ্ঠিত না হয়। আর তোমরা যা কিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ তা জানেন। আর তোমরা উত্তম পাথেয় সঙ্গে নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহর ভয়। হে বুদ্ধিমান লোকেরা! তোমরা শুধু আমাকে ভয় কর। (সূরা বাকারা : ১৯৭)।

৪. যখন আমি কাবাঘরকে মানব জাতির জন্য সম্মিলন ও নিরাপত্তা স্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকে সালাতের স্থান বানাও এবং ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সূরা বাকারা : ১২৫)।

৫. তোমাদের ওপর তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ তালাশ করতে কোনো পাপ নেই। (হজের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য নিষিদ্ধ নয়) অতঃপর যখন তাওয়াফের জন্য ফিরে আসবে আরাফাত থেকে, তখন ‘মাশআরে হারামের’ কাছে আল্লাহকে স্মরণ করো। আর তাঁকে স্মরণ কর তেমন করে, যেমন তোমাদের হিদায়াত করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই এর আগে তোমরা ছিলে অজ্ঞ। অতঃপর তাওয়াফের জন্য দ্রুত গতিতে সেখান থেকে ফিরে এসো, যেখান থেকে সবাই ফিরে আসে আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী ও করুণাময়। (সূরা বাকারা : ১৯৮-১৯৯)।

৬. নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরের হজ কিংবা ওমরা সম্পন্ন করবে, এ দুই পর্বতের মধ্যে দৌড়ানো তার পক্ষে কোনো পাপের কাজ নয়। আর যে ব্যক্তি নিজ ইচ্ছা, আগ্রহ ও উৎসাহে কোনো মঙ্গলজনক কাজ করবে, আল্লাহ তার সম্পর্কে অবহিত এবং এর পুরস্কার দান করবেন, তিনি সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা) : ১৫৮)।

৭. তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টিবিধানের জন্য যখন হজ ও ওমরার নিয়ত করবে, তখন তা পূর্ণ করবে, আর কোথাও যদি পরিবেষ্টিত হয়ে পড়, তবে যে কোরবানি সম্ভব তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পেশ করে দিও এবং নিজেদের মুণ্ডন করো না যতক্ষণ না কোরবানি এর নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যায়। কিন্তু যে ব্যক্তি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোনো অসুখ থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে কিংবা ফিদিয়া দেবে অথবা কোরবানি করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ ও ওমরা একত্রে একসঙ্গে পালন করতে চায়, তবে যা কিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কোরবানি করাই তার ওপর কর্তব্য। বস্তুত যারা কোরবানির পশু পাবে না, তারা হজের দিনগুলোর মধ্যে তিনটি রোজা আর সাতটি রোজা রাখবে ফিরে যাওয়ার পর এভাবে ১০টি রোজা পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য, যারা মসজিদুল হারামের পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আর জেনে রাখো, আল্লাহর আজাব বড়ই কঠিন। (সূরা বাকারা : ১৯৬)।

লেখক : ইসলামী গবেষক

সর্বশেষ খবর