শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসলামে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

ইসলামের দৃষ্টিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অংশ। যে দৈহিকভাবে পবিত্র থাকে না তার মনও তাতে প্রভাবিত হয়। যে কারণে সালাত আদায়ের জন্য অজু করতে হয়। নাপাক অবস্থা থেকে পাক হওয়ার জন্য মলমূত্র ত্যাগের পর সঠিকভাবে পরিচ্ছন্ন হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকার করেছে, যে মানুষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে মানসিক দিক থেকেও সে অধিকতর সুস্থ থাকে। এমনকি শারীরিক সুস্থতার জন্যও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।

মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন : ‘তোমার পোশাক পবিত্র কর।’

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একবার নবী আকরাম (সা.) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মন্তব্য করলেন : ‘এই কবরবাসীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, অথচ তাদের কোনো বড় কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজন চোগলখোরি করত, অন্য জন মূত্র ত্যাগের পর পুরোপুরি পবিত্র হতো না।’ সহি বুখারি ও মুসলিম। রসুল (সা.) আরও বলেন : ‘তোমরা প্রস্রাব থেকে পাক-পবিত্র থাকো। কেননা অধিকাংশ কবরের আজাব এজন্যই হয়।’ দারে কুতনি। অতএব যে লোক প্রস্রাব থেকে শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছদ পুরোপুরি পবিত্র করে না, তার নামাজ দুরস্ত হয় না। হাফেজ আবু নাইম হেলইয়া কিতাবে শাকি বিন মাতে আলআসবাহি থেকে বর্ণনা করেছেন, রসুল (সা.) বলেন : ‘এমনিতেই তো জাহান্নামিরা অসংখ্য দুঃখ-কষ্টের মধ্যে অবস্থান করতে থাকবে। তার ওপর আবার চার ধরনের লোকের জন্য তাদের দুঃখ-কষ্ট ভোগ বহুগুণে বেড়ে যাবে, ফলে তারা গরম পানি ও আগুনের ভিতর দিয়ে (দিশাহারার মতো) এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকবে এবং নিজেদের মরণ ও বিনাশ প্রত্যাশা করবে। অবশেষে জাহান্নামিরা পরস্পরকে প্রশ্ন করবে : কারা এ চারজন, জাহান্নামে এসে যারা আমাদের দুঃখ-কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে? উত্তরে অন্যজন বলবে : তাদের একজনকে আগুনের খোপে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আর একজন নিজের বেরিয়ে যাওয়া নাড়িভুঁড়ির বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। আর একজনের মুখ দিয়ে অবিরাম ধারায় রক্তবমি হচ্ছে। আর একজন আপন দেহের গোশত কামড়ে খাচ্ছে। অনন্তর খোপে রুদ্ধ জনকে উদ্দেশ করে বলা হবে : এ অভিশপ্তের কী হয়েছে যে, সে আমাদের দুঃখ-কষ্ট বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? সে জবাব দেবে : এ কারণে আমি অভিশপ্ত যে, আমি বিভিন্ন উপায়ে মানুষের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করতাম, তারপর সেসব ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছি। অনন্তর আপন নাড়িভুঁড়ির বোঝা বয়ে বেড়ানো জনকে একই প্রশ্ন করা হবে। সে উত্তর দেবে : আমি এ কারণে অভিশপ্ত যে, আমি প্রস্রাবের ব্যাপারে সতর্ক ছিলাম না, তা পরিষ্কার করতাম না। ইবনে আবিদ্দুনইয়া, তাবারানি, তারগিব তারহিব। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই গুরুতর কবিরা গুনা থেকে দূরে থাকার তওফিক এনায়েত করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর