শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইতিহাস

মানবতার পথিকৃৎ হজরত মুহাম্মদ (সা.)

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ‘মানুষের মুক্তিসাধন, মানুষের ঐক্যবিধান, মানুষকে শিক্ষাদান— এক কথায় মানুষকে সত্যিকার মানুষে পরিণত করা।’ এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। উম্মতের জন্য তিনি সংগ্রাম করেছেন, উম্মতের কল্যাণ কামনা নিয়ে তিনি দুনিয়া ত্যাগ করেছেন এবং উম্মতের পরিত্রাণকর্তা হয়ে তিনি আবার একদিন তাদেরই পুরোভাগে দাঁড়াবেন। সরলতা, আন্তরিকতা, সত্যনিষ্ঠা ও সততা ছিল নবী করিম (সা.)-এর চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দরিদ্র এতিম বালকরূপে জীবন শুরু করে হজরত মুহাম্মদ (সা.) শক্তিমান রাজ্য শাসকের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছিলেন, কিন্তু কখনো রাজকীয় আড়ম্বরে জীবন অতিবাহিত করেননি। বিপুল অস্ত্রশস্ত্র, বিরাট সেনাবাহিনী, সিপাহিসাস্ত্রী, বালাখানা ও বিপুল রাজস্ব তার আধিপত্যে ছিল না; তথাপি তিনি ছিলেন রাজকীয় সম্মানের অধিকারী।

এক বিশাল সাম্রাজ্যের শাসক হয়েও তিনি দীনতম মানুষের সঙ্গে পূর্ণ সাম্যের মনোভাব নিয়ে মিশতেন। তিনি তাঁর পত্নীদের গৃহকাজে সাহায্য করতেন, পশু চরাতেন, কাপড় সেলাই করতেন, ছাগল বাঁধতেন এবং এমনকি নিজ পাদুকা পর্যন্ত সেলাই করতেন। এ সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালি লিখেছেন : ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.) পালিত পশুপাখিদের স্বয়ং আহার্য দান করতেন, বকরি দোহন করতেন, গৃহ মার্জন করতেন, খাদেমের সঙ্গে একত্রে খেতেন, ভৃত্যের কাজে সাহায্য করতেন এবং বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য কিনে আনতেন।’ মদিনায় যখন একটি মসজিদ নির্মাণ হচ্ছিল তখন তিনি সাধারণ দিনমজুরের মতো মাথায় করে ইটের বোঝা বহন করেছিলেন। এভাবে তিনি শ্রমকে উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ব ইতিহাসের এক অনন্যসাধারণ কীর্তিমান মহাপুরুষ। Encyclopaedia Britanica-য় বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের সব ধর্ম প্রচারকের মধ্যে মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বাধিক সফল ব্যক্তি।’ আরবদের জীবনের এক অন্ধকারময় সময়ে তিনি তাদের মধ্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তিনি যুগ যুগ লালিত পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কারের অচলায়তন ভেঙে গোত্রভিত্তিক সমাজব্যবস্থার পরিবর্তে ধর্মাশ্রয়ী এক নতুন সমাজব্যবস্থার পত্তন করেছিলেন।

অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুর্ধর্ষ পৌত্তলিক আরবদের নির্ভীকতা, যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও স্বাধীনতা স্পৃহাকে ইসলামের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টার ফলেই মুসলমানরা একটি সুশৃঙ্খল, সুসভ্য ও দিগ্বিজয়ী জাতিতে পরিণত হয়েছিল।

            শাকিলা জাহান

সর্বশেষ খবর