শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

পবিত্র উমরাহর ফজিলত ও নিয়ম

মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

পবিত্র উমরাহর ফজিলত ও নিয়ম

জিলহজ মাসের ৯-১৩ তারিখ হচ্ছে পবিত্র হজের নির্দিষ্ট সময়। এ সময়ের বাইরে হজ করা যায় না।

উমরাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। শুধু হজের দিনগুলো ছাড়া বছরের বাকি সময়গুলোতে উমরাহ করা যায়। বিশেষ করে রমজানের সময় উমরাহর ফজিলত অনেক বেশি। তারপরও বিশ্বের মুমিন মুসলিম হজের জন্য বাইতুল্লায় আগে আগে গেলে হজের আগে উমরাহ করে থাকেন। আবার অনেকে হজ ও উমরাহর ইহরাম একসঙ্গে বেঁধে উল্লিখিত সময়ের আগেই উমরাহ আদায় করেন এবং সেই ইহরাম দিয়ে পবিত্র হজও সম্পাদন করেন। এখানে উমরাহর ফজিলত ও উমরাহ করার নিয়ম তুলে ধরা হলো।

উমরাহর ফজিলত

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এক উমরাহ হতে অন্য উমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সবকিছুর গুনাহের কাফফারা। আর মাবরুর হজের প্রতিদান হলো জান্নাত (বোখারি ও মুসলিম)। অন্য হাদিস শরিফে প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা বার বার হজ ও উমরাহ আদায় কর, কেননা এ দুটো দরিদ্রতা ও গুনাহকে সেভাবে মুছে ফেলে, যেভাবে কর্মকারের হাওয়া দেওয়ার যন্ত্র লোহার ময়লাকে দূর করে থাকে। (নাসায়ী- হাদিস সহিহ)।

ইহরাম বাঁধা ফরজ

পুরুষরা ইহরামের জন্য প্রস্তুতকৃত সাদা দুটি চাদর ও মহিলারা তাদের সাধারণ পোশাক পরে মিকাত ছেড়ে যাওয়ার সময় নিয়তের সঙ্গে বলবেন, ‘লাব্বাইকা উমরাতান বা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান’। উমরাহ যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তবে অন্তরের নিয়তের সঙ্গে ‘লাব্বাইকা উমরাতান আন’ এর পরে তার নাম উচ্চারণ করতে হবে। পবিত্র কাবাঘর দেখার আগ পর্যন্ত তালবিয়া ও অন্যান্য সব ধরনের দোয়া পড়তে হবে। তালবিয়া হলো ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারিকা লাক।’

ইহরামের নিয়ত করার পর যা নিষিদ্ধ

(১) পুরুষের জন্য সেলাই করা পোশাক পরা। (২) মাথার সঙ্গে লেগে থাকে এমন জিনিস দ্বারা মাথা ঢাকা। (৩) ইচ্ছাকৃতভাবে মাথার চুল ও শরীরের পশম কাটা বা উঠানো। (৪) হাত-পায়ের নখ কাটা। (৫) আতর বা সুগন্ধি জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা। (৬) স্থলচর প্রাণী শিকার করা। (৭) স্বামী-স্ত্রী মিলন করা বা এ জাতীয় বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা। (৮) বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। (৯) মহিলাদের জন্য হাতমোজা ব্যবহার, মুখ ঢাকা। (১০) পবিত্র মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানার গাছগাছালি কাটা, ভাঙা, উপড়ানো (সর্বাবস্থায়)। (১১) পবিত্র মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানায় পড়ে থাকা জিনিস নেওয়া। তবে তা মালিককে দেওয়ার জন্য উঠানো যাবে। (মুকাম্মাল মুদাল্লাল হজ ও উমরাহ, ১২০ পৃষ্ঠা)।

পবিত্র মক্কাতে পৌঁছার পর করণীয়

(১) তাওয়াফ ফরজ : পবিত্র মক্কাতে পৌঁছে তাওয়াফে যাওয়ার আগে অজু করে নিতে হবে। কেননা তাওয়াফের জন্য অজু শর্ত। নামাজের সময় নিকটবর্তী না হলে, মসজিদে প্রবেশ করে সরাসরি তাওয়াফে যেতে হবে। তাওয়াফ শুরুর আগে পুরুষদের জন্য ইজতেবা বাম ডান কাঁধ খালি করতে হবে, অর্থাৎ চাদরের মধ্যভাগ ডান কাঁধের নিচে দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের ওপর ধারণ করতে হবে। ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদ চুমো বা স্পর্শ করার মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। চুমা বা স্পর্শ করার সুযোগ না হলে, হাজরে আসওয়াদ বরাবর গিয়ে শুধু ডান হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদের দিকে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ইশারার হাতে চুমা দিয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। হাজরে আসওয়াদের আগের কোনো রুকনে ইয়ামানিতে পৌঁছা পর্যন্ত সময়ে, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ ও যে কোনো ধরনের দোয়া পড়া যায়। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদে এলে এক তাওয়াফ হয়। এভাবে সাত তাওয়াফ বা চক্কর শেষ করে উভয় কাঁধ ঢেকে, মাকামে ইবরাহিমের পেছনে নামাজ পড়ার উপযুক্ত স্থান পেলে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। ভিড়ের কারণে সম্ভব না হলে কাবা শরিফের যে কোনো স্থানে পড়লেই চলবে। (মাসায়েলে হজ ও উমরাহ, ১২০ পৃষ্ঠা)।

(২) সায়ী ওয়াজিব : এখন সায়ী করার জন্য ছাফা মারওয়া পাহাড়ে যেতে হবে। শুধু ছাফাতে আরোহণের সময় এ আয়াত ‘ইন্নাছ ছাফা আল মারওয়াতা মিন শায়া-ইরিল্লাহ’ পড়তে হবে। পাহাড়ে আরোহণ করে কেবলামুখী হয়ে দোয়ার জন্য দুই হাত উঠিয়ে তিনবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার বলে এ দোয়াটি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনযাজা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহ্দাহু। তিনবার এ দোয়াটি ও মধ্যখানে অন্যান্য দোয়া পড়তে হবে। এখন মারওয়ার দিকে যেতে হবে। কিছুদূর গেলে দুটি সবুজ চিহ্ন পাওয়া যাবে। দুই চিহ্নের মাঝে শুধু পুরুষদের হালকা দৌড়াতে হবে। ছাফা মারওয়াতে চলতে, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ, তাসবিহ ও যে কোনো ধরনের দোয়া পড়া যায়। (শরহে বোকায়া, হজ অধ্যায়, আসান ফেকাহ, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৮২ ও ১৮৩ পৃষ্ঠা)।

(৩) মাথার চুল খাটো বা মুণ্ডন করা ওয়াজিব : ছাফা মারওয়াতে সায়ী শেষে মাথার চুল চার ভাগের এক ভাগ ছোট বা মুণ্ডন করা উভয়টিই বৈধ। তবে মুণ্ডন করাই উত্তম। কেননা মুণ্ডনকারীর জন্য প্রিয়নবী (সা.) তিনবার দোয়া করেছেন। আর মহিলারা মাথার সব চুল আঙ্গুলের এক গিরা পরিমাণ ছোট করবেন। এখন আপনার উমরাহ হয়ে গেল। (আসান ফেকাহ, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠা)। আলহামদুলিল্লাহ!! আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবীজী (সা.) এর আমাদের সবাইকে পবিত্র উমরাহ করার তৌফিক দিন ও কবুল করে নিন। আমিন!!

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন বেতার, টিভির ইসলামী উপস্থাপক

সর্বশেষ খবর