সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

তিনিই বাংলাদেশ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

তিনিই বাংলাদেশ

রাত পোহালেই ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির কালো অধ্যায়ের সূচনা হয় ১৯৭৫ সালের এই দিনে। বাঙালি পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে এমন সব মানুষের জন্য ১৫ আগস্ট অত্যন্ত মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক ও গ্লানিকর দিবস। গত ৪২ বছরে যে বিষয়টি বাংলাদেশে প্রমাণিত হয়েছে তা হলো, একটি জাতি-রাষ্ট্র গঠনে একজন মহান নেতার ভূমিকা একক এবং অনন্য হয়ে ওঠে, যেটি ব্যতিরেকে কোনো জাতি-রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হয় না। ইতিহাস ঘাঁটলেই এর প্রমাণ মিলবে। কিন্তু ওই মহান নেতার মৃত্যুতে বা তাঁকে হত্যা করে ওই জাতি-রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটানো যায় না। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক অবদান গবেষণালব্ধ দৃষ্টিতে দেখলে এবং তাঁর মৃত্যুর ৪২ বছর পর বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি আবার যেভাবে জেগে উঠেছে, তাতে আমার উপরোক্ত কথার যথার্থতা প্রমাণিত হয়। ১৯৭৫ সালের ২৮ আগস্ট লন্ডনের খ্যাতনামা পত্রিকা ‘দ্য লিসনার’ মন্তব্য প্রতিবেদনে বলেছিল, ‘শেখ মুজিব সরকারিভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনগণের উচ্চতম আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেন। এটা শুধুই সময়ের ব্যাপার। এটা যখন ঘটবে, তখন নিঃসন্দেহে বুলেটে ক্ষতবিক্ষত তার বাসগৃহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারকচিহ্ন এবং তার সমাধিস্থল পুণ্যতীর্থে পরিণত হবে।’

এই ভবিষ্যদ্বাণীটি আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালের পর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা এবং একাত্তরে পরাজিত এ দেশীয় পাকিস্তানি দালাল গোষ্ঠী সীমাহীন অপপ্রচার শুরু করে এই মর্মে যে, কোনো একজন বা একক ব্যক্তির দ্বারা একটি জাতি ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। এই অপপ্রচার এখনো অব্যাহত আছে। তাই ঐতিহাসিক দুয়েকটি ঘটনার তাৎপর্য তুলে ধরা প্রয়োজন, যাতে নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্তিতে না পড়ে।

এক. ১৯৫৪-৫৫ সালের কথা। পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান চূড়ান্তকল্পে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যাজনিত যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে তার সুবিধা ও প্রভাব পাকিস্তানের রাজনীতিতে যেন না থাকে তার জন্য পাঞ্জাবি আমলা ও রাজনৈতিক চক্র অত্যন্ত সুকৌশলে ষড়যন্ত্রের চাল চালে। সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান মিলে একটি প্রদেশ এবং পূর্ব পাকিস্তানকে আরেকটি প্রদেশ করার পরিকল্পনা নেয়। উভয় প্রদেশের জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংখ্যা থাকবে সমান সমান, অর্থাৎ সংখ্যাসাম্য নীতি সংবিধানে সংযোজনের উদ্যোগ নেয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী তখন পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী এবং নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি। সোহরাওয়ার্দী সংখ্যাসাম্যের নীতি মেনে নিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান (তখনো বঙ্গবন্ধু হননি) এই সংখ্যাসাম্য নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকেন। শেখ মুজিবের ভরসা ছিল মওলানা ভাসানী, যিনি তখনো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিন্তু দেখা গেল কী কারণে যেন ভাসানীও অতি সহজে সংখ্যাসাম্য নীতি মেনে নিলেন। ১৯৬৯ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুকে নমনীয় করার জন্য এবং বাঙালিদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ছদ্মবেশ হিসেবে সংখ্যাসাম্য নীতি বাতিল করে দেন। কিন্তু যতটুকু ছাড় ইয়াহিয়া দিলেন তার লাগাম নিজের হাতে রাখার জন্য ঘোষণা করলেন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার বা এলএফও (সূত্র— অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, ‘দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ’)। তখন ভাসানীসহ পূর্ব পাকিস্তানের অন্য দলের অনেক নেতাই বলেছিলেন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না, জয়লাভ করলেও ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। পাকিস্তানি সামরিক অফিসার সিদ্দিক সালিক তার লিখিত ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থের প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন, শেখ মুজিব তার জ্যেষ্ঠ নেতাদের নির্বাচনের পূর্বেই বলেছিলেন, নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এলএফও টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলবেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাই তার একমাত্র লক্ষ্য। ইয়াহিয়া খান সংখ্যাসাম্য নীতি বাতিল করার ফলে জাতীয় সংসদে সমগ্র পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ৩০০ আসনের মধ্যে জনসংখ্যার হিসাবে পূর্ব পাকিস্তান পায় ১৬২ আসন, আর সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান পায় ১৪৮ আসন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ আসনের মধ্যে আওয়ামী ১৬০ আসনে জয়ী হয়। সমগ্র পাকিস্তানের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাওয়া বিজয়ী দল হয়ে এককভাবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের অধিকার পায়। সংখ্যাসাম্য নীতি বহাল থাকলে এমতাবস্থায় নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারত না। তখন এককভাবে সরকার গঠনের দাবিও করতে পারত না। আর তাহলে ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায়ও বসতে চাইত না। সমগ্র পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার অজুহাতে পাকিস্তানিরা ছয় দফাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করার সুযোগ পেত। বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে থাকত না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা হতো সুদূর পরাহত।

দুই. ছয় দফা গ্রহণ ও ঘোষণার বেলায়ও দেখা যায় বঙ্গবন্ধুকে একলা চলতে হয়েছে। তখনকার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাসহ পূর্ব পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক নেতা ছয় দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাদের মতে, এটা বিচ্ছিন্নতাবাদী ও দেশদ্রোহের শামিল। আইয়ুব খান সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলাবে। সে সময় বঙ্গবন্ধু একাই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ছয় দফাকে অবলম্বন করে তাজউদ্দীন এবং অন্য অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে পুনর্গঠিত করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু ছয় দফার ওপর সম্পূর্ণ অনড় থাকার কারণেই ইয়াহিয়া ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানে ফিরে যান। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তাই এটা এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, ছয় দফাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এক নম্বর অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। নেতৃত্বের বিচারে এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর একার।

তিন. ষাটের দশকে ছয় দফা উত্থাপনের পর আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুর সামনে বন্দুক তাক করার ভান করলেও পেছনে হাজারও লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে দেন-দরবার করার চেষ্টা করেছেন। আইয়ুব খান প্রস্তাব দিয়েছিলেন মোনায়েম খানের পরিবর্তে শেখ মুজিবকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর করা হবে। একই সঙ্গে আইয়ুবের ছেলে গওহর আইয়ুবের মালিকানাধীন গান্ধারা (বর্তমান বাংলাদেশের প্রগতি) ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৯ ভাগ শেয়ার বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হবে। এই শেয়ার কেনার টাকার ব্যবস্থাও আইয়ুব খান করবেন। এই প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু একাই শুধু ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন তাই নয়, বেগম মুজিব প্রস্তাবকারীকে বলেছিলেন, শেখ মুজিবকে মোনায়েম খান বানাবার চেষ্টা করবেন না (আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা পৃ. ১৩০)।

চার. ইয়াহিয়া খানের এলএফও এবং ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর দক্ষিণ বাংলায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের অজুহাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং নির্বাচন স্থগিত করার দাবি তোলেন। মওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান, ইউসুফ আলী চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক পার্টির সভাপতি এস এম সোলায়মান নির্বাচনে ভোট দেননি (ইত্তেফাক-১০ ডিসেম্বর, ১৯৭০)। কিন্তু নির্বাচন স্থগিত করার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দৃঢ় প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধুর আপসহীন অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত সঠিক সময়ে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন নির্বাচন না হলে বাংলাদেশ কি একাত্তরে স্বাধীন হতো?

পাঁচ. একাত্তরে যুদ্ধের নয় মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে নির্জন কক্ষে বন্দী ছিলেন। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারতেন না। সংবাদপত্র, রেডিও, টিভি, কোনো কিছুই তাকে দেওয়া হয়নি। তিনি জানতে পারেননি বাংলাদেশে কী হচ্ছে। এ রকম অবস্থায় নির্ঘাত ফাঁসির কথা জেনেও পাকিস্তানের সব ধরনের আপস প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভেবে দেখুন, তখন বঙ্গবন্ধু যদি পাকিস্তানের সঙ্গে একটা আপসরফা স্বাক্ষর করতেন, তাহলে কি বিশ্বের কোনো দেশের সমর্থন পাওয়া যেত? ভারত কি এভাবে সমর্থন-সাহায্য দিতে পারত? এগুলো প্রশ্নের উত্তর বড় একটা না। তাহলে কি স্বাধীনতা অর্জন সুদূরপরাহত হয়ে যেত না? এসব কারণেই এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর একক সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বে এবং ভূমিকায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এর বিপরীতে যারা কথা বলেন, তারা বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করেন, আর নয়তো নিজেদের অজ্ঞতা ঢাকতে নানান অজুহাতের আশ্রয় নেন। ব্রিটেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়ের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে বলা হয় সেভিয়ার অব দ্য নেশন, অর্থাৎ জাতির রক্ষাকর্তা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে হিটলারের জার্মান বাহিনী যখন ইউরোপের অন্য অনেক দেশ দখল সম্পন্ন করে ব্রিটেন দখল করার উদ্যোগ নেয় তখন সিটিং প্রধানমন্ত্রী নেভিল চ্যাম্পারলিন পদত্যাগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী হন চার্চিল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই ১৯৪০ সালের ৪ জুন চার্চিল বিশ্বখ্যাত সেই ভাষণটি দেন। ভাষণের একাংশে বলেন, “Whatever the cost may be, we shall fight on the beaches, we shall fight on the landing grounds, we shall fight in the fields and in the street, we shall fight in the hills, we shall never surrender.” এই ভাষণটিকে বলা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট। চার্চিলের ভাষণটি লাখ লাখ কপি করে তা পুরো ব্রিটিশ জাতি এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সব সেনা ক্যাম্পে বিতরণ করা হয়। এটাই ছিল তাদের যুদ্ধ জয়ের অন্যতম এক টনিক। যেমনটি আমাদের কাছে ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। তারপর ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হিটলার বাহিনী ব্যাটল অব ব্রিটেনে ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। রক্ষা পায় ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ড। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৫ সালে মিত্রবাহিনী ব্রিটেনের নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে। কয়েক লাখ ব্রিটিশ সেনা যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়। সমগ্র জাতি যুদ্ধ করেই ব্রিটেনকে রক্ষা করেছে। কিন্তু চার্চিলের ওই ভাষণ ও জনপ্রিয়তা এবং ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব ব্যতীত তা কিছুতেই সম্ভব হতো না। সে কারণেই বিশ্বের ইতিহাসে চার্চিলকে বলা হয় ব্রিটিশ জাতির জন্য সেভিয়ার অব দ্য নেশন। এটা নিয়ে কেউ কোনো কুতর্ক উঠায় না। প্রায় একইভাবে ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শার্ল দ্য গলকে বলা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানি দখলদারির বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের জনক, যদিও পুরো যুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটেনে ছিলেন এবং সেখান থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার স্বাধীন অখণ্ড ভিয়েতনামের জনক বলা হয় হো চি মিনকে। যদিও চূড়ান্ত বিজয়ের প্রায় ছয় বছর আগে ১৯৬৯ সালে তিনি মারা যান। বঙ্গবন্ধু তাঁর সংগ্রামমুখর জীবনের সবটুকু সময়, জেলজীবন ব্যতীত সারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে, অলিতে-গলিতে, গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাতে বাংলার কৃষক, শ্রমিক, দুঃখী মানুষের হৃদয়কে তিনি স্পর্শ করেছেন এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নিজ হৃদয়ে ধারণ করেছেন। হৃদয়ে ধারণকৃত জনমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসেবে বাংলাদেশের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্যরূপে বাহাত্তরের সংবিধানে সন্নিবেশিত করেছেন। অর্থাৎ বাহাত্তরের সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধুর হৃদয় থেকেই বের হয়েছে। তার জন্যই এই সংবিধানটি বিশ্বের অনেক ভালো সংবিধানের চেয়েও অনন্য। একটি অজপাড়াগাঁয়ের ছেলে, মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে, নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত দুঃখী মানুষের মুক্তির জন্য যে পথ দেখিয়ে গেছেন এবং নিজের জীবন ও কর্মের ভিতর দিয়ে যে উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন তা পৃথিবীতে বিরল। একবার ভেবে দেখুন, পাকিস্তানি শাসকদের লোভনীয় প্রস্তাবের প্রলোভনে পড়ে বঙ্গবন্ধু যদি গভর্নর, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হতেন তাহলে বাংলাদেশ কি একাত্তরে স্বাধীন হতো। ছয় দফা নিয়ে বঙ্গবন্ধু যদি এককভাবে এগিয়ে যাওয়ার সাহস না দেখাতেন এবং একাত্তরের মার্চ মাসে ইয়াহিয়ার সঙ্গে আপস করতেন, তাহলে কি বাংলাদেশ স্বাধীন হতো? সত্তরের নির্বাচন না হলে এবং আওয়ামী লীগ এককভাবে যদি ১৬২টি আসন না পেত তাহলে কি বাংলাদেশ এত স্বল্প সময়ে স্বাধীন হতো। এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই বলে দেয় বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন। তাই তিনিই বাংলাদেশ।

            লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর