সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডাকসুতে শনির আসর

নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে

অপরাজনীতির শনির আসরে জিম্মি হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদের নির্বাচন। এক সময় মিনি পার্লামেন্ট হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। তার আগে সামরিক শাসকদের আমলেও ডাকসুসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নজির রয়েছে। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ সামরিকতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক শাসনের নতুন সোপানে পা রাখলেও অদৃশ্য কারণে রুদ্ধ হয়ে যায় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। গত ২৭ বছর ধরে যারা দেশ শাসন করছেন তারা নিজেদের গণতন্ত্রের সোল এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিলেও, গণতন্ত্র চর্চা ও প্রশিক্ষিত নেতৃত্ব সৃষ্টির সূতিকাগার ডাকসুসহ অন্যসব ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখছেন গায়ের জোরে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে যে ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় গণতান্ত্রিক শাসনামলেই। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় গণতন্ত্র চর্চায় প্রতিকূল আবহ সৃষ্টি হচ্ছে। ডাকসুসহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদের নির্বাচন শিক্ষাঙ্গনে যেমন গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করত, তেমন পরিশীলিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টিতে অবদান রাখত। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধ নেতৃত্বের বদলে আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারীরা রাজনৈতিক অঙ্গনে উড়ে এসে জুড়ে বসার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানার্জনের মূল ধারণাও উপেক্ষিত হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। জ্ঞানার্জনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক সহযোগিতায় পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও তা চলছে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষমতা কাঠামোর সর্বোচ্চ স্তর সিনেট। আইন অনুযায়ী সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা থাকলেও দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সেখানে শূন্যতা বিরাজ করছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাত্র সংগঠন এবং এর নেতৃত্বের মধ্যে দায়বোধের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে। ছাত্র সংগঠনগুলোতে ছাত্রত্ব চলে যাওয়া আদুভাই মার্কা নেতারাও দখলদারিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। পেশিশক্তির দাপটও অনুভূত হচ্ছে ছাত্র রাজনীতিতে। রাজনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় উগ্রবাদের ধারক-বাহকরাই লাভবান হচ্ছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব হলেও তাদের মেরুদণ্ডহীন অবস্থা অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই ডাকসুসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর