মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

শোকের দিন ১৫ আগস্ট

বঙ্গবন্ধুর অপরাজেয় আদর্শের মৃত্যু নেই

জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে শোকের দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্যের হাতে প্রাণ হারান সর্বকালের এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি। স্বাধীনতার মহানায়কের শাহাদাতবরণের দিন যেমন শোকের তেমন শোককে শক্তিতে পরিণত করার দিনও বটে। ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতি। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে তারা প্রকারান্তরে বাঙালি জাতির আত্মাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। মুয়াবিয়াপুত্র ইয়াজিদের হাতে হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও মীরজাফরের ষড়যন্ত্রে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের মতো ১৫ আগস্টও ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনার মাধ্যমে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি জাতির ঘাড়ে চেপে বসে। ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘোরানোর চেষ্টাও চলে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব ইতিহাসের এক মহানায়ক। জননন্দিত নেতা হিসেবে তার তুলনা তিনি নিজেই। মাটি ও মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা তাকে মহীরুহে পরিণত করেছিল। বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে এদেশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতীয় রাজনীতিতে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা পরিবর্তনের যে কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়, তার পরিণতিতে বার বার বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের বিভেদ নীতিকে বাংলাদেশের মানুষ কবর দিয়েছিল। তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলে ১৫ আগস্টের পর থেকে। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে তারা কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। বাংলাদেশের মানুষ খুনিচক্র এবং তাদের দোসরদের সে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়নি। ১৯৯৬ সালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয় দেশবাসীর প্রত্যাশার পরিপূরক হিসেবে। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং খুনিদের পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের বিদেশ থেকে আইনি পথে দেশে এনে শাস্তি কার্যকর করার চেষ্টা চলছে।  বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে তার আদর্শ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলেছিল। বিবেক বিক্রেতা খুনিদের সে অপচেষ্টা সফল হয়নি।  বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তার অপরাজেয় আদর্শ টিকে আছে প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে। ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর অমর স্মৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও অভিবাদন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর