বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিক্ষার নামে মানব পাচার

কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙছে না কেন

বাংলাদেশকে বলা হয় মানব পাচারের অভয়ারণ্য। এ দেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার লোক পাচার হয় বিভিন্ন দেশে। সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্নে নিজেদের সহায়-সম্পত্তি বেচা অর্থ তারা তুলে দেয় আদম বেপারি নামের পাচারকারী চক্রের হাতে। তার পর তাদের কেউ কেউ স্বপ্নের সেই দেশে যেতে সক্ষম হলেও পড়ে সমূহ বিপাকে। ভুয়া কাগজপত্র বা ভিসার মেয়াদ না থাকায় তাদের কারও কারও ঠাঁই হয় জেলে। এর চেয়েও বেশি দুর্ভাগ্যবান তারা, যাদের পাচারকারীরা সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। অনেক সময় পাচারকৃতদের আটক করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। মুক্তিপণ না দিলে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। অথবা হত্যা করে পুঁতে রাখা হয় গহিন জঙ্গলে। অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিতরাই ছিল একসময় পাচারকারীদের টার্গেট। অতি সম্প্রতি তাদের শিকারে পরিণত হয়েছে কথিত শিক্ষিতরাও। উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে চলছে জমজমাট মানব পাচারের ব্যবসা। এজেন্ট ধরে তাদের হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। লাখ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর তাদের মানহীন ভুয়া কলেজে ভর্তি করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার দ্য স্টার পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় পৌঁছার পর ভিকটিমরা বুঝতে পারেন, যে কলেজে তাদের ভর্তি করা হয়েছে সেখানে পড়ালেখার কোনো বালাই নেই। বিপুল অর্থ খরচ করে যাওয়ার পর তাদের দেশে ফিরে আসারও উপায় থাকে না। ‘ছাত্রত্ব’ টিকিয়ে রাখতে প্রায়ই তাদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায় করে কলেজগুলো। আর স্টুডেন্ট ভিসা হওয়ায় বৈধভাবে রোজগারেরও কোনো সুযোগ থাকে না। ফিরতি প্লেনের টিকিটের টাকা জোগাড় করতেই হোক আর ঋণ শোধের জন্যই হোক, এদের অনেকেই বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হন। সামান্য আয়ের জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়াতে তাদের ফের দালালদের শরণাপন্ন হতে হয়। পত্রিকাটির রিপোর্টে বলা হয়, এ ধরনের পাচারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সুসংবদ্ধ দল জড়িত। স্মর্তব্য, মালয়েশীয় পত্রিকাটি ২০১৩ সালেও স্টুডেন্ট ভিসার নামে মানব সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। কিন্তু তারপরও শিক্ষার নামে মানব পাচার বন্ধ হয়নি।  এসব দেখাশোনা করার দায়িত্ব যাদের তাদের সঙ্গে পাচারকারীদের সখ্য থাকায় পাচারের ঘটনা অবাধেই চলছে। এ ব্যাপারে সরকারের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর