শিরোনাম
বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টিতে অবদান রাখে হজ

মাওলানা মুহাম্মদ সাহেব আলী

শরিয়তের বিধান মোতাবেক নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যক্ষ মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। হজ ফরজ হওয়ার শর্ত সাতটি। যেমন-১. সুস্থ মস্তিষ্ক হওয়া, ২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, ৩. স্বাধীন হওয়া, ৪. সুস্থ হওয়া, ৫. যাতায়াত ও মক্কায় অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ থাকা, ৬. রাস্তা নিরাপদ হওয়া, ৭. ফিরে আসা পর্যন্ত স্ত্রী লোকদের জন্য স্বামী অথবা এমন কোনো আত্মীয় সফরসঙ্গী থাকা আবশ্যক যার সঙ্গে বিবাহ হারাম। হজ এটি এমন একটি ইবাদত যা বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করে। প্রতিবছর হজের সময় সারা দুনিয়া থেকে মুসলমান সমবেত হয় আরাফাতের ময়দানে। একে অপরের সঙ্গে মেশার সুযোগ পায় তারা। মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য এবং পরস্পরের প্রতি মহব্বত সৃষ্টিতে হজের অবদান অনস্বীকার্য। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : ‘আল্লাহ মানুষের জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ করেছেন, যে সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে।’ সূরা আলে ইমরান-৯৭।

কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ করা হয়েছে ‘আর লোকদের মধ্যে হজের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট সব দূরবর্তী স্থান হতে পায়ে হেঁটে ও উটের ওপর সওয়ার হয়ে আসবে। যাতে তারা তাদের কল্যাণ এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তার দেওয়া জীবিকা হিসেবে চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।’ (২২-সূরা হজ : ২৭-২৮)

হজ শুধু সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়, গরিব মুসলমানদের জন্য এটি বাধ্য করা হয়নি। সমর্থ থাকা সত্ত্বেও কোনো ধনী মুসলমান যদি হজ না করে তবে তা ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। মহানবী (সা.)-এর হাদিসের দিকে দৃষ্টি দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। নবী পাক (সা.) বলেন : ‘বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে হজ সম্পাদনের প্রয়োজনীয় সওয়ার (পরিবহন খরচ) ও পাথেয় (অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ) যার আছে, সে যদি হজ আদায় না করে, তবে সে ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান হয়ে মরে মরুক, তাতে আল্লাহপাকের কিছু যায় আসে না। কেননা আল্লাহপাক ঘোষণা দিয়েছেন : ‘আল্লাহ মানুষের জন্য বায়তুল্লাহর হজ ফরজ করেছেন, যদি সে তথায় যাওয়ায় সামর্থ্য রাখে।’

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : ‘সমর্থ হয়েও যে ব্যক্তি যাকাত ও হজ আদায় করে না, মৃত্যুর সময় সে তার হায়াত বৃদ্ধির জন্য আক্ষেপ করবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, এ ধরনের আক্ষেপ তো অবিশ্বাসীদের করার কথা। তিনি জবাব দিলেন : না, বিশ্বাসীদের জন্যও এটা প্রযোজ্য। কোরআন পাকই এর প্রমাণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : ‘আমি তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছি, মৃত্যু আসার আগেই তা থেকে দান কর। অন্যথায় অন্তিম মুহূর্তে মৃত্যুপথযাত্রী বলবে : যে প্রভু! আমাকে আরও কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের দলভুক্ত হতাম। —সূরা আলমুনাফিকুন-১০। হজ পালন যেহেতু প্রতিটি সম্পন্ন মুসলমানের জন্য ফরজ সেহেতু এ ইবাদতের তওফিক যাতে আল্লাহ আমাদের দেন তেমনটিই কাম্য।  আমিন।

            লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর