আল্লাহ তার প্রেরিত নবী রসুলদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন মানুষকে হেদায়েত করার জন্য। মানুষ যাতে নবী রসুলদের প্রতি আস্থা স্থাপন করে সে জন্য তাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কিছু ক্ষমতা দান করা হয় যা অলৌকিক ক্ষমতা বলে বিবেচিত। আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ছিলেন এমনই অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।
নবী (সা.)-এর অন্যতম অলৌকিক ঘটনা ‘রদ্দে শামস’ হলো অস্তমিত সূর্যকে ফিরিয়ে আনয়ন করা। হজরত আসমা বিনতে ওমায়স (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একদা নবী করিম (সা.) খায়বারের কাছে ‘সাহবা’ নামক স্থানে ছিলেন। তার মাথা মোবারক হজরত আলী (রা.) কোলে রেখে বিশ্রাম করছিলেন। হজরত আলী (রা.) কিন্তু আসরের নামাজ আদায় করেননি। এমতাবস্থায় ওহি নাজিল শুরু হলো। শেষ পর্যন্ত সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল। নবীজি (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি আসরের নামাজ আদায় করেছ?’ হজরত আলী (রা.) বললেন, ‘না’। তখনই রসুলুল্লাহ (সা.) হস্ত উত্তোলন করে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আলী আপনার রসুলের অনুগত ছিল, সূর্য ফিরিয়ে দিন, যাতে সে আসরের নামাজ সঠিক ওয়াক্তে আদায় করতে পারে।’ হজরত আসমা বিনতে মায়স (রা.) বলেন, ‘অস্তমিত সূর্য পুনরায় দিগন্তে দৃশ্যমান হলো’। ইমাম তাহাবি (রহ.) বলেন, ‘হাদিসটি বিশুদ্ধ। হাদিসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।’ শায়খ জালাল উদ্দীন সুয়ুতী (রহ.) উল্লিখিত হাদিসটি সম্পর্কে ‘কাশফুল লাবস আন হাদিসে রদ্দে শামস’ নামে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা রচনা করেছেন। ওই পুস্তিকায় হাদিসের সনদ নিয়ে আলোচনা করে হাদিসের বিশুদ্ধতা প্রমাণ করেছেন।
মহানবী (সা.) মিরাজ থেকে প্রত্যাবর্তন করে কুরাইশদের সম্মুখে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ এবং স্বীয় ভ্রমণকাহিনী ও মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। কুরাইশরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য বায়তুল মোকাদ্দাসের বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল এবং বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ার দিকে যে কাফেলা গমন করেছিল, তারা কখন মক্কায় প্রত্যাবর্তন করবে, তা জানতে চেয়েছিল।মহানবী (সা.) উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তারা বুধবার মক্কায় পৌঁছবে।’ বুধবার আস্তে আস্তে অতিক্রান্ত হতে চলল, দিবসের পড়ন্ত বেলাও অতিক্রম হতে চলল। এমনকি সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার নিদর্শন পরিলক্ষিত হতে লাগল কিন্তু কাফেলা মক্কায় পৌঁছেনি। তাই মক্কার কাফিরকুল তার নবুয়তের সত্যতা সম্পর্কে সমালোচনা করতে শুরু করে দিল। এমতাবস্থায় রসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করলেন, আল্লাহপাক সূর্যের গতিরোধ করলেন। কাফেলা মক্কায় প্রবেশ করা পর্যন্ত সূর্য থেমে ছিল।
লেখক : ইসলামী গবেষক।