শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

কাবাঘর নির্মাণ ও এর উদ্দেশ্য

মুফতি এহসানুল হক জিলানী
পেশ ইমাম : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

পৃথিবী সৃষ্টি করার পর মানুষের ইবাদতের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘরখানা নির্মাণ করা হয় তা হচ্ছে কাবা। এ ব্যাপারে কোরআন শরিফে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের (ইবাদতের) জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হিদায়াত ও বরকতময়।’ কাবাঘর প্রথম নির্মাণের পর কয়েকবার পুনর্নির্মাণের বর্ণনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর পুনর্নির্মিত হওয়ার কথা কোরআনে সবিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন। আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘স্মরণ কর, যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবাঘরের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করছিল, প্রভু! আমাদের এ কাজ কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : ১২৭)। বর্ণনায় এসেছে, এ সময় ইবরাহিম (আ.) একটি একটি করে পাথর গাঁথছিলেন আর ইসমাইল (আ.) তাঁর হাতে পাথর তুলে দিয়ে তাঁকে সহযোগিতা করছিলেন। পাথর গাঁথতে গাঁথতে দেয়াল যখন কিছুটা উঁচু হলো, তখন তিনি পায়ের নিচে একটি পাথর দেন। সেই পাথরটিই বর্তমানে মাকামে ইবরাহিম নামে প্রসিদ্ধ। কোরআনে এর উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এতে মাকামে ইবরাহিমের মতো প্রকৃষ্ট উদাহরণ রয়েছে।’ (সুরা নিসা : ৯৭)। পাথর গাঁথার সময় তাঁরা চারপাশে ঘুরে ঘুরে পাথর লাগাচ্ছিলেন আর এ দোয়া করছিলেন, ‘হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের পক্ষ থেকে এই আমলকে কবুল কর। নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’

কাবাঘর নির্মাণের মহান উদ্দেশ্য আল কোরআনের বক্তব্য থেকে অনুধাবন করা যায়। যেমন এক আয়াতে আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে কাবাঘর নির্মাণের আদেশ করে তাঁকে শিরক না করার এবং তাওয়াফকারী ও ইবাদতকারীদের জন্য একে পবিত্র রাখার আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই সময়টির কথা স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহিমকে কাবাঘরের স্থান নির্দেশ করে দিলাম যে, আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না, আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখবে।’ (সুরা হজ : ২৬)। এর দ্বারা বোঝা যায়, কাবাঘর নির্মাণের প্রথম লক্ষ্যই হচ্ছে মানব জাতিকে এ আহ্বান জানানো যে, তারা যেন শিরকের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে এবং কেবল এক আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে। এমনিভাবে কোরআনে কাবাকে একটি বরকতপূর্ণ ঘর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যার দ্বারা বোঝা যায়, এ ঘর পৃথিবীবাসীর জন্য বরকত লাভের একটি উত্স। এ ঘরের অভিমুখী হয়ে আল্লাহর ইবাদত করলে আল্লাহ বরকত নাজিল করবেন। এ ছাড়া কাবাঘরকে জগত্সমূহের জন্য হিদায়াত বলা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, জগদ্বাসীকে এ ঘর সরল পথ দেখাবে। নাজাতের পথে ডাকবে। শিরকমুক্ত জীবন গঠন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। মূলত তাওহিদ বা  একাত্মবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য ইবরাহিম (আ.) যে সীমাহীন আত্মত্যাগ করেছিলেন, এ আত্মত্যাগকে আল্লাহ কবুল করে কাবাঘরের মাধ্যমে তাঁর তাওহিদের দাওয়াতকে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সমগ্র বিশ্বের মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এ কারণেই আমরা দেখি, এ কাবাঘরে বিশ্বের আনাচ-কানাচ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান তাওহিদের সবক গ্রহণ করতে আসে। সবার মুখে সমস্বরে উচ্চারিত হতে থাকে, ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’।

সার কথা, কাবা হচ্ছে পৃথিবীর বুকে মানুষের  ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্মিত প্রথম ঘর। এটি জগদ্বাসীর জন্য বরকতের উত্স এবং সারা জাহানের জন্য হিদায়াত। কাবাঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জাতিকে আল্লাহর একাত্মবাদে বিশ্বাস স্থাপন করানো ও শিরকমুক্ত জীবন গঠনের আহ্বান জানানো এবং মানুষকে একমুখী হয়ে এক ধ্যানে একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়ার সবক প্রদান করা। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর