বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোরবানির মাংস নয়, তাকওয়া পৌঁছে আল্লাহর কাছে

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

সারা দুনিয়ার মুসলমানরা কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরবি ‘কোরবানুন’ শব্দ থেকে এসেছে কোরবানি শব্দটি। কোরবানুন অর্থ নৈকট্য লাভ করা। যে ব্যক্তি ১০ জিলহজ ফজর হতে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত জীবিকানির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্যের কোনো মালের মালিক হয়, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। ইসলামী বিধানে কোরবানির অর্থ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, একদিন নবী করিম (সা.)-কে সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! কোরবানি কী? রসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন, তোমাদের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাত। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল, এতে আমাদের জন্য কী রয়েছে? রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কোরবানির পশুর প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! পশমওয়ালা পশুদের (অর্থাৎ যেসব পশুর পশম বেশি হয় যেমন ভেড়া) পরিবর্তে কি সওয়াব পাওয়া যাবে? রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, পশমওয়ালা পশুর প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ।

পবিত্র কোরআনের ‘সূরা ছফ্ফা’র ১০২ থেকে ১০৭ আয়াতে আল্লাহপাক হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছেন— ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহিম তাকে বলল : পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি? সে বলল : পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা-ই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম তাকে জবেহ করার জন্য শায়িত করল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম : হে ইব্রাহিম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সত্কর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম জবেহ করার জন্য এক জন্তু।

বিশ্বাসীদের আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত হিসেবে কোরবানি মুসলমানদের জন্য পালনীয়। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য কোরবানির তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর রক্ত, মাংস কিছুই পৌঁছায় না। পৌঁছায় তাকওয়া। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে— ‘অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন।’ কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে লোকসকল! (জেনে রাখ) তোমাদের প্রত্যেক (সামর্থ্যবান) পরিবারের পক্ষে প্রত্যেক বছরই কোরবানি করা আবশ্যক।’ (আবু দাউদ, নাসায়ী) রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করল না সে ঈদগাহের কাছেও যেন না আসে’। (ইবনে মাজাহ)। উপরোক্ত হাদিসে প্রমাণিত হয় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি কোরবানি না করেন তবে তিনি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে অসন্তুষ্ট করার ভুল করবেন।  যা আমাদের জন্য কাম্য হওয়া উচিত নয়।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর