বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
অতিথি কলাম

বানভাসি দিনাজপুর : কিছু কথা কিছু স্মৃতি

লে. জে. মাহবুবুর রহমান (অব.)

বানভাসি দিনাজপুর : কিছু কথা কিছু স্মৃতি

বাংলাদেশ শনি আগ্রাসিত। দুর্যোগের পর দুর্যোগে পুনঃপৌনিকভাবে আক্রান্ত। দুর্যোগ আরম্ভ হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। গত জুন-জুলাই থেকে শুরু হওয়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড় ধসের ব্যাপক তাণ্ডবলীলার মধ্য দিয়ে। ধসে গিয়েছিল উঁচু-নিচু মাটির পাহাড়, তার সঙ্গে বৃক্ষরাজি ও সবুজ অরণ্য।  ধসে তলিয়ে গিয়েছিল রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল, কলেজ ও জনবসতি। মুহূর্তে কোথায় যেন সব হারিয়ে যায়। গাছপালায় চাপা পড়ে মানুষ মরে, পাহাড়ের বন্যপ্রাণী মরে। তখন অবিরাম বৃষ্টি চলছিল, আকাশ যেন ফুটো হয়ে গিয়েছিল। সেনাবাহিনীসহ যারা ত্রাণকাজে দুঃসাহসের সঙ্গে এগিয়ে এসেছিল তারাও এর শিকার হয়েছিল। সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ বেশ কয়েকজন সেনা সদস্যের মৃত্যু ঘটেছিল। পাহাড়ে কেয়ামত নেমে এসেছিল। ইসরাফিল সিঙ্গায় ফুঁক দিয়েছিল। সেনাবাহিনীর সদস্যসহ প্রায় ২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।

এ বিপর্যয় কাটতে না কাটতেই সম্প্রতি এক মহাপ্রলয়ঙ্করী বন্যা গোটা বাংলাদেশকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। অনেকে বলছে ডুবিয়ে দিয়ে গেল। এ যেন বাংলাদেশের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। দিনের পর দিন মাসের পর মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে একই বন্যার চিত্র। এতটুকুও চ্যুতি নেই। এত দীর্ঘস্থায়ী বন্যা এমন সর্বগ্রাসী, সর্বনাশা, সর্বভুক বন্যা বাংলার মানুষ কস্মিনকালেও দেখেনি। কল্পনাও করেনি। স্মরণকালের সব প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সে অনেক পেছনে ঠেলে দিয়েছে। শত বছরের সাক্ষী গ্রামের অতিবৃদ্ধ ও অতিবৃদ্ধারা অবাক হয়ে কপালে হাত দিয়ে শুধু বলে চলেছে, ‘হামরা জীবনত কখনো এমন বান দেখুনাই বাহে। এত্ত এত্ত পানি। দুনিয়াতো ডুবেগেলি। কেয়ামততো আসিগেলি।’ আমার বাড়ি দিনাজপুরে। বিরল থানায়। বিরলের মানুষের বন্যার অভিজ্ঞতা নেই। অতীতে তারা বড় একটা বন্যা কখনো দেখেনি। সেখানে সবার মাটির দেয়ালের ঘরবাড়ি। নিশ্চিন্ত নিরাপদ কোনো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ক্ষতির কারণ হয়নি। শুধু রাতের গভীর অন্ধকারে চোরের সিঁধ কাটার ঘটনা ছাড়া। ধানের দেশ চালের দেশ দিনাজপুর। এ অঞ্চলে প্রচুর ধান হয়। চালের উদ্বৃত্ত অঞ্চল দিনাজপুর। জগদ্বিখ্যাত সুগন্ধি কাটারিভোগ চাল একমাত্র দিনাজপুরেই উৎপন্ন হয়। কৃষকরা ধান মজুদ করে কাদা দিয়ে তৈরি মাটির গোলায়।

আমার মনে পড়ছে, গত শতকের শেষ দশকে একটা ভয়ানক বন্যা হয়েছিল। গোটা বাংলাদেশ প্লাবিত হয়েছিল। স্মরণকালের সেটা ছিল তখন সবচেয়ে বড় বন্যা। আমি তখন সেনাবাহিনীতে মেজর জেনারেল। ইইনসির দায়িত্বরত। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মোমতাজউদ্দিন আহমেদ আমার বন্ধু মানুষ। তার বাড়িও দিনাজপুর। আমাকে টেলিফোন করে বলেন, আমি বন্যা পরিস্থিতি দেখতে হেলিকপ্টার নিয়ে দিনাজপুরে যাচ্ছি। আপনাকে সঙ্গে নিতে চাই। আমি তার সঙ্গে তার উড়োজাহাজে উঠি। আমরা আকাশ থেকে নিচে শুধু পানি আর পানি দেখলাম। থৈ থৈ পানি। মাঝে মাঝে দ্বীপের মতো ছোট ছোট গ্রামগুলো একটু একটু ভেসে আছে আর ডুবু ডুবু করছে। দিনাজপুরের ঐতিহাসিক বড় ময়দান এক বিশাল আয়তনের। কয়েক মাইলজুড়ে তার অবস্থান। চতুর্দিকে শুধু পানি আর পানি, গোটা মাঠ ডুবে আছে। হেলিকপ্টার অবতরণ করতে পারছে না। আকাশে শুধু চক্কর দিচ্ছে। এয়ার মার্শাল মোমতাজউদ্দিন আমাকে বললেন, কাছেই আপনার বাড়ি চলেন আপনার মাকে দেখে আসি। শহর থেকে মাইল সাতেক পশ্চিমে আমার গ্রাম জগত্পুর। এক সুন্দর অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন গ্রাম। ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা, নীলিমায় নীল। এয়ার মার্শালের হেলিকপ্টার আমাদের বাড়ির উপরে উড়ছে গ্রামের লোকজন সব দল বেঁধে আমাদের বাড়ির বৈঠকখানায় ধেয়ে আসছে। সামনে বিশাল মাঠ কিন্তু হেলিকপ্টার অবতরণ করতে পারছে না। দুঃসাহসী পাইলট হাঁটু পানির মাঠেই অবতরণ করলেন। আমার মা আমাকে এই মহাদুর্যোগে এমন করে কাছে পেয়ে অবাক-বিস্ময়ে কথা হারিয়ে ফেলেন। আমি এসেছি তিনি নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। আমার মায়ের সঙ্গে সেদিনের আমার দেখাটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দের, সবচেয়ে বড় তৃপ্তির ঘটনা, যা আমি জীবনে কখনো ভুলতে পারিনি, বার বার মনে করি। মায়ের সে কী ব্যস্ততা। হঠাৎ করে তিনি যেন হাতের মুঠোয় চাঁদ পেয়ে গেছেন। তিনি নিজ হাতে রান্না করে আমাদের দুজনকে কাছে বসিয়ে আদর করে খাইয়েছিলেন। সে অনেক দিন আগের কথা, ১৯৮৮ সাল। প্রায় ৩০টি বছর ইতিমধ্যে অতিবাহিত। এমন কোনো মারাত্মক বন্যা ইতিমধ্যে হয়নি। এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যার চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক, অনেক বেশি ব্যাপক ও অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক। মানুষের দুঃখ-কষ্ট, ক্ষয়-ক্ষতি বর্ণনাতীত, অচিন্তনীয় এ যেন নূহের প্লাবন। পবিত্র কোরআনে পড়েছি পয়গম্বর হজরত নূহ (আ.)-এর সময় সে কত হাজার বছর আগে গোটা বিশ্বকে নিমজ্জিত করার এক প্রলয়ঙ্করী বন্যা হয়েছিল। হজরত নূহ (আ.) আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে এক অতি বড় নৌযান তৈরি করেন এবং জোড়ায় জোড়ায় সব প্রজাতির পশুপাখিদের নৌযানে তুলে নেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস অবিরাম বৃষ্টিতে গোটা বিশ্ব পানির নিচে তলিয়ে যায়। মানুষসহ সমস্ত প্রাণিকুল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বাংলাদেশে এবার যেন হজরত নূহ (আ.)-এর মহাপ্লাবনই ঘটেছে। প্লাবিত এলাকায় কোথাও কোনো উঁচু জায়গা নেই, আশ্রয় নেই, খাদ্য নেই, খাবার পানি নেই। চতুর্দিকে হাহাকার অবস্থা। এর মধ্যে কোনো কোনো জায়গায় সামান্য সরকারি সাহায্য গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি তুচ্ছ, অতি নগণ্য। দেশের বন্যার্ত মানুষ প্রত্যাশা করেছিল ত্রাণ কর্মকাণ্ডে সরকারের ব্যাপক উপস্থিতি, উদ্যোগ ও তৎপরতা। প্রয়োজন ছিল পরিস্থিতির মোকাবিলায় দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে দুর্যোগের ব্যাপকতা তুলে ধরা এবং সহযোগিতা কামনা করা। দেশে একটা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় আছে কিন্তু বন্যার্ত মানুষ এই মন্ত্রণালয়ের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড দেখেনি। বাংলার মানুষ বানভাসি হতে চায় না। চায় না পানিতে ডুবে মরতে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে যথাযথ যুগোপযোগী পন্থা অবলম্বন করতে হবে। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সুদূরপ্রসারী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। জাতির কাছে আজ এটাই সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস। সবচেয়ে বড় সমস্যা। এটি মরা বাঁচার সমস্যা। জীবন ধারণের সমস্যা। বসতবাড়ি আবাসস্থলের স্থায়িত্বের সমস্যা। কৃষিপণ্য উৎপাদনের সমস্যা। গৃহপালিত জীবজন্তুর অস্তিত্ব টিকে থাকার সমস্যা। আমাদের সমাজ, সভ্যতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন না হয়ে টিকে থাকার সমস্যা। এ জাতির অস্তিত্বের সমস্যা।

হোয়াংহো নদীকে এক সময় চীনের দুঃখ বলা হতো। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় শিশু শিক্ষা বইতে চীনের দুঃখের অপর নাম হোয়াংহো নদী পড়েছিলাম। প্রতি বছর হোয়াংহো নদীতে প্রবল বন্যার কারণে দুপাশ ছাপিয়ে পুরো লোকালয় বিস্তৃত হয়ে গোটা হোয়াংহো অববাহিকাসহ চীনের বিশাল এলাকা বন্যা মগ্ন হয়ে মানুষের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন হতো, দুঃখ-কষ্টের কারণ হতো। তাই হোয়াংহো নদীকে শত শত বছর হতে চীনের দুঃখ বলা হতো। চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে আধুনিক চীন হোয়াংহো নদীর এই নিয়তি মেনে নেয়নি। দৃঢ় সংকল্পিত হোয়াংহো অববাহিকার সব মানুষ সংগঠিত হয়ে উদয়াস্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে হোয়াংহো নদী খনন ও সংস্কার করে। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে। পানির ধারণক্ষমতা বাড়ায়। নদীতীর শক্ত বাঁধ দিয়ে সুরক্ষা করে। বন্যা নিয়ন্ত্রিত হয়। হোয়াংহো এখন আর চীনের দুঃখ নয়; হোয়াংহো এখন চীনের এক আশীর্বাদ। চীনের সম্পদ। হোয়াংহো চীনবাসীর নিরন্তর সুখ। ধন্য চীন।

বাংলাদেশের নদীগুলো ভরে যাচ্ছে। পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। নদীগুলো মরে যাচ্ছে। কোনো প্রবাহ নেই। রূপান্তরিত হচ্ছে মরা নদীর সোঁতায়, মরা গাঙ্গে। নদী সংস্কারের নদী খননের কোনো পরিকল্পনা কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। প্রকৃতির ইচ্ছার ওপর সব ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নদীর ফিডিং ক্যানেলগুলো ভরাট করে বিলীন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরে কয়েকশ খাল ছিল। লোভাতুর মানুষ সেগুলো জবরদখল করে ভরাট করেছে, জমি হাতিয়েছে, বসতভিটা বানিয়েছে। কেউ তাদের বাধা দেওয়ার নেই। অনেক সময় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, উৎসাহে এগুলো হয়েছে। অনেক সময় সরকার সাক্ষীগোপাল সেজে নিশ্চুপ থেকেছে। ঢাকা মহানগরীর এই শত শত খালগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। সচল করতে হবে। প্রবাহমান করতে হবে এবং বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। মরা বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হবে। তার হতশ্রীর অবসান ঘটিয়ে যৌবন ফিরিয়ে দিতে হবে। ঢাকা ছিল প্রাচ্যের ভেনিসের মতো। প্রাচীন ভেনিস তার ঐতিহ্য ও গৌরব নিয়ে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহর। আমরা প্রাচ্যের ভেনিস ঢাকার পুনর্নির্মাণ চাই। প্রত্যাবর্তন চাই। এখন এটা সময়ের দাবি, ইতিহাসের দাবি।

নদীমাতৃক বাংলাদেশ। মাছ ধরা জালের মতো ছোট-বড় নদ-নদী, শাখা-প্রশাখা, নালি-প্রণালি, খাল ডোবায় বিস্তৃত এ দেশ। কিন্তু এখন সব ভরাট হয়ে, বিলীন হয়ে, স্রোত হারিয়ে একাকার হয়ে গেছে। লোভাতুর, দখলবাজ মানুষ সব নদীকে হত্যা করেছে। দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীতীরে জন্ম আমার, আমি নদী সন্তান, পুনর্ভবার সন্তান। কিন্তু পুনর্ভবা হারিয়ে গেছে। মরে গেছে। বেদখল হয়ে গেছে। আমার শৈশব, কৈশোর রবিঠাকুরের সেই বাঁকে বাঁকে চলা বৈশাখ মাসের হাঁটুজল থাকা পুনর্ভবাকে ঘিরে। নদীতীর তার সাদা বালুরাশি, কাশবন, দূরে সবুজ বনানী, গ্রামের পর গ্রাম, স্ফটিক স্বচ্ছ জল, গ্রাম্য বালাদের জলকেলি, কিশোর-কিশোরীদের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া, গরুগাড়ির নদী পার হওয়া, খেয়াপারের নৌকায় আসা-যাওয়া—সব আমার বাল্যস্মৃতি। সুখস্মৃতি। কিন্তু আজ সুধুই স্মৃতি-কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া।

পুনর্ভবা আজ জলশূন্য। এক বালুপথ মাত্র। সব নদ-নদী হত্যা হয়ে চলেছে। পদ্মাসহ নিহত সব নদ-নদী হত্যার বিচার চেয়েছিলেন মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। নদী আমাদের জলাধার। জলের অপর নাম জীবন। তাই নদী জীবনাধার। জলহীন শুষ্ক নদী আমাদের জীবন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার ধারণ ক্ষমতাকে আমরা টুঁটি চেপে হত্যা করেছি। তাকে সমতল ভূমিতে পরিণত করার মহাকর্মযজ্ঞে আমরা সবাই মরিয়া হয়ে উঠে লেগেছি। নদীমাতৃক বাংলার অস্তিত্ব একমাত্র নদী-নদীর সমৃদ্ধিতে তার নাব্যতায়, তার গভীরতায়, তার প্রবাহে, তার জল ধারণের ক্ষমতায়। নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।  তার কৃষি বাঁচবে। পরিবেশ বাঁচবে। জীবজন্তু প্রাণীকুল বাঁচবে। মানুষ বাঁচবে।

আমরা বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এখন দেশ পুনর্নির্মাণ করছি। আধুনিক বাংলাদেশ গড়ছি। অসম্ভবকে সম্ভব করে চলেছি।  বাংলার মানুষ আমরা সবাই নদী সন্তান। আসুন নদীকে বাঁচাই। মাকে বাঁচাই। তার মধ্য দিয়ে দেশকে বাঁচাই, নিজে বাঁচি।

লেখক : সাবেক সেনাপ্রধান।

সর্বশেষ খবর