শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জ্ঞানের দরজা হজরত আলী (রা.)

জ্ঞানের দরজা হজরত আলী (রা.)

আলী ইবন আবি তালিব ইসলামের চতুর্থ ও শেষ খলিফা। তিনি ছিলেন রসুল (সা.)-এর চাচা আবু তালিবের পুত্র। তার মাতার নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ। হজরত আলী কোরায়েশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। শিশু বয়স থেকেই তিনি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে লালিত-পালিত হন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম  হজরত মুহাম্মদের (সা.) সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। নবুয়তের ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে হজরত আলী (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন অকুতোভয় যোদ্ধা। বদরের যুদ্ধে বিশেষ বীরত্বের জন্য মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে জুলফিকার নামক তরবারি উপহার দিয়েছিলেন। খাইবারের সুরক্ষিত কামুস দুর্গ জয় করলে মহানবী তাঁকে আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ উপাধি দেন।

মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচাতো ভাই এবং জামাতা ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) ছিলেন অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী। হজরত আলী (রা.) কতটা জ্ঞানী-গুণী ছিলেন হাদিস শরিফের একটি উক্তি দেখলেই সহজে বোঝা যায়। রসুলে কারিম (সা.) পবিত্র হাদিস শরিফে ঘোষণা করেছেন—‘আমি জ্ঞানের শহর হলে হজরত আলী সেই জ্ঞানের দরজা।’

হজরত আলী (রা.)-এর কিছু মহা মূল্যবান বাণী

১। লোকের যে সমস্ত দোষ-ত্রুটির ওপর আল্লাহ পর্দা দিয়ে রেখেছেন তা তুমি প্রকাশ করার চষ্টা কর না।

২। অজ্ঞদের মৃত্যুবরণ করার আগেই মৃত অবস্থায় কাল যাপন করতে হয় এবং সমাধিস্থ হওয়ার আগেই তাদের শরীর কবরের আঁধারে সমাহিত; কেননা তাদের অন্তর মৃত, আর মৃতের স্থান কবর।

৩। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারিতের অন্তরে যে বিদ্বেষাগ্নির জন্ম হয়, তা অত্যাচারীকে ভস্ম করেই ক্ষান্ত হয় না, সে আগুনের শিখায় অনেক কিছুই দগ্ধিভূত হয়।

৪। আপনার দ্বারা নেক কাজ সাধিত হলে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করুন এবং যখন অসফল হবেন তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

৫। সৎ কাজ অল্প বলে চিন্তা কর না, বরং অল্পটুকুই কবুল হওয়ার চিন্তা কর।

৬। পাপের কাজ করে লজ্জিত হলে পাপ কমে যায়, আর পুণ্য কাজ করে গর্ববোধ করলে পুণ্য বরবাদ হয়ে যায়।

৭। দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে নিজেকে সংশোধন করা আর সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে অন্যের সমালোচনা করা।

৮। তুমি পানির মতো হতে চেষ্টা কর, যে কিনা নিজের চলার পথ নিজেই তৈরি করে নেয়। পাথরের মতো হইও না, যে নিজে অন্যের পথরোধ করে।

৯। গোপন কথা যতক্ষণ তোমার কাছে আছে সে তোমার বন্দী। কিন্তু কারও কাছে তা প্রকাশ করা মাত্রই তুমি তার বন্দী হয়ে গেলে।

১০। ছোট পাপকে ছোট বলিয়া অবহেলা করো না, ছোটদের সমষ্টিই বড় হয়।

১১। নীচ লোকের প্রধান হাতিয়ার অশ্লীল বাক্য।

১২। পুণ্য অর্জন অপেক্ষা পাপ বর্জন শ্রেষ্ঠতর।

১৩। মানুষের কিসের এত অহঙ্কার, যার শুরু একফোঁটা রক্তবিন্দু দিয়ে আর শেষ হয় মৃত্তিকায়।

১৪। সবচেয়ে সাহসী ও বীর্যবান ব্যক্তি হলো সেই, যে স্বীয় কামনা-বাসনার খেয়াল-খুশির ওপর বিজয় লাভ করতে সক্ষম।

১৫। হজরত আলী (রা.) কোথাও যাচ্ছিলেন। পথে এক ব্যক্তি অনাহূতভাবে তাকে গালাগাল দিতে শুরু করল। হজরত আলী লোকটির কাছে গিয়ে বললেন, ভাই! তুমি আমার সম্পর্কে যা কিছু বললে তা যদি সত্য হয় তবে আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন আর যদি তোমার এই সমস্ত কথা সত্য না হয় তবে আল্লাহ পাক যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেন।

১৬। প্রকৃত দ্বীনদারি পার্থিব স্বার্থ ত্যাগের মাধ্যমেই সম্ভব।

১৭। কারও সঙ্গে বাক্যালাপ না হওয়া পর্যন্ত তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না।

১৮। কেউ স্বীকৃতি না দিলেও তুমি তোমার সদাচরণ অব্যাহত রাখবে।

১৯। বন্ধুত্ব করার মতো কোনো যোগ্য লোক পাওয়া না গেলেও অযোগ্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে যেও না।

২০। অল্প বিদ্যায় আমল বিনষ্ট হয়। শুদ্ধ জ্ঞানই আমলের পূর্ব শর্ত।

২১। সততার মাধ্যমে একজন নিরীহ প্রকৃতির লোকও যে মর্যাদার অধিকারী হয়, বুদ্ধিমানরা রকমারি কলাকৌশল প্রয়োগ করেও তার কাছে পৌঁছতে পারে না।

২২। ধন-সম্পদের অহঙ্কার থেকে আল্লাহর পানাহ চাও। এটা এমন এক রোগ, যা মানুষকে ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়।

২৩। সেই ব্যক্তির পক্ষেই সর্বাধিক সৎকর্ম করা সম্ভব, যে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।

২৪। সর্বাপেক্ষা করুণার পাত্র হচ্ছে ওই ব্যক্তি—

ক) যে আলেম ব্যক্তির ওপর জাহেলরা কর্তৃত্ব করে।

খ) যে ভদ্র ব্যক্তি কোনো ইতর লোকের অধীন হয়ে পড়ে।

গ) ওই সৎ ব্যক্তি যার মাথার ওপর পাপিষ্ঠ চেপে বসে।

২৫। সর্বোত্তম বক্তব্য সেটিই, স্বয়ং বক্তা যা কার্যে পরিণত করে।

২৬। সর্বাপেক্ষা আহাম্মক ওই ব্যক্তি, যে অন্যের বদভ্যাসের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে, এবং লোক চক্ষুর আড়ালে নিজেই সেই সব বদভ্যাসে জড়িত থাকে।

২৭। দুনিয়া ও আখিরাত দুই সতীনের ন্যায়। স্বামী যেমন একজনকে খুশি করতে চাইলে অন্যজন ক্ষিপ্ত হয়। তেমনি কেউ দুনিয়ার জীবনকে সুখময় করতে চাইলে আখিরাতের ক্ষতি এবং আখিরাতকে নির্বিঘ্ন করতে চাইলে দুনিয়ার জীবনের ক্ষতি স্বীকার করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

২৮। বুদ্ধিমানরা বিনয়ের দ্বারা সম্মান অর্জন করে, আর বোকারা ঔদ্ধত্যের দ্বারা অপদস্ত হয়।

২৯। অনুশোচনা খারাপ কাজকে বিলুপ্ত করে আর অহঙ্কার ভালো কাজকে ধ্বংস করে।

৩০। অনর্থক কামনা নিজেই একটি ধ্বংসাত্মক সঙ্গী, আর বদভ্যাস সৃষ্টি করে ভয়াবহ শত্রু।

৩১। বিপদে অস্থিরতা নিজেই একটি বড় বিপদ।

৩২। দ্রুত ক্ষমা করে দেওয়া সম্মান বয়ে আনে, আর দ্রুত প্রতিশোধ পরায়ণতা অসম্মান বয়ে আনে।

৩৩। দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা যত বেশি হবে, আল্লাহর প্রতি ততটাই কম হবে।

৩৪। মন্দ লোক অন্যদের সম্পর্কে ভালো ধারণা করতে পারে না, সর্বোচ্চ সে তাদেরও নিজের মতো মনে করে।

৩৫। যৌবনের অপচয়কৃত সময়ের ক্ষতি অবশ্যই পূরণ করতে হবে, যদি তুমি সন্তোষজনক সমাপ্তি অনুসন্ধান কর।

৩৬। নিজের মহানুভবতার কথা গোপন রাখ, আর তোমার প্রতি অন্যের মহানুভবতার কথা প্রচার কর।

৩৭। আত্মতুষ্টি নিশ্চিতভাবে নির্বুদ্ধিতার লক্ষণ।

৩৮। অভ্যাসকে জয় করাই পরম বিজয়।

৩৯। অসৎ লোকের ধন-দৌলত পৃথিবীতে সৃষ্ট জীবের বিপদ-আপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।        

গ্র্রন্থনা : শাকিলা জাহান।

সর্বশেষ খবর