শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

বিদায় হজের ভাষণ এবং মুসলিম উম্মাহর করণীয়

মুফতি এহসানুল হক জিলানী
পেশ ইমাম বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

দশম হিজরির জিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফা ময়দানের জাবালে রহমতের পাদদেশে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাৎপর্যপূর্ণ, জ্ঞানগর্ভ ও দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন তাকে ইসলামের ইতিহাসে ‘বিদায় হজের ভাষণ’ নামে অভিহিত করা হয়। নবম হিজরিতে আমাদের শরিয়তে হজ ফরজ করা হয়। এরপর মহানবী (সা.) একবারই পবিত্র হজব্রত পালনের সুযোগ পান। কারণ ১১ হিজরির ১২ রবিউল আওয়াল তিনি ওফাত লাভ করেন। ওই ভাষণে তিনি মুসলিম উম্মাহর মৌলিক কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে আলোকপাত করেন। হামদ ও সানার পর রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা আমার কথা শোনো। জানি না, হয়তো আমি এ বছরের পর এখানে আর তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব না। হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এদিন ও এই মাসের মতো তোমাদের ওপর নিষিদ্ধ ও পবিত্র তোমাদের প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত। অচিরেই তোমরা তোমাদের মহান প্রভুর সাক্ষাতে উপনীত হবে। তখন তিনি তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন কারও কাছে যদি কোনো আমানত গচ্ছিত থাকে, তা তার প্রাপকের কাছে অবশ্যই পৌঁছে দেবে।

হে মানবমণ্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীগণের ওপর তোমাদের অধিকার রয়েছে এবং তোমাদের ওপরও তাদের অধিকার আছে। হে মানবমণ্ডলী! তোমরা আমার কথা অনুধাবন কর আমি তা পৌঁছে দিলাম। আমি তোমাদের কাছে এমন সুস্পষ্ট বিধান রেখে গেলাম যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তার নবীর সুন্নাহ।

হে মানবমণ্ডলী! প্রত্যেক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই এবং মুসলিমরা ভ্রাতৃপ্রতিম। সুতরাং কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের কোনো কিছু বৈধ নয় যতক্ষণ না সে সন্তুষ্টচিত্তে তা প্রদান করে। অতএব, তোমাদের নিজেদের ওপর জুলুম করো না। হে আল্লাহ— আপনি সাক্ষী থাকুন আমি পৌঁছিয়েছি।’ ১০ জিলহজ মিনায় প্রদত্ত ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন : ‘হে মানবমণ্ডলী! নিশ্চয় তোমাদের প্রভু এক। তোমাদের পিতা আদম এক। সাবধান! অনারবের ওপর আরবের কিংবা আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কিংবা শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। যার মধ্যে আল্লাহর ভয় আছে সে-ই শ্রেষ্ঠ।’ একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘তোমাদের দাসেরা তোমাদেরই দাস। অতএব তোমরা যা খাও তাদের তাই খেতে দাও, তোমরা যেরূপ কাপড়ই পরিধান কর তাদের সেরূপ কাপড়ই পরিধান করতে দাও।’ নারীদের অধিকার সম্পর্কে ইসলামই সর্বপ্রথম সোচ্চার হয়েছে। ওই ভাষণেও মহানবী (সা.) বলেন, ‘নারীদের সম্পর্কে তোমরা আল্লাহর ভয় মনে রেখো। নিশ্চয় তোমাদের যেমন নারীদের ওপর হক আছে তদ্রূপ তাদেরও হক আছে তোমাদের ওপর।’

ভাষণের শিক্ষা— আমাদের করণীয় : বিদায় হজের দিনই সূরা মায়িদার ৩ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়। যেখানে আমাদের জন্য মহান আল্লাহর দীন, শরিয়ত ও সব নিয়ামতের পরিপূর্ণতার ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য আমার নিয়ামতসমূহ পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন বা জীবনব্যবস্থারূপে মনোনীত করে দিলাম।’ সব মানুষের জন্য অন্য মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান পবিত্র। কেউ কারও জীবন, সম্পদ ও সম্মানের ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। যুদ্ধক্ষেত্র এবং বিচারিক রায় ছাড়া কোনো মানুষকে আঘাত করা বা হত্যা করা হারাম। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষ সব মানুষ এক আদমের সন্তান হিসেবে এক জাতি এবং সমান মর্যাদা ও নিরাপত্তার অধিকারী। সুতরাং কেউ কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পারবে না। শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তারই যে প্রভুকে ভয় করে। নারীদের অধিকারের প্রতি খেয়াল রাখা এবং দাস-দাসী, অধীন ব্যক্তি, শ্রমিক প্রতিবেশী, অন্য ভাইসহ সবার প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করার শিক্ষা রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ভাষণে। বর্তমান অস্থির বিশ্ব এবং নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত পরিবার ও সমাজ যদি বিশ্বনবী (সা.)-এর এসব শিক্ষা গ্রহণ করে তাহলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি লাভ করতে সক্ষম হবে।

সর্বশেষ খবর