বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আমরা যেন অন্যের সমালোচনা না করি

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

আমরা যেন অন্যের সমালোচনা না করি

অন্যের সমালোচনা করা আমাদের সমাজে-সংসারে, ঘরে-বাইরে একটা মহামারী আকার ধারণ করেছে। অন্য কোনো কাজ ভালোভাবে করতে পারি বা না পারি, অপরের সমালোচনায় আমরা বেশ পটু। মানুষের ভুল ধরতে খুব ভালো লাগে। অথচ ইসলাম সব সময় এ অন্যায় থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা হুজুরাতের ১২নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বিরত থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান কর না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত, তোমরা একে ঘৃণাই কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” উল্লিখিত আয়াতে তিনটি বিষয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১. কারও প্রতি খারাপ ধারণা রাখা যাবে না। ২. অন্যের দোষ তালাশ করা যাবে না। ৩. কারও দোষ থাকলেও তা প্রকাশ করা যাবে না। হাদিসের কিতাবগুলোতেও এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিশেষভাবে মানুষের দোষ বলে বেড়ানো, সমালোচনা করা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, সমালোচনা করা ব্যভিচার থেকেও মারাত্মক অপরাধ-মেশকাত শরিফ। অপর হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলমানকে গালমন্দ করা ফাসেকি কার্য। আর হত্যা করা কুফরি কাজ (বুখারি, মুসলিম)। অনেক সময় আমরা পরস্পর ঝগড়াঝাটি করি এবং একে অপরকে গালমন্দ করি, এটাও  অপরাধ। হজরত আনাস (রা.) এবং হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, এমন দুই ব্যক্তি যারা পরস্পর গালমন্দ করে, তখন ওই গালমন্দের পাপ সে ব্যক্তির ওপরই বর্তাবে, যে প্রথমে গালমন্দ করেছে; যে পর্যন্ত না গালমন্দকৃত ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন করে (মুসলিম)। একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করতে করতে এমন কথাও মুখ থেকে বের হয়ে যায় যার দ্বারা মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে যান। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষ কোনো কোনো সময় এরূপ কথা বলে যাতে আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্ট হন। অথচ সে তার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত নয়; কিন্তু আল্লাহতায়ালা ওই কথার কারণে তার মর‌্যাদা বাড়িয়ে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ কখনো কখনো এরূপ কথাও বলে যাতে আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন। অথচ সে ওই কথার ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত নয়, কিন্তু ওই কথাই তাকে দোজখে নিয়ে যায় (বুখারি)। আর কেউ যদি সমালোচনা থেকে বেঁচে থাকে তার জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। হজরত সহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দু-চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তুর এবং দুপায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর জিম্মাদার হবে আমি তার জন্য বেহেশতে যাওয়ার জিম্মাদার হব (বুখারি)।  অর্থাৎ জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করতে পারলে প্রিয় নবী (সা.) নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দেন।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর