বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইতিহাস

ইলিয়াস শাহি বংশের অবদান

ইলিয়াস শাহি বংশ দুই পর‌্যায়ে (১৩৪২-১৪১৪ ও ১৪৪২-১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দ) মোট ১১৭ বছর রাজত্ব করে। এ বংশের রাজত্বকাল বাংলার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছে। ইলিয়াস শাহি সুলতানরা উদার, সুদক্ষ ও বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। প্রজার অধিকাংশ ছিল হিন্দু; কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ ছিল না। এ সময়ে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সমন্বয়ের সূচনা হয়। বঙ্গদেশে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ভাষা নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। রাজনৈতিক প্রয়োজনে বাংলার মুসলিম সুলতানরা হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। বাংলার গ্রামাঞ্চলে মোল্লা ও পীরেরা প্রবেশ করে ধর্ম প্রচার করেন, মসজিদ নির্মাণ করেন এবং আরবি ও ফারসি ভাষা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে মক্তব ও মাদ্রাসা স্থাপন করেন। ফলে এ দেশে মুসলিম সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করে।

১৪৮৭ সালে বরবক শাহ ‘সুলতান শাহজাদা’ নাম ধারণ করে মসনদে আসীন হন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ইদিল খান কর্তৃক নিহত হন। ইদিল খান বাংলার শাসন কর্তৃত্ব গ্রহণ করে ‘সাইফুদ্দিন ফিরোজ’ খেতাব ধারণ করেছিলেন। ১৪৮৯ সালে তার মৃত্যু হয় এবং দ্বিতীয় নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ তার স্থলাভিষিক্ত হন। এ সময়ে সারা দেশে ষড়যন্ত্র, হত্যালীলা, গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ ১৪৯০ সালে সিদি বদর কর্তৃক বিতাড়িত হন এবং সিদি বদর ‘শামসুদ্দিন আবু নাসির মুজাফ্ফর শাহ’ খেতাব গ্রহণ করেন। তিনি ১৪৯০ থেকে ১৪৯৩ পর্যন্ত বঙ্গদেশ শাসন করেন। মুজাফ্ফর শাহের অত্যাচার ও স্বেচ্ছাচারিতা দেশময় অসন্তোষের আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং এর ফলে বিদ্রোহের উদ্ভব হয়। সুলতানের জনৈক সৈয়দ বংশোদ্ভূত মন্ত্রী আলাউদ্দিন হুসেন এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। সুলতান চার মাসের জন্য গৌড়ে অবরুদ্ধ থাকেন এবং এই সময়ের মধ্যে মুজাফ্ফর শাহের মৃত্যু হয়। ওমরারা তখন আলাউদ্দিন হুসেনকে বাংলার মসনদে অধিষ্ঠিত করেন। বাংলার  ইতিহাসে আলাউদ্দিন হুসেনের আমল সুশাসন ও সমৃদ্ধির আমল হিসেবে বিবেচিত।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর