বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিদেশি অপরাধীদের দৌরাত্ম্য

দেশে ফেরত পাঠানোর নীতিমালা প্রয়োজন

বিদেশি অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আইনি দুর্বলতার কারণে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকায় গত পাঁচ বছরে ২৬৩ বিদেশি অপরাধীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হলেও তারা জামিনে বেরিয়ে আবার একই অপরাধে জড়াচ্ছে। বিশ্বে কোথাও বিদেশি কোনো নাগরিক একবার অপরাধের দায়ে শাস্তি ভোগ করলে নিজ দেশে ফেরত যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বাংলাদেশে আদালত থেকে মুক্তির পর বিদেশি অপরাধীকে কীভাবে দেশে ফেরত পাঠানো হবে তার নীতিমালা না থাকায় আইনশৃঙ্খলার জন্য বিড়ম্বনা ডেকে আনছে। অপরাধে জড়িত বিদেশিদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর খরচ কোন উৎস থেকে আসবে সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা না থাকায় আদালত কোনো বিদেশি অপরাধীকে মুক্তি দিলে সে আবার অপরাধে জড়াচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশির সংখ্যা কয়েক লাখ। আনুমানিক হিসাবে এদের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার এদেশে অবস্থান করছে অবৈধভাবে। বিদেশিদের মধ্যে বিশেষভাবে ১২টি দেশের দুই হাজারেরও বেশি নাগরিক অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এসব বিদেশি দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকায় থাকলেও তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর যথাযথ নজরদারি নেই। বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিকের অবৈধভাবে অবস্থান এবং তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধের ব্যর্থতা যে কোনো বিবেচনায় উদ্বেগজনক। নানা কৌশলে প্রতারণা, এটিএম কার্ড জালিয়াতি, মাদক ও সোনা চোরাচালান, জাল টাকা তৈরি ও বিপণন, অবৈধ অস্ত্র ও ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে বিদেশিদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন আফ্রিকান দেশের নাগরিকরা পর্যটন ভিসায় এসে নিজেদের পাসপোর্ট ছিঁড়ে মাসের পর মাস বাংলাদেশে অবস্থান করছে। পাসপোর্ট না থাকায় সংশ্লিষ্ট বিদেশিদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা উপলক্ষ করেই তারা এদেশে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের মতে, দেশের আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের ব্যাপারে সরকারকে কঠোর হতে হবে। অপরাধে জড়িত বিদেশিদের শাস্তি ভোগের পর স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নেরও উদ্যোগ নিতে হবে। এ সংক্রান্ত নীতিমালার অভাবে বাংলাদেশ বিদেশি অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

সর্বশেষ খবর