শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলামে পোশাকের বিধান

মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
সিনিয়র পেশ ইমাম : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে লেবাসের কথা উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা লেবাসের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। লেবাস বা পোশাক মানুষের জন্য পানাহারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পানাহারের ক্ষেত্রে অনেক সময় আপনি বেশ কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরতে পারবেন, না খেয়ে বেশ কয়েক দিন থাকতে পারবেন কিন্তু আপনি কখনো লেবাসবিহীন বা পোশাকবিহীন অবস্থায় চলাফেরা করতে পারবেন না। কত জরুরি পোশাকের বিষয়টি! এর গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয় হজরত আদম (আ.)-এর একটি ঘটনা থেকে।

হজরত আদম (আ.)-কে আল্লাহতায়ালা যখন জান্নাত থেকে জমিনে নামিয়ে দেন তখন প্রথমে তাদের লেবাস ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তখন তিনি চিন্তা করেননি যে কী খাব, কী পরব বরং এটা ভেবেছিলেন যে গায়ে কী দেব, শরীর কী দিয়ে ঢাকব, লজ্জাস্থান কী দিয়ে আবৃত করব। হঠাৎ করে সেই পেরেশান দূর করেছেন গাছের পাতা ছিঁড়ে তা দিয়ে লজ্জাস্থান আবৃত করে।

আল্লাহতায়ালা লেবাস সম্পর্কে সূরা আরাফের ২৬-২৭ আয়াতে আদম-সন্তানদের লেবাস সম্পর্কে অবগত করেছেন। লেবাস-পোশাক শুধু মুসলিমদের জন্যই যে প্রয়োজন তা নয়, বরং প্রত্যেক মানুষেরই প্রয়োজন। মানুষের প্রকৃতিতে আছে লজ্জাস্থান ঢাকা। আর এর বিপরীতে যদি কোনো জাতি উলঙ্গ থাকে তাহলে তার প্রকৃতি বিকৃত হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে মানুষের প্রকৃতি আর নেই; যার ফলে শোনা যায় পশ্চিমা দেশের বিভিন্ন এলাকায় একেবারে উলঙ্গ মানুষ আছে। আল্লাহ এ ধরনের মানুষকে চতুষ্পদ জন্তুর সঙ্গে তুলনা করেছেন। বরং এসব মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর চেযেও নিকৃষ্ট। কারণ চতুষ্পদ জন্তু জানে না যে লজ্জাস্থান আবৃত করতে হয়। কিন্তু মানুষ জানে, মানুষকে আল্লাহ বিবেক-বুদ্ধি, হিতাহিত জ্ঞান দিয়েছেন, আবার মানুষের ওপর আসমানি বিধিবিধান নাজিল করেছেন নবী-রসুলদের মাধ্যমে। প্রত্যেক নবী-রসুলই লেবাস-পোশাকের বিধিবিধান নিয়ে এসেছেন।

এর পরও যদি মানুষ উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করে তাহলে আল্লাহ ঠিকই বলেছেন, ‘এসব মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। এবং এরাই হচ্ছে গাফিল, অনবহিত, এদের কোনো বোধশক্তি নেই।’

আল্লাহ আদম-সন্তানদের সম্বোধন করে বলেছেন, ‘আমি তোমাদের ওপর লেবাস নাজিল করেছি। এর দ্বারা তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থানকে আবৃত করবে।’  আল্লাহ মানুষকে লজ্জাশরম দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; যা হচ্ছে মানুষের প্রকৃতি। মানুষের জন্য সবচেয়ে উত্তম লেবাস হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহভীরুতার লেবাস। সংযত বা পাপমুক্তের লেবাস, যা মানুষকে সব পাপ থেকে বিরত রাখে।

লেবাস সম্পর্কে বেশকিছু শর্ত কোরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে যা নিচে আলোচনা করা হলো :

মহিলাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, তারা হচ্ছে আওরাতুন। অর্থাৎ নারী জাতি হচ্ছে ঢেকে রাখার বস্তু। তারা নামাজের সময় শুধু চেহারা খুলবে, অন্য পুরুষের সামনে চেহারাও খুলবে না। এমনকি তাদের অলঙ্কারও যেন প্রকাশ না পায়।

পুরুষের ক্ষেত্রে নবী (সা.) বলেন, পুরুষের রান হচ্ছে ঢেকে রাখার বস্তু। পুরুষের লজ্জাস্থান হচ্ছে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। মহিলাদের পোশাকের দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে তাদের পোশাক এমন হতে হবে যা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে।

পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে কাপড় হতে হবে মোটা যাতে তাদের শরীরের গঠন প্রকৃতি দেখা না যায়। কাপড় যেন পাতলা না হয়। পোশাক অবশ্যই ঢিলা হতে হবে, যাতে তা টাইট বা সংকীর্ণ না হয় এবং শরীরের অবয়ব বোঝা না যায়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণির লোক জাহান্নামি হবে যাদের আমি কখনো দেখিনি। তার মধ্যে একশ্রেণি হচ্ছে সেসব মহিলা যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ থাকবে। এরা পরবর্তীতে দুনিয়ায় আসবে। তাদের এ অবস্থার কারণ হলো তারা এমন পাতলা পোশাক পরবে যেন সে পোশাকই পরেনি।’ উল্লেখ্য, বর্তমান কালেই সেসব নারীর আগমন লক্ষ্য করা যায়।

মহিলারা যে কাপড় পরবে তাতে সুগন্ধি করা হারাম।

নারীর পোশাক পুরুষের সাদৃশ্য হওয়া যাবে না এবং পুরুষের পোশাকও যেন নারীর সাদৃশ্য না হয়। যাতে তাদের পোশাক দেখে নারী-পুরুষের পার্থক্য অনুমান করা যায়। রসুল (সা.) বলেন, মহিলাদের মধ্য থেকে যারা পুরুষের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং পুরুষের মধ্য থেকে যারা মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে তাদের ওপর তিনি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিশাপ দিয়েছেন।

পুরুষ ও নারীর পোশাক যেন কাফিরদের সাদৃশ্য না হয়। অর্থাৎ তাদের পোশাকে যেন কাফিরদের ধর্মীয় চিন্তা না থাকে।

এমন পোশাক পরা যাবে না যাতে খ্যাতি অর্জন করা উদ্দেশ্য হয়, সবার কাছে প্রসিদ্ধ হওয়া উদ্দেশ্য হয়। এ সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি খ্যাতি অর্জনের জন্য পোশাক পরিধান করে তাহলে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন।’

পুরুষের লেবাস টাখনু গিরার নিচে যাওয়া হারাম। আর মহিলাদের লেবাস টাখনু গিরা ঢেকে থাকবে। পুরুষের লেবাস টাখনু গিরার  নিচে গেলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না।

পুরুষের ক্ষেত্রে রেশমের কাপড় পরা জায়েজ নয়। নবী (সা.) বলেন, ‘পুরুষের জন্য রেশমের কাপড় ও সোনা হারাম কিন্তু মহিলাদের জন্য তা হালাল। যেসব পুরুষ রেশমের কাপড় পরবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’

পুরুষের জন্য সব রঙের পোশাক পরার অনুমতি নেই। কিন্তু নারীর জন্য সব রঙের পোশাক পরা জায়েজ। পুরুষের জন্য কুসুম-লাল, হলুদ, জাফরান, গোলাপি রং নিষিদ্ধ। তাদের জন্য সাদা রঙের পোশাকই সর্বোত্তম।

লেবাস-পোশাকের ক্ষেত্রে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বিষয় হলো, লেবাস-পোশাকের যে উদ্দেশ্য লেবাস-পোশাক দ্বারা সে উদ্দেশ্য পূরণ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর